ঋণ খেলাপে বাতিল হলো ১৩৪ জনের প্রার্থিতা

বিবিধ, নির্বাচন

আসিফ শওকত কল্লোল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 08:49:54

আসন্ন সংসদ নির্বাচনের আগে ঋণ খেলাপি হিসেবে ১৩৪ জনের প্রার্থিতা বাতিল হয়ে গেছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত আট ব্যাংকের ১০০ জন। বাকি ৩৪ জন বেসরকারি ব্যাংকের। এদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ কোনোভাবেই বেশি নয়।

কিন্তু রাঘব বোয়ালরা শত থেকে হাজার কোটি টাকার খেলাপি ‍ঋণ আগেই পুন: তফসিল করে সেগুলো নিয়মিত করে নিয়েছেন। ফলে তাদের নির্বাচন করতে কোনো বাধা নেই। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, নির্বাচনের আগেই বেক্সিমকো গ্রুপের কো চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগের সাবেক বন ও পরিবেশ মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন, সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়াসহ আরো অনেকে খেলাপি ঋণ নবায়ন করে নিয়েছেন।

সূত্র জানায়, খেলাপি ঋণের দায়ে গতকাল পর্যন্ত জাতীয় পার্টির মহাসচিক রুহুল আমিন হওলাদার, ঐক্যফ্রন্টের বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এস এম এস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া, বিএনপির প্রার্থী মুন্নু সিরামিকসের কর্ণধার হারুনুর রশিদ খান মুন্নুর মেয়ে আফরোজা খান রিতাসহ আরো অনেকের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।

যারা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন নির্বাচন কমিশন থেকে তাদের তালিকা সংগ্রহ করে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বাছাই করে ১৩৪ জনকে খেলাপি হিসেবে শনাক্ত করেছে। রোববার মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় ব্যাংকগুলোর পক্ষে এদের খেলাপি ঋণের তথ্য রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সামনে তুলে ধরলে ঐসব মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়।

এর মধ্যে জনতা ব্যাংকের খেলাপি পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বিএনপির প্রার্থী এম এ হাসেম, অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঐ্যক্যফ্রন্টের প্রার্থী বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ও তরিকত ফেডারেশন থেকে লক্ষীপুরের একটি আসনের প্রার্থী এম এ আউয়াল সোনালী ব্যাংকের খেলাপি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। একই ব্যাংকে মনজুর কাদের, মুনিরুল হক চৌধুরী, মামুনুর রশিদ, আব্দুল গফুর ভুঁইয়া খেলাপি প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন।

এছাড়াও ঋণ খেলাপির দায়ে ঝালকাঠি-১ আসনের ইয়াসমিন আক্তার, ঋণ খেলাপি হওয়ায় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব আসলাম চৌধুরী, মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস, শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়ার মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।

একই অভিযোগে বাগেরহাট-১ আসনে জাতীয় পার্টির আহমেদ জোবায়ের, কুষ্টিয়া-১ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের (বাদল গ্রুপ) প্রার্থী রেজাউল হক, কুষ্টিয়া-৪ আসনের ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী মেহেদী হাসান, জাকের পাটির তসির উদ্দিন ও সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ প্রার্থী রোকনুজ্জামান রোকন, শেরপুর-১ আসনে বিএনপির নেতা মো. হযরত আলীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়।

ব্র্যাক ব্যাংকে ঋণ খেলাপির কারণে ঢাকা-৪ আসনের বিকল্পধারার কবির হোসেন, সিটি ব্যাংকে ঋণ খেলাপির কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মালেক, সোনালী ব্যাংকে ঋণ খেলাপি থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম, নাটোর-১ আসনে জাতীয় পার্টির আলাউদ্দিন মৃধা, যশোর -৪ আসনে বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রার্থী এম নাজিম উদ্দিন আল আজাদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।

খুলনা-৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী শফিকুল আলম মনা একজন ঋণ খেলাপির জামিনদার হওয়ায় তার মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলার কৃষক লীগের সভাপতি বিশ্বজিৎ সাধুর মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।

এছাড়া ঋণ খেলাপির কারণে ন্যাশনাল পিপলস পাটির মো. দেলোয়ার হোসেনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। সূত্র জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকে ঋণ খেলাপি প্রার্থী ছিল ৪১ জন। এর মধ্যে বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী নয় জন প্রার্থী ঋণ পুন:তফসিল ও আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে নিয়মিত হয়েছেন। বাকি ৩২ জন প্রার্থী ব্যাংকের চূড়ান্ত যাচাই-বাছাইয়ে ঋণ খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। একইভাবে জনতা ব্যাংকের ১৯ জনের মধ্যে ১৩ জন প্রার্থী ঋণ খেলাপি হিসাবে শনাক্ত হয়েছেন। অগ্রণী ব্যাংকের ৩০ জনের মধ্যে ১৫ জন প্রার্থী ঋণ খেলাপি। রূপালী ব্যাংকের ১২ জনের মধ্যে তিন জন ঋণ খেলাপি ধরা পড়ে। বেসিক ব্যাংকের ছয় জন ঋণ খেলাপি ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডে (বিডিবিএল) তিন জন প্রার্থী ঋণ খেলাপি ধরা পড়েছে। এছাড়া  আরও ৩৪ জন প্রার্থী বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ খেলাপি হিসাবে ধরা পড়েছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর