খুলনা বিভাগে ৬০ শতাংশ ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ

বিবিধ, নির্বাচন

মানজারুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-05-07 10:39:53

খুলনা বিভাগের ৩৬টি সংসদীয় আসনের চার হাজার ৫২৫ কেন্দ্রের মধ্যে দুই হাজার ৭৪২টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। এ অঞ্চলের ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্র প্রায় ৬০ শতাংশ।

সম্প্রতি খুলনা রেঞ্জ কার্যালয় থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ভোটকেন্দ্র ও ভোটার সম্পর্কে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে পাঠানো প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। যদিও এ তথ্য সংযোজন-বিয়োজন হতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ এসব কেন্দ্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কী পরিমাণ সদস্য মোতায়েন থাকবে তা এখনো জানায়নি নির্বাচন কমিশন।

সর্বশেষ গত ১৫ মে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েনের পরও কেন্দ্র দখল ও জাল ভোটের অভিযোগ উঠে। তার আগে, উপজেলা পরিষদ ও ইউপি পরিষদ নির্বাচনেও ব্যাপক অভিযোগ ছিল। দশ বছর পর অংশগ্রহণমূলক এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়েই ভাবছে সবাই।

সূত্রমতে, কেসিসি নির্বাচনে ২৮৯টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ২২৬টিকে ঝুঁকিপূর্ণ এবং ৬৩টিকে সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে তাদের প্রতিবেদনটি পাওয়া যায়নি। প্রসঙ্গত, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রসমূহকে গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিমুক্ত কেন্দ্রকে সাধারণ ভোট কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ের সূত্রমতে, খুলনা জেলার চারটি আসনে গড়ে প্রায় ৭০ শতাংশ কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ। এ চারটি আসনের মোট কেন্দ্রের ২৮৩টি ঝুঁকিপূর্ণ ও ১৯৩ কেন্দ্র সাধারণ। তার মধ্যে খুলনা-১ আসনের বটিয়াঘাটায় ৩৬ ও দাকোপে ২৯, খুলনা-৪ আসনের রূপসায় ৩৪, তেরখাদায় ২৪ ও দিঘলিয়ায় ২৪, খুলনা-৫ আসনের ফুলতলায় ৯ ও ডুমুরিয়ায় ৩৬টি, খুলনা-৬ আসনের পাইকগাছায় ৩৪ ও কয়রায় মাত্র পাঁচটি বাদে ৫৭টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ।

এছাড়া, বাগেরহাটের চারটি সংসদীয় আসনের ৪৬৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৫৮টিই ঝুঁকিপূর্ণ। তারমধ্যে বাগেরহাট-১ আসনের চিতলমারীতে ১৭, মোল্লাহাটে ২৪ ও ফকিরহাটে ৩৯টি, বাগেরহাট-২ আসনের সদরে ৭৩ ও কচুয়ায় ১৪টি, বাগেরহাট-৩ আসনের রামপালে ৪১ ও মংলায় ৩০টি, বাগেরহাট-৪ আসনের মোড়েলগঞ্জে ৯২ ও শরণখোলায় ২৮টি ঝুঁকিপূর্ণ ভোট কেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়েছে।

সাতক্ষীরার চারটি আসনে ৫৯৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪৯০টিই ঝুঁকিপূর্ণ। তারমধ্যে সাতক্ষীরা-১ আসনের তালায় ৪৭ ও কলারোয়ায় ৬৩টি, সাতক্ষীরা-২ আসনের সদরে ১০৭টি, সাতক্ষীরা-৩ আসনের আশাশুনিতে ৭৩, দেবহাটায় ৩০ এবং সাতক্ষীরা-৪ আসনের শ্যামনগরে ৭৬ ও কালীগঞ্জে ৬৩টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ।

যশোরের ছয়টি সংসদীয় আসনে ৭৯৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৬৩টিই ঝুঁকিপূর্ণ। তারমধ্যে যশোর-১ আসনের শার্শা উপজেলায় ৩২, যশোর-২ আসনের চৌগাছায় ৩৫ ও ঝিকরগাছায় ৪৬, যশোর-৩ আসনের সদরে ৯৩, যশোর-৪ আসনের বাঘারপাড়ায় ২৫ ও অভয়নগরে ৪৩, যশোর-৫ আসনের মনিরামপুর উপজেলায় ৩৫ এবং যশোর-৬ আসনে কেশবপুর উপজেলায় ৪০টি ভোটকেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ।

নড়াইলের দু’টি সংসদীয় আসনের ২৪২টি কেন্দ্রের ১৬৫টিই ঝুঁকিপূর্ণ। তার মধ্যে নড়াইল-১ আসনের সদরে ৬৮ ও কালিয়ায় ১৬ এবং নড়াইল-২ আসনের লোহাগড়ায় ৬৩ ও নড়াগাতিতে ১৮টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ।

তাছাড়া ঝিনাইদহের ৫৭৮টির মধ্যে ২৫০টি, মাগুরার ২৭৭টির মধ্যে ১৮৭টি, কুষ্টিয়ার ৫৬৫টির মধ্যে ৩২৩, চুয়াডাঙ্গার ৩৩৪টির মধ্যে ১৭২টি, মেহেরপুরে ১৮৯টির মধ্যে ১৫১টি ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ।

এমন বাস্তবতায় ২০ দলের খুলনা মহানগর সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম মঞ্জু বার্তা২৪.কমকে জানান, পূর্বের অভিজ্ঞতা বলে, এ অঞ্চলে নির্বাচনে সন্ত্রাসীরা প্রভাব বিস্তার করে। নির্বাচনের আগে যদি চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার না করা হয় তাহলে ২০ দল তথা ঐক্যজোটের প্রার্থীদের প্রচারণা ও নিরাপত্তার সংকট সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে যেতে ও নিরাপদে ভোট দিতে পারবে না। তাই সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রসীদের গ্রেফতার করতে হবে বলে দাবি করেন তিনি।

অপরদিকে অস্ত্র ও সন্ত্রাসীদের ধরার আহবান জানিয়ে খুলনা মহানগর ১৪ দলের সমন্বয়ক মিজানুর রহমান মিজান বলেন, নির্বাচনে এখন লেভেল প্লেইং ফিল্ড বিরাজ করছে। নির্বাচনী পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে বিএনপি-জামায়াত জোট আবারো আগুন সন্ত্রাস ও ভোটারদের জন্য ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করতে ষড়যন্ত্র করছে। তাই যাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার জন্য মামলা রয়েছে তাদের গ্রেফতারে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

কেএমপি’র মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সোনালী সেন জানান, নির্বাচন পূর্ববর্তী, নির্বাচনকালীন ও নির্বাচন পরবর্তী আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সচেষ্ট খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ। ইতোমধ্যেই নগরী ও নগরীর সীমান্তবর্তী এলাকায় টহল জোরদার করা হয়েছে। নিয়মিত চেক পোস্টের সংখ্যা দ্বিগুণ করা হয়েছে। বর্তমানে মহানগরী এলাকায় ৩৪টি চেকপোস্ট পরিচালিত হচ্ছে। পাশাপাশি মহানগরী এলাকায় ৭৯ শতাংশ ভোটকেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে এর আশপাশে সাদা পোশাকে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

খুলনার রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন জানান, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন প্রতিরোধে নগরীতে ১৭ জন ম্যাজিস্ট্রেটের অধীন মোবাইল কোর্ট গঠন করে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি খুলনা-২ আসনের যে ১৫৭টি কেন্দ্রে ইভিএমএর মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে সেসব কেন্দ্রে ৩ জন করে সেনা সদস্য মোতায়েনের বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে। ফলে এ অঞ্চলে নির্বাচনকালীন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর