ঢাকা-১৪: কোন্দল আর চাঁদাবাজিতে ডুবতে পারেন আসলাম

বিবিধ, নির্বাচন

শাহরিয়ার হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 23:05:39

টানা ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য আসলামুল হক নিজ এলাকায় বেশ জনপ্রিয়। তবে চলতি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই দলীয় কোন্দলে জড়িয়ে পড়েছেন তিনি। পাশাপাশি অভিযোগ উঠছে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে তার নামে চাঁদাবাজির।

সংশ্লিষ্ট আসনের ভোটাররা বলছেন, নৌকা প্রতীক নিয়ে যদি আসলাম পরাজিত হন, তাহলে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও আর চাঁদাবাজির জন্যই তিনি পরাজিত হবেন।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৭, ৮, ৯, ১০, ১১ ও ১২ নং ওয়ার্ড এবং সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়ন নিয়ে ঢাকা-১৪ আসন গঠিত। এর মধ্যে পড়েছে মিরপুর, শাহ আলী, দারুস সালাম ও রূপনগর থানা।

রোববার (১৭ ডিসেম্বর) সরেজমিনে এই সংসদীয় আসন ঘুরে ভোটারদের ও দলীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।

স্থানীয় নেতা কর্মী সূত্রে জানা যায়, আসনকেন্দ্রিক রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ, গাবতলী বাস টার্মিনাল নিয়ন্ত্রণ, এলাকায় কমিটি গঠনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এমপি আসলাম ও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিনের সঙ্গে দা-কুমড়া সম্পর্ক।

সংশ্লিষ্ট থানাগুলোর আওয়ামী লীগের নেতারা সাবিনা আক্তার গ্রুপের হয়ে কাজ করেন। ঠিক উল্টো দিকে যুবলীগের নেতাকর্মীরা এমপি আসলামের হয়ে কাজ করেন। সংরক্ষিত আসন ছেড়ে সাবিনা এবার মনোনয়ন চাওয়ায় নির্বাচনের শুরু থেকেই তাদের কোন্দল আরও বেড়ে যায়, নেতাকর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যান।

আসলামুল হক আসলামের নির্বাচনী প্রচারণায় এখনও সেভাবে স্থানীয় নেতাদের দেখা যায়নি। মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হানিফ জোট বেঁধেছেন সাবিনা আক্তারের সঙ্গে। তাই অনেকটা একা একাই নির্বাচনী গণসংযোগে বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাদাভাবে উঠান বৈঠক করেছেন এমপি আসলাম। বাড়ি বাড়ি গিয়ে লিফলেট বিতারণ করছেন।

মিরপুর-১ নম্বর এলাকার ৯ নং ওয়ার্ডের ইউনিট-৪-এর সভাপতি চেগোদা খাঁন বার্তা২৪.কমকে বলেন, কাজ করে মজা পাচ্ছি না। নিজেদের মধ্যে দুই গ্রুপে হলে অন্য পক্ষ এসে সুযোগ নিবে এটাই তো স্বাভাবিক! যত দ্রুত উভয়পক্ষ এক হয়ে কাজ করা যায়, সেটাই নৌকার জন্য ভালো।

নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক ১১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের পদধারী এক নেতা বলেন, এখন যেভাবে চলছে; কেউ প্রচারণায় আসেন কেউ আসেন না। এভাবে নির্বাচন হয় না। সবাই মিলে কাজ করলে নৌকার বিজয় হবেই।

দলীয় কোন্দলের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবিনা আক্তার তুহিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমার সঙ্গে দলের কোনো নেতাকর্মীর দূরত্ব তৈরি হয়নি। আমরা সবাই মিলে নৌকার জন্য কাজ করছি।

অন্যদিকে সরেজমিনে গাবতলী টার্মিনাল ও শাহআলী, দারুস সালাম কাঁচা বাজার এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়। দীর্ঘদিন ধরে মোটা অঙ্কের টাকা চাঁদা দিয়ে ব্যবসা করে আসছেন তারা। যা আগে হয়নি। পরিষ্কারভাবে তারা কিছু না বললেও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে তাদের ভেতরে চাপা ক্ষোভ রয়েছে।

এখানকার ব্যবসায়ী হাজী বাণিজ্য ভাণ্ডারের মালিক মাসুম রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ব্যবসা করে খাই, তাই কিছু বলার নাই। তবে নৌকার জনপ্রিয়তা কথা বাদ দিলে, এমপি আসলামের নামে যে চাঁদাবাজি হয়- তাতে জয়ী হওয়া তার জন্য কষ্টকর।

পাশাপাশি গাবতলী বাস টার্মিণাল নিয়ন্ত্রণ করাসহ চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে আসলামের ভাই মফিজুল হকের বিরুদ্ধে। এ টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করে তার সিন্ডিকেট। এ বিষয়ে দর্শনা ডিলাক্স পরিবহনের কর্মচারী রফিকুল বার্তা২৪.কমকে বলেন, টার্মিনালে কাজ করতে গিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হয়। নির্ধারিত চাঁদার পরও নানাজন এসে নানা কাজে টাকা নিয়ে যায়। কিছু বললেই বলে এমপির লোক। সেটা এমপি পর্যন্ত যায় কিনা জানি না। কিন্তু আমাদের দিতে হয়।

এখানকার স্থানীয় চায়ের দোকানদার জসিম বলেন, এই চাঁদা পার্টিই এমপির সুনাম নষ্ট করল।

দলীয় কোন্দল ও চাঁদাবাজি অভিযোগের বিষয়ে জানতে এমপি আসলামুল হককে একাধিকবার ফোন করা হলেও দিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে এসএমএস করা হলে তিনি কল করেন। পরে দলীয় কোন্দল ও চাঁদাবাজির বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমি একটা মিটিংয়ে আছি; পরে আপনার সঙ্গে কথা বলব।

এ সম্পর্কিত আরও খবর