আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত পটুয়াখালী-১ (সদর, দুমকি ও মির্জাগঞ্জ উপজেলা) আসন। এখানে বিগত বছরের নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে কাছাকাছি ভোটের ব্যবধানে এমপি নির্বাচিত হলেও ২০১৪ সালে পাল্টে যায় সেই প্রেক্ষাপট। অনেকটা আওয়ামী লীগকে মাঠ থেকে তুলে দিয়ে সমঝোতার মাধ্যমে এমপি হন জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। এবারো তিনি এ আসন থেকে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে চাচ্ছেন। ইতোমধ্যে তিনি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। পাশাপাশি জাতীয় পার্টি থেকেও তাকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
তবে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা এ নির্বাচনে রুহুল আমিনকে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায় না। তাইতো রুহুল আমিনকে অবাঞ্ছিত করে প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় মিছিল স্লোগান ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় তুলছে।
২০১৪ সালের নির্বাচনে রুহুল আমিন হাওলাদারের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পটুয়াখালী পৌর মেয়র ডা. মো. শফিকুল ইসলাম নির্বাচন করেছিলেন। তবে ডাক্তার শফিকুলকে পরাজিত করতে আর রুহুলকে বিজয়ী হতে নানামুখী নির্বাচনী কূটকৌশল কাজে লাগানো হয়েছিল। আর এবারো আওয়ামী লীগের কাঁধে ভর করে এমপি হতে চান রুহুল আমিন হাওলাদার।
এ জন্য তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনী দেন-দরবারেই নিজের অবস্থান নিশ্চিত করতে চান। তবে এবার পটুয়াখালী-১ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. শাহজাহান মিয়াকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
কালিকাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা তানভীর আহমেদ জানান, গত ৫ বছরে দলের এমপি না থাকায় স্থানীয় উন্নয়ন যেন বাধাগ্রস্ত হয়েছে, তেমনি দলীয় নেতাকর্মীরা ছিল অনেকটা অভিভাবকহীন। ফলে দলের নেতাকর্মীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমনি আওয়ামী লীগও দলীয় ভাবে অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া এ আসনে জাতীয় পার্টির নির্বাচন করার মতো ভোট নেই বললেই চলে।
পটুয়াখালী-১ আসনে মোট ৩,৯৩,১৪৫ জন ভোটার থাকলেও স্থানীয় হিসাব-নিকাশে জাতীয় পার্টির সব মিলিয়ে ৫ থেকে ৭ হাজার ভোট থাকতে পাবে বলে দাবি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার।
অপরদিকে বিএনপি থেকে ইতোমধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্সাল (অব) আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে রুহুল আমিন নির্বাচন করলে এ আসনে বিপুল ভোটে বিএনপি বিজয়ী হবে বলেও মনে করে সাধারণ ভোটাররা। আর আওয়ামী লীগ রুহুল আমিনকে সহযোগিতা না করলে তিনি নির্বাচনে জামানত হারাতে পারেন বলেও মনে করেন অনেকে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাড. শহজাহান মিয়া বলেন, ‘গত নির্বাচনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়েছিল, এবারো আমি দলীয় মনোনয়ন পেয়েছি। ২০১৪ সালে রুহুল আমিনের পক্ষে দলীয় নেতা কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মাঠে ময়দানে কাজ করে তাকে বিজয়ী করেছি। এই আসনে দলের এমপি থাকাটা জরুরি। আমি মনে করি, যেহেতু জোটগত ভাবে নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে আমি নির্বাচন করছি, সেহেতু বিপুল ভোটের ব্যবধানে অমি বিজয়ী হব।’
এদিকে গত পাঁচ বছরে রুহুল আমিন হাওলাদার এই আসনে এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও স্থানীয় মানুষের সঙ্গে তার তেমন কোনো যোগাযোগ ছিল না। অনেকটা অভিভাবকহীন ভাবে এই জেলা সদরের আসনটি পরিচালিত হয়েছে।
তবে জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারের দাবি, জোটগত ভাবে নির্বাচন করলে জোটের সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন তিনি। তারপরও তিনি পটুয়াখালী-১ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেবেন সেই লক্ষ্য নিয়েই জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা মাঠে ময়দানে তার পক্ষে কাজ করছে।