‘জনগণ এবার ভোট দিবে, ভাবতেই অন্যরকম লাগছে’

বিবিধ, নির্বাচন

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-25 23:30:54

মানিকগঞ্জ থেকে ফিরে:  ‘সংরক্ষিত আসন ছিলো শেখ হাসিনার উপহার। বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে অতটা ভালো লাগে নি। জনগণ আমাকে ভোট দিবে ভাবতেই ভালো লাগছে। তারা নৌকায় ভোট দিতে চাচ্ছে- এটা একটা অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে। তাই এবারের নির্বাচন আমার জন্য চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত আমি।’

কথাগুলো মমতাজ বেগমের। যিনি মানিকগঞ্জের শিঙ্গাইর উপজেলার, জয়মন্টপ গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ওঠে আসা সফলতার গল্প। তাকে বলা হয় বাংলা লোকগানের সুর সম্রাজ্ঞী। বাংলার মাটি ও মানুষের প্রাণের শিল্পী। সামান্য বাউল কন্যা থেকে গানের মাধ্যমে তার মানুষের অন্তরে যেমন বিচরণ, তেমনি তিনি জাতীয় সংসদে জনগণের একজন প্রতিনিধিও।

এবারের একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী। সম্প্রতি বার্তা২৪.কম-এর আলাপচারিতায় উঠে আসন্ন নির্বাচন, রাজনীতি, নিজের তার জীবনের গল্প।

প্রথমবার সংরক্ষিত, পরেরবার বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য-এবারের নির্বাচনকে কিভাবে দেখছেন?- মমতাজ বলেন, এটা আমার কাছে চ্যালেঞ্জ। এতদিন জনগণ আমাকে ভালোবাসা দিয়েছে, এবার ভোট দিবে। দুই মেয়াদে আমি যে উন্নয়ন করেছি, তাতে জনগণ আমাকে ভোট দিতে, নৌকায় ভোট দিতে উন্মুখ হয়ে আছে।

যোগ্য প্রার্থী ভেবে আবারও নৌকা আমার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, নেত্রী (শেখ হাসিনা) আমার উপর ভরসা রেখে নৌকা তুলে দিয়েছে। তিনি আমাকে যোগ্য ভেবেছে। আমি এবারের ভোটে প্রমাণ করে দিবো মানিকগঞ্জের মাটি নৌকার ঘাঁটি।  

নিজের জয়ের ব্যাপারে কতটুকু আশাবাদী জানতে চাইলে জনপ্রিয় এ সংগীতশিল্পী বলেন, আমি কখনও বলবো না, জয়ে ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। তবে জনগণের জন্য কাজ করেছি। আগে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা একটা বড় কাজ করলে বলত আমি এ কাজ করেছি। এখন আমরা এরকম ১০/১৫টা  বড় কাজ করেছি। স্কুল-কলেজ, ব্রিজ কালভার্ট, বাঁধ নির্মাণ- কি করি নাই। আর আমরা এত উন্নয়ন করেছি, যা আর গুণে গুণে বলতে হয় না। উন্নয়নের এ ধারা ধরে রাখতে নৌকার জয়ের ধারা দরে রাখতে হবে। তাই জয়ের ব্যাপারে আমি আশাবাদী, এখন উপরে আল্লাহ- আর সব ভোটারদের হাতে।

মানিকগঞ্জের শিঙ্গাইর, হরিরামপুর ও সদরের দুইটি ইউনিয়ন নিয়ে ২ আসন। মনোনয়ন প্রক্রিয়ার আগে গুঞ্জন শোনা যেত স্থানীয় আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব ছিলো। একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশাও করেছিলেন।  

তবে দ্বন্দ্বের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে মমতাজ বলেন, শিঙ্গাইর উপজেলায় কোনো মতানৈক্য নেই। সবাই নৌকার বিজয়ের জন্য কাজ করছে। প্রতিদিন কর্মী সভা হচ্ছে। নৌকার বিজয়ের জন্য পুরো মানিকগঞ্জ এক পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ।

একজন বাউলকন্যা থেকে বর্তমান অবস্থা-নিজেকে কিভাবে মূল্যায়ন করেন?- ‘ পরিশ্রমের কারণেই আমি এ অবস্থানে এসেছি। কোনো কিছু পেতে হলে পরিশ্রম করতে হবে। কোনো কাজে প্রতি লক্ষ্য যদি ঠিক থাকে, তাহলে সেটা অর্জন সম্ভব। দেখুন, আমার বাবা একজন বাউল ছিলো। আমার জন্য কিছু রেখে যাননি। তবে আমাকে সম্পদ বানিয়ে গেছেন। সেখান থেকে আমি চিন্তা করলাম, বড় শিল্পী হবো। এরপর মানুষ আমাকে  শিল্পী হিসেবে সে ভালোবাসা দিয়েছি।  সেখান থেকে চিন্তা করলাম মানুষের সেবা করার।  এই সেবাব্রত নিয়ে রাজনীতিতে আসা।

‘প্রথমে আমি কিন্তু রাজনীতি করব তা কিন্তু ভাবিনি। নিজের পরিশ্রমের টাকা দিয়ে মানুষের সেবা শুরু করলাম। প্রথমে একটা ভাড়া বাড়িতে মমতাজ চক্ষু হাসপাতাল নির্মাণ শুরু করি। সেটা এখন দাঁড়িয়ে গেছে। আমি না থাকলেও চক্ষু হাসপাতালটি থাকবে।

গান ও রাজনীতি দুটো এক সঙ্গে সামলানোর বিষয়ে ভোটের সম্ভাব্য এ প্রার্থী বলেন, গান ও রাজনীতি কিভাবে ব্যালেন্স করি এমন প্রশ্ন সব সময় আসে। আপনারা হয়ত দেখেছেন, আমি সারা বাংলাদেশে প্রোগ্রাম করেছি। গান গেয়ে আমি মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। গানের পাশাপাশি আমি এলাকার উন্নয়ন করে মানুষের সেবা করি। আমি একজন শিল্পী হিসেবে গান করি, তারা আমার গান পছন্দ করে।  আমার গান তাদের আত্মার খোড়াক, আমি দুইটা দিয়েই মানুষের সেবা করি।

‘ আরেকটা জিনিস মনে রাখতে হবে, ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়, কথা আছে, যে রাধে সে চুলও বাঁধে। মানুষের সেবা করতে চাইলে পারা যায়। আমি চাইলেই পারতাম শিল্পী হয়ে সারাজীবন আরাম আয়েশে জীবন কাটাতে। কিন্তু সে আরাম আয়েশের সময়টুকু- আমি রাজনীতিতে দিয়ে মানুষের সেবা করি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর