রংপুর-২: দশের ভেতরে আলোচনায় ৪ প্রার্থী

বিবিধ, নির্বাচন

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 03:46:37

জেলার সংসদীয় ছয়টি আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী রংপুর-২ (বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ) আসনে। এখানে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার ব্রত নিয়ে প্রতীক পেয়ে মাঠে নেমেছেন দশজন প্রার্থী। এদের মধ্যে চারজন হেভিওয়েট প্রার্থী। যার তিনজনই জাতীয় সংসদে এ আসন থেকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

লাঙ্গলের দুর্গখ্যাত এ আসনটিতে বর্তমান সাংসদ বদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক। অনেক চেষ্টা করেও এবার মহাজোটের প্রার্থী হতে পারেননি। তবে দল তাকে নিরাশ করেনি। শেখ হাসিনা তাকে দিয়েছেন নৌকা প্রতীক। এবার সেই নৌকার বৈঠা শক্ত হাতে নিয়ে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়া এ প্রার্থী।

এদিকে রংপুরের উন্নয়নে নিজের কাঁধে দায়িত্ব তুলে নেয়া সরকার প্রধান শেখ হাসিনার নেক নজরে বদলে গেছে এ অঞ্চল। এই জেলার প্রতিটি এলাকায় পৌঁছে গেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। যার ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন দেখেছে এখানকার সাধারণ মানুষ। সেই উন্নয়নকে পুঁজি করে জনগণের কাছে নৌকার পক্ষে উন্নয়নের স্বার্থে ভোট চাইছেন ডিউক চৌধুরী।

অন্যদিকে ২০০৮ সালে লাঙ্গল প্রতীকে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর এটিএম আজহারুল ইসলামকে (যুদ্ধাপরাধে কারাবন্দী) সোয়া লাখের বেশি ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছিলেন জাতীয় পার্টির আনিছুল ইসলাম মণ্ডল। এবার তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সিংহ প্রতীক নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। তার সময়েও বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ এলাকাতে উন্নয়ন হয়েছে। তবে তারাগঞ্জের মানুষের কাছে উন্নয়ন সমীকরণে বেশি জনপ্রিয়তা রয়েছে সাবেক এ সাংসদের।

সাধারণ মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন, সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা ও প্রতিটি এলাকাতে সম-উন্নয়ন নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সিংহ প্রতীকে ভোট চেয়ে গণসংযোগ চালাচ্ছেন আনিছুল মণ্ডল। এ আসনের রামনাথপুর, রাধানগর, গোপালপুর, মধুপুর, শেখেরহাটসহ তারাগঞ্জ এলাকায় তার ভোটব্যাংক। মিশুক টাইপের আচরণ, সহজে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যাওয়া এবং সুখ-দুঃখে মানুষের খোঁজ খবর নেয়ার প্রবণতা অন্যদের চেয়ে আনিছুল মণ্ডলের মধ্যে বেশি। দানশীলতার জন্যও সাধারণ মানুষের হৃদয়ে রয়েছে তার বাড়তি স্থান।

জাতীয় পার্টির আরেক সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী সরকার। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকাকে ডুবিয়ে লাঙ্গলের জয় নিশ্চিত করেছিলেন তিনি। ওই নির্বাচনে আনিছুল হক চৌধুরী তের হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। সেই মোহাম্মদ আলী সরকার এখন বিএনপির কান্ডারি। লাঙ্গল রেখে ধানের শীষ নিয়েছেন তিনি। প্রবীণ এই রাজনীতিকেরও রয়েছে এ আসনে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। বদরগঞ্জ পৌর এলাকা থেকে শুরু করে কালুপাড়া, বিষ্ণপুর, চেংমারী, রাধানগর, রামনাথপুর, লোহানীপাড়ায় রয়েছে তার ভোট ব্যাংক। বিএনপির এই প্রার্থীর বাড়তি সুবিধা হবে জামায়াতের ভোটও জুটবে তার খাতায়।

বদরগঞ্জের সাধারণ ভোটাররা মনে করছেন, এবার হাড্ডাহাড্ডি ভোটযুদ্ধ হবে। আওয়ামী লীগের ঘরে যেমন শত্রু রয়েছে, তেমনি জাতীয় পার্টির ভেতরে কয়েকটি গ্রুপ এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দল আছে। এ কারণে নৌকা-লাঙ্গলের দ্বন্দ্বে ধানের শীষ প্রতীকের মোহাম্মদ আলী মণ্ডল জয়ী হলে অবাক হবার কিছু থাকবে না।

এদিকে সাবেক তিন সংসদ সদস্যের দৌড় থামাতে এবার লাঙ্গলের জন্য কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন অধ্যক্ষ আসাদুজ্জামান চৌধুরী সাবলু। তিনি বদরগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে এরশাদের ইশারায় নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে মহাজোটের প্রার্থী ডিউক চৌধুরীর জয়ের পথ মসৃণ করে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এবার নৌকাকে ঠেকাতে নাছোড় বান্দার মতোই লাঙ্গল ছাড়েননি তিনি। যদিও সম্পর্কে সাবলু চৌধুরীর ভাতিজা ডিউক চৌধুরী। সাবলু চৌধুরীর চাচাতো ভাই প্রয়াত আব্দুল মমিন চৌধুরীর ছেলে হলেন বর্তমান সংসদ সদস্য ডিউক চৌধুরী। ভোটযুদ্ধের ময়দানে চাচা-ভাতিজার মর্যাদার এ লড়াই ভোটারদের মাঝে বাড়তি উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে।

জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী সাবলু চৌধুরী। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘রংপুর লাঙ্গলের দুর্গ। এখানে লাঙ্গল ছিল, আছে এবং আগামীতেও থাকবে। আমি শান্তির জন্য, পরিবর্তনের জন্য লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী হয়েছি। বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ আওয়ামী লীগের শতকরা ৬০ ভাগ মানুষ আমাকে ভোট দেবে। এখানে নৌকা নয়, আমার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মশাল প্রতীকের কুমারেশ চন্দ্র সরকারের সঙ্গে।’

বদরগঞ্জ পৌর এলাকার ভোটার স্থানীয় সাংবাদিক আফরোজা বেগম জানান, নির্বাচনী মাঠে বাবা-ছেলের মধ্যে ভোটযুদ্ধ হচ্ছে, সেখানে চাচা-ভাতিজা কোনো ঘটনাই নয়। বরং জাতীয় পার্টির একজন লাঙ্গল, একজন সিংহ এবং আরেক দলত্যাগী নেতা ধানের শীষ নিয়ে ভোটে থাকায় আওয়ামী লীগের নৌকার জয় সহজ হবে।

এদিকে বদরগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক বলেন, ‘রংপুরের মানুষ বরাবর জাতীয় পার্টিকে ভোট দিয়েছেন। আশা করি এবারো তারা জাতীয় পার্টিকে নির্বাচিত করবে।’

তিন লাখ ১২ হাজার ৭৬৬ জন ভোটারের এ আসনে ডিউক চৌধুরী ও সাবলু চৌধুরী ছাড়াও এবারের নির্বাচনে লড়ছেন- সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী সরকার (বিএনপি-ধানের শীষ), সাবেক এমপি আনিছুল রহমান মণ্ডল (স্বতন্ত্র-সিংহ), আশরাফ আলী (ইসলামী আন্দোলন-হাতপাখা), কুমারেশ চন্দ্র রায় (জাসদ-মশাল), হারুন অর রশিদ (বিকল্পধারা-কুলা), আশরাফ-উজ-জামান (জাকের পার্টি-গোলাপ ফুল), জিল্লুর রহমান (বিএনএফ-টেলিভিশন) ও ওয়াসিম আহমেদ (এনপিপি-আম)।

এ সম্পর্কিত আরও খবর