ফরিদপুর-১: মনজুরের কারণে ঝুঁকিতে নৌকা!

বিবিধ, নির্বাচন

রেজাউল করিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-22 13:07:58

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-১ (মধুখালী-বোয়ালমারী-আলফাডাঙ্গা) আসনে হেভিওয়েট রাজনৈতিক নেতাদের বাদ দিয়ে মনজুর হোসেন নামে এক সাবেক সচিবকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ওই আসনটি পরাজয়ের ঝুঁকিতে পড়েছে।

ফরিদপুরের-৩টি নির্বাচনী আসনে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে ভোটের ইমেজ লক্ষ্য করা গেছে। তবে ফরিদপুর-১ আসনের বেশির ভাগ নেতাকর্মী রয়েছে হতাশার মধ্যে। দলীয় গ্রুপিংয়ের কারণে অধিকাংশ নেতাকর্মী ভোটের মাঠে দায়সারা ভাবে কাজ করছে।

এই আসনে কয়েক বছর ধরে সরকারের উন্নয়ন কাজের প্রচার করে সাধারণ মানুষের কাছে আসা এমন কয়েকজন প্রার্থী ছিলেন। তাদের মধ্যে বর্তমান সাংসদ ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেভিওয়েট নেতা আব্দুর রহমান, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত সিকদার, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলী ও সদস্য বিশিষ্ট ব্যবসায়ী দানশীল ব্যক্তিত্ব কাজী সিরাজুল ইসলাম, সাংবাদিক ও সমাজসেবক আরিফুর রহমান দোলনসহ প্রায় দেড় ডজন আওয়ামী লীগ নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন।

সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ-সম্পর্ক রয়েছে এদের মধ্যে কাউকে প্রার্থী করা হলে ভোটারদের মধ্যে উচ্ছ্বাস থাকত। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সহজে মাঠে নামত। সাধারণ মানুষের মধ্যেও ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হতো। এখন সেটা নেই। তাই এখন ফরিদপুর-১ আসনের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, সাধারণ মানুষ ও ভোটাররা নিরাশায় দুলছে।

মূলত এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে হঠাৎ আবির্ভাব সাবেক সচিব ও রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মনজুর হোসেনকে মনোনয়ন দেয়ার পর এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। থেমে গেছে নির্বাচনী উন্মাদনা। নির্বাচনে মঞ্জুর কী বিজয়ী হতে পারবেন এমন প্রশ্ন এখন ভোটের মাঠে।

ঝুঁকির কারণ হিসেবে নেতাকর্মীরা বলছে, মনজুর হোসেন তিন বছরের বেশি সময় আগে সরকারি চাকরি থেকে অবসরে গেছেন। অথচ দীর্ঘ এই সময়ে তিনি আওয়ামী লীগের কোনো কর্মকাণ্ডেই অংশ নেননি, দলেও যোগ দেননি। ফলে তার কোনো নিজস্ব কর্মী নেই। দলে ও সাধারণ মানুষের কাছে তিনি অপরিচিত। তাকে নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী করায় পরাজয়ের ঝুঁকি রয়েছে।

এদিকে তার বিপরীতে বিএনপি মনোনয়ন দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধার সাবেক সাংসদ, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য শাহ মোহম্মদ আবু জাফরকে। তিনি এক সময়ে আওয়ামী লীগে ছিলেন। এছাড়া তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি বিএনপি থেকে এই আসনে একবার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন।

নির্বাচন নিয়ে আলফাডাঙ্গার বকুল হোসেন বলেন, ‘মনজুর হোসেন এলাকার মানুষের জন্য কখনো কিছুই করেননি। এমনকি তার নিজ এলাকার উন্নয়নেও কোনো কাজে আসেননি। এখন নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়ে এলাকায় এসেছেন। এমন মানুষকে ভোটাররা কেন ভোট দেবে?’

বোয়ালমারীর রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বুঝতে শেখার পর থেকে আওয়ামী লীগ করি। নৌকায় ভোট দেই। মনজুর হোসেনকে ভালোভাবে চিনি না। কিন্তু যাকে আমরা চিনি-ই না তাকে ভোট দেব কীভাবে?’

বোয়ালমারীর সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মনজুর হোসেন সরকারের একাধিক মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন। কিন্তু এলাকার জন্য কিছুই করেননি। তারপর অবসরে এসে রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হওয়ার পরও কিছু করতে পারেননি।’

স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘প্রার্থী মনে করছেন, তিনি নৌকা পেয়েছেন, এখন আর চিন্তা নেই। এই চিন্তা দিয়ে তো জয় আসবে না। কারণ এবারের ভোটে বিএনপির প্রার্থী হচ্ছে শাহ মো. আবু জাফর। মনজুর হোসেনের তুলনায় তিনি বেশ শক্ত প্রার্থী। এছাড়া দলীয় গ্রুপিং তো রয়েছেই।’

প্রসঙ্গত, মনজুর হোসেন বর্তমানে রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে আছেন। রাষ্ট্রীয় সুবিধাভোগী এই পদে থেকে তিনি সংসদ নির্বাচন করতে পারবেন কিনা, এ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর