‘ঝামেলা না অইলে কাদের সিদ্দিকীরে কেউ হারাইতে পারব না’

বিবিধ, নির্বাচন

ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-08-29 07:21:34

টাঙ্গাইল থেকে: ‘ভোটে ঝামেলা না অইলে কাদের সিদ্দিকীরে কেউ হারাইতে পারব না। সবাই হেরে পছন্দ করে। গতবার ভোট দিতে পারি নাই, কিন্তু এবার ভোট দিমুই। হেয় না খারাইলে হের বেটিরে দিমু।’

এ ভাবেই কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর প্রতি সমর্থন জানাচ্ছিলেন ভ্যান চালক হাবিল মিয়া। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে একই কথা বলছিলেন চায়ের দোকানে উপস্থিত আরও অনেকে।

বাসাইল ও সখীপুর নিয়ে গঠিত টাঙ্গাইল-৮ আসনের এমন অসংখ্য ভোটারই তার প্রতি নিজেদের সমর্থনের কথা জাননিয়েছে। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সকল শ্রেণি পেশার মানুষের মুখে এখন নির্বাচনী আলোলোচনা। সেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন কাদের সিদ্দিকী।

তার প্রতি সমর্থন জানাচ্ছেন অনেক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীও। দলটির অন্তর্কোন্দলের কারণে অনেক নেতাই প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও গোপনে তার প্রতি সমর্থন জানাচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা জানান, কাদের সিদ্দিকী বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক। তার সঙ্গে আমাদের নৈতিকভাবে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। তবে যেহেতু দলের সঙ্গে তিনি নেই, ফলে চাইলেও আমরা তার প্রতি সমর্থন জানাতে পারি না। তবে এতটুকু বলতে পারি, তিনি একজন যোগ্য প্রার্থী। তাতে কারোরই কোনো সন্দেহ নেই।

শুধু এই নেতাই নন, খোদ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও তার প্রতি ক্ষুব্ধ কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন না। তারা বলছেন, কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচিত প্রার্থীকে জয়ী করাই তাদের প্রধান কাজ। এর বাইরে তারা কিছু ভাবতে চান না।

উপজেলা সদরের নাপিত মনো বিশ্বাসও বঙ্গবীরের সমর্থক। ভোটে কাদের সিদ্দিকীর জয় কেউ ঠেকাতে পারবে না এমন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘উনি ভালো মানুষ। ওনাকে সবাই পছন্দ করে। আমি তো হের থেকে কোনো সুবিধা পাই না, তারপরও হেরে ভোট দিমু। কারণ ভালো মানুষ পাওয়ারে থাকলে আমগো খারাপ অইব না।’

তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বলতে শুরু করলেন দোকানে চুল কাটাতে আসা ড্যান্সার রিপন কাজী। কাদের সিদ্দিকী এমপি হলে ভালো কিছু হোক আর না হোক খারাপ কিছু হবে বলে দাবি তার।

তিনি বলেন, আমি নাচ-গান করি, আমার সঙ্গে কারেও কোনো সমস্যাও নাই। কিন্তু ওই লোকটারে সমর্থন দেওয়াই লাগবে। কারণ ওনার মতো মাটির মানুষ খুব কমই আছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ভোটের আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। ভোটগ্রহণ শেষ হওয়া পর্যন্ত এ আলাপ চলবে। রাজনীতিতে বলা হয়, গণতন্ত্রের অন্যতম আনন্দের দিক হলো- ভোট ও ভোটের আলাপ।

তবে স্থানীয় অনেকে বলছেন, কাদের সিদ্দিকী বিভিন্ন কারণে আগে ভোটে অংশ নিতে পারেননি বিধায় অন্যদের এ আসন থেকে জয় পাওয়াটা সহজ হয়েছে, নইলে জয়টা এতো সহজ হতো না। আবার অনেকে বলছেন, কাদের সিদ্দিকী নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলেও তার মেয়ের প্রতিও তাদের সমর্থন থাকবে। আগে থেকে এ বিষয়ে নিজেরা প্রস্তুত আছেন বলেও জানালেন অনেকে।

এ বিষয়ে সখীপুর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার শামীম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আপনারা গোটা টাঙ্গাইল ঘুরে দেখেন, সবাই কাদের সিদ্দিকীকে মন থেকে ভালোবাসে। তার প্রতি সবার সমর্থন আছে। যে যাই বলুক, তার জয় সুনিশ্চিত। তার প্রতি জনগণের সমর্থন রয়েছে।’ কোনো কারণে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলেও তার মেয়েকে সবাই সমর্থন জানাব বলে দাবি করেন তিনি।

বাসাইল ও সখীপুর নিয়ে গঠিত টাঙ্গাইল-৮ আসনে ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৬৪৫ জন ভোটারের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬৮ হাজার ৪৫৪ জন। আর নারী ভোটার ১ লাখ ৭৮ হাজার ১৯১ জন।

প্রসঙ্গত এই আসনে এবার মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন জোয়াহেরুল ইসলাম (আওয়ামী লীগ), কাদের সিদ্দিকী (কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগ), কুড়ি সিদ্দিকী (কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ), হাবিবুর রহমান তালুকদার (কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ), শফি সরকার (ন্যাশনাল পিপলস পার্টি), কাজী আশরাফ সিদ্দিকী ও রেজাউল করিম (জাতীয় পার্টি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা আবদুল লতিফ মিয়া এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী লিয়াকত আলী ও শহিদুল ইসলাম।

এ সম্পর্কিত আরও খবর