কিশোরগঞ্জ-২ আসনে দুই নতুনের দ্বৈরথ

বিবিধ, নির্বাচন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 04:50:32

কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদি-পাকুন্দিয়া) আসনের নির্বাচনী ময়দানে দুই নতুন প্রার্থীর দ্বৈরথ জমে উঠেছে। নৌকা ও ধানের শীষ নিয়ে দুই নবাগত যোদ্ধার হাড্ডাহাড্ডি ভোটযুদ্ধে সরগরম পুরো নির্বাচনী এলাকা। ভোটের মাঠচিত্র এই আসনে তীব্র লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট সোহরাবউদ্দিনকে উড়িয়ে দিয়ে রাজনীতির মাঠের নতুন সদস্য নূর মোহাম্মদ নৌকার হাল ধরেছেন। সাবেক নেতৃত্বের হাতে ক্ষয়িষ্ণু আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ ও মজবুত করেছেন তিনি। ব্যাপক জনসংযোগের মাধ্যমে যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তার প্রমাণ দিয়েই আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন পেয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক প্রধান, সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সচিব নূর মোহাম্মদ।

বিএনপির ক্ষেত্রেও নতুনের জয়গান শোনা যাচ্ছে। ১/১১-এর পর ভঙ্গুর দলকে ধরে রাখেন তরুণ নেতা শহীদুজ্জামান কাকন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের সাবেক নেতা, দলের ইউরোপীয় শাখার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য কাকন বিপণ্ন দলের নেতা-কর্মীদের ঘরে ঘরে গিয়ে খোঁজ-খবর করেন। তৃণমূলে গড়ে তুলেন শক্তিশালী জনভিত্তি। দলের সাবেক নেতা মেজর রঞ্জন আবার দলে ফিরে মনোনয়ন পেলে এ আসনে দেখা দেয় ক্ষোভ। পরে তিনি ‘খেলাপি ঋণের জামিনদার হিসাবে ঋণখেলাপি হওয়ায়’ রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক তার মনোনয়ন পত্র বাতিল করা হলে বিএনপির একমাত্র প্রার্থী হিসাবে নূর মোহাম্মদকে চ্যালেঞ্জ জানানোর জন্য মাঠে থাকেন শহীদুজ্জামান কাকন।

নূর মোহাম্মদের ব্যক্তিত্ব, অতীত পেশাগত সাফল্য, ব্যক্তিগত ইমেজ, কঠোর পরিশ্রম অল্প দিনের মধ্যেই কিশোরগঞ্জ-২ আসনের মধ্যমণিতে পরিণত করে তাকে। মাঠে নেমেই জনজোয়ার সৃষ্টি করেন তিনি। আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা অতিদ্রুত সময়ের মধ্যেই তার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হন। আওয়ামী লীগের আগের নেতৃত্ব তার সামনে দাঁড়াতেই পারে নি। মাঠের জরিপ সম্পূর্ণভাবে তার পক্ষে চলে যায়। বাস্তব কারণেই যোগ্যতার ভিত্তিতে দলের মনোনয়ন পান রাজনীতিতে নবীণ কিন্তু ব্যক্তিত্বে প্রবীণ এই নেতা।

শহীদুজ্জামান কাকন তারুণ্যের শক্তি ও রাজনৈতিক ঐতিহ্যের শক্তিতে বিএনপি ও সমমনা দলের নেতা-কর্মীদের আস্থা অর্জন করেন। তার পিতা অ্যাডভোকেট নূরুজ্জামান চাঁন মিয়া কিশোরগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান ছাড়াও এই আসনের সংসদ সদস্য থাকাকালে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড করেন। উচ্চশিক্ষিত, ভদ্র ও সুযোগ্য কাকন মাঠে নামলে বিএনপির মূলস্রোত তার নেতৃত্বে সরব হয়। জনপ্রিয়তায় এগিয়ে থাকায় দলের মাঠ জরিপে সর্বাগ্রে কাকনের নাম চলে আসে। কিন্তু বার বার দলত্যাগী মেজর রঞ্জনকে দলের একটি বিশেষ মহল অজ্ঞাত কারণে ভোটের আগে হুট করে টেনে আনলে স্থানীয় বিএনপির ত্যাগী ও সংগ্রামী অংশ বিক্ষুব্ধ হয়। অবশেষে রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক মেজর রঞ্জনের মনোনয়ন পত্র বাতিল ঘোষিত হলে কাকন নির্বাচনী যুদ্ধে বিএনপির একমাত্র প্রার্থী থাকেন।

কটিয়াদীর কলেজ শিক্ষক সাইফুল আজম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘প্রার্থী হিসাবে দুইজনই নতুন। ভোটাররা পুরনোদের বার বার দেখতে দেখতে ক্লান্ত। এলাকার উন্নয়ন ও অগ্রগতির নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য নতুন প্রার্থী চায় মানুষ। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির এই দুই নতুন নেতা মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছেন।’

বার্তা২৪.কমকে পাকুন্দিয়ার এনজিও কর্মী খালেদা খানম বলেন, ‘এই দুই শক্তিশালী নতুন প্রার্থীর মধ্যে নির্বাচনী লড়াই জমবে ভালো। দুজনেই উচ্চশিক্ষিত ও দেশে-বিদেশে পরিচিত। এদের নেতৃত্বে অবহেলিত এলাকার শান্তি, শৃঙ্খলা ও উন্নয়ন সম্ভব হবে। নির্বাচনও আনন্দঘন হবে।’

কিশোরগঞ্জের ছয়টি আসনের মধ্যে কিশোরগঞ্জ-২ আসনটি পুরো জেলার মধ্যেই এখন ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। ‘দুইজন প্রার্থীই নতুন এবং কারোই জয় বা পরাজয়ের অতীত অভিজ্ঞতা নেই। ফলে ভোটের মাঠে কে হারেন আর কে জেতেন, তা দেখতে আগ্রহী সবাই’, জানান কালিয়াচাপড়ার কলেজ ছাত্র জনি আহমেদ।

কিশোরগঞ্জ-২ আসনে দুই নতুনের ভোট-দ্বৈরথ এবং নির্বাচনী-রাজনৈতিক লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত কি হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর