বগুড়া-১: কঠিন পরীক্ষার সামনে আওয়ামী লীগ

বিবিধ, নির্বাচন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-07-08 15:59:09

আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল টানা দশ বছর ধরে ক্ষমতায়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপিকে হারিয়ে এবং ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন বগুড়া-১(সোনাতলা-সারিয়াকান্দি) আসনে প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল মান্নান। দশ বছর ক্ষমতায় থেকে দৃশ্যমান অনেক উন্নয়ন করেছেন তাঁর নির্বাচনী এলাকায়। নিজ দলের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ ছাড়াও বিএনপি-জামায়াতের অনেক কর্মী সমর্থকরাও তার উন্নয়নের কথা স্বীকার করেন। তারপরও আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে প্রভাবশালী সাংসদ আব্দুল মান্নানকে।

নির্বাচনী এলাকা ঘুরে বিভিন্ন শ্রেণীর পেশার ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে উঠে এসেছে এই চিত্র। দলের প্রবীণ নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করা, দলের মধ্যে পারিবারিক প্রভাব বিস্তার, বিরোধী রাজনৈতিক মতাদর্শের জনগণকে সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা এবং দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণেই এ অবস্থার জন্য দায়ী করেছেন সাধারণ ভোটাররা।

সারিয়াকান্দি উপজেলার হাটফুলবাড়ি বাজারে একটি চা’র দোকানে বসে নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় মশগুল ছিলেন আশেপাশের গ্রামের বেশ কয়েকজন সচেতন ভোটার। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন ১০ বছর পর এবার তারা সংসদ নির্বাচনে ভোট দিবেন। ১০ বছর আগে ২০০৮ সালে ভোট দিয়েছিলেন অনেকটা আবেগে। আর এবার নাকি ভোট দিবেন নিজের বিবেক ও বুদ্ধি বিবেচনা করে।

গত ১০ বছরে এলাকার মানুষ কি পেয়েছেন আর কি পাননি তার হিসেব নিকেশ করছেন এখন থেকেই। পাশাপাশি বিএনপি প্রার্থীদের কঠোর সমালোচনা করছেন। ২০০৬ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার পর ১২ বছর এলাকার মানুষ দেখা পাননি তৎকালীন সাংসদ কাজী রফিকুল ইসলামের। মিশুক প্রকৃতির এই মানুষটির একসময় স্থানীয় এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিল। কিন্তু দীর্ঘ ১২ বছর নির্বাচনী এলাকার লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে বিএনপির অনেক নেতাকর্মীরাই তার প্রতি ক্ষুব্ধ দাবী করেন সবজি ব্যবসায়ী আনছার আলী।

এসময় কাজী রফিক সমর্থিত আব্দুল হান্নান নামের আরেক ভোটার প্রতিবাদ জানিয়ে বলে উঠেন সারিয়াকান্দি-সোনাতলায় মার্কা দেখে ভোট হয়। কাজী রফিক ধানের শীষ পেলে ক্ষোভ, দুঃখ ভুলে এক চেটিয়া ভোট পাবেন। সুরুজ আলী নামের আরেক ভোটার বলেন শোক রানা ২০০৮ সালের নির্বাচনে সাড়ে ৫ হাজার ভোটে পরাজিত হয়। এরপর থেকে শোকরানা শহরে থাকলেও এলাকার লোকজনের খোঁজ খবর নেয়া ছাড়াও রাজনৈতিক মামলার খরচ জোগান দিয়ে আসছেন নেতাকর্মীদেরকে। এবার ধানের শীষ মার্কা তারই প্রাপ্য।

সারিয়াকান্দি এলাকার কালিতলা গ্রোয়েন বাধ এলাকার বাসিন্দারা জানান, বর্তমান সাংসদ আব্দুল মান্নান যমুনা নদীর ভাঙন রোধে ব্যাপক কাজ করেছেন। একারণে তারা চায় আগামী নির্বাচনে আবারো আব্দুল মান্নান জয়লাভ করুক। আর তরুণ নতুন ভোটাররা চায় কর্মসংস্থান। কিন্তু যমুনা নদীর ভাঙন কবলিত সোনাতলা সারিয়াকান্দি উপজেলায় নেই কোন কর্মসংস্থান। নদীর সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে ভিটেমাটি, ফসলী জমি হারিয়ে সর্বস্বান্ত অধিকাংশ মানুষ। জীবিকার তাগিদে তারা চলে যাচ্ছেন অন্য এলাকায়। কেউ তাদের জন্য কর্মসংস্থানের নতুন কোন ব্যবস্থা করতে পারছেন না।

আসন্ন সংসদ নির্বাচনে এই এলাকায় এবারও রয়েছে অসংখ্য প্রার্থী। ভোটের অনেক আগে থেকেই কথার ফুলঝুরি নিয়ে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন তারা। প্রাথমিক ভাবে বিএনপি থেকে শোক রানা ও কাজি রফিকুল ইসলামকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। বাছাই পর্বে দুইজনই টিকে রয়েছেন। এদের মধ্যে একজনকে দেয়া হবে চূড়ান্ত মনোনয়ন।

মহাজোট থেকে বর্তমান সাংসদ আব্দুল মান্নানকে মনোনয়ন দেয়া হলেও মহাজোটের শরিক দল জাসদের প্রার্থী রয়েছেন হাসান আকবর আফজাল, জাতীয় পার্টির রয়েছেন গোলাম মোস্তফা বাবু। এছাড়াও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী এবিএম মোস্তফা কামাল পাশা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী তবিবর রহমান মণ্ডল রয়েছেন। জাসদ এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার না করলে বর্তমান সাংসদ আব্দুল মান্নানের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর