খাগড়াছড়িতে নৌকা আর লাঙ্গলে সরগরম

বিবিধ, নির্বাচন

মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-24 22:50:57

খাগড়াছড়ি থেকে ফিরে: পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে এর আগে লাঙ্গল প্রতীকের এতো ঢাক-ঢোল দেখা যায়নি। যদিও স্থানীয়রা জানান, লাঙ্গলের জন্যে কখনোই খাগড়াছড়ি উর্বর ছিল না। বরং আ'লীগ-বিএনপি'র পর তৃতীয় স্থানে ইউপিডিএফ এর নাম উঠে আসে। তবে ‌একাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী জাতীয় পার্টির (জাপা) সোলায়মান আলম শেঠ। আর দৃশ্যমান কোন প্রচারণায় নেই ধানের শীষ বা অন্য প্রার্থীদের।

গত শুক্র এবং শনিবার (১৪, ১৫ ডিসেম্বর) খাগড়াছড়ির বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ধানের শীষের প্রার্থী শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়ার একটি প্রচারণা গাড়ি ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়েনি।

শনিবার (১৫ ডিসেম্বর) তারিখ সন্ধ্যায় নগরের সবচেয়ে ব্যস্ত বাজার রোড এবং দীঘিনালা রোডে একটি চাঁন্দের গাড়িতে ধানের শীষে ভোট চেয়ে প্রচারণা চালাতে দেখা যায়। গাড়ির ওপরে মাইক থেকে খালেদা জিয়া ও ধানের শীষ মার্কার স্লোগান ভেসে আসে। এর পেছনে একটি মাইক্রোতে দলেরই কয়েকজন নেতাকর্মী ছিলেন। কারণ মাইক্রোটির সামনে এক গুচ্ছ ধানের শীষ বেঁধে রাখা ছিল। তবে দুটি গাড়ির কোনটিতেই কোন পোস্টার বা ফেস্টুন নেই।

এদিকে পাহাড়ি অঞ্চলে যেখানে বসতি রয়েছে সেসব স্থানে প্রচারণা চোখে পড়েনি। সেসব স্থানে পোস্টারের চেয়ে প্রার্থীরা নিজেদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমেই প্রচার চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন দীঘিনালার মুদি ব্যবসায়ী রতন ত্রিপুরা। তিনি বলেন, 'পার্বত্য জেলায় দৃশ্যমান প্রচারণাগুলো মূলত শহরমুখী।'

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে মাটিরাঙ্গা থেকে খাগড়াছড়ি শহরে যাওয়ার পথে নৌকার সমর্থনে একটি মোটর সাইকেল র‍্যালি দেখা যায়। র‍্যালিতে পাহাড়ি এবং বাঙালি কমিউনিটির উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।

নগরীর শাপলা চত্বর এবং পৌরসভা এলাকায় পোস্টারের মাধ্যমে নৌকা এবং লাঙ্গল প্রতীকের ব্যাপক প্রচারণা চোখে পড়েছে। এছাড়াও কিছু ফেস্টুনও রয়েছে। বাজার রোডে ল্যাম্পপোস্টগুলো ব্যবহার করে নৌকার পোস্টার ঝুলানো হয়েছে। বেশ কয়েক স্থানে রয়েছে লাঙ্গলের পোস্টারও। গোটা শহরে বা পাহাড়ি সড়কগুলোতেও একটিও ধানের শীষের পোস্টার চোখে পড়েনি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে বিএনপি ছাড়াও অন্য আরেক প্রার্থীর কোন প্রচারণা চোখে পড়েনি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাশাপাশি নির্বাচনে অন্যতম ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউডিপিএফ) এর নতুন কুমার চাকমারও কোন প্রচারণা চোখে পড়েনি। তবে স্থানীয়রা বলছেন, 'ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এই জনপদে আঞ্চলিক শক্তিটি বরাবরই তৃতীয় অবস্থান নিয়ে থাকে।'

নৌকা প্রতীক নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার প্রচারণা সবচেয়ে বেশি এই অঞ্চলে। রামগড়, মাটিরাঙ্গা, দীঘিনালা ও খাগড়াছড়ি বাজারে নির্বাচনের যে প্রচারণা ও পোস্টার রয়েছে তার নব্বই ভাগই এই প্রার্থীর। বাজার রোডের সবগুলো ল্যাম্পপোস্টেই নৌকার প্রচারণায় ব্যবহৃত হচ্ছে। ১৫ তারিখ সন্ধ্যায় চাঁন্দের গাড়ি, পিক-আপ এবং মোটরসাইকেলে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে দীঘিনালা-খাগড়াছড়ি রোডে একটি প্রচার দল চোখে পড়ে। গাড়ি থেকে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী থিম সং এবং বিভিন্ন স্লোগান ভেসে আসছিল। এছাড়াও গাড়িটি পোস্টার এবং ফেস্টুন মোড়ানো।

এদিকে গত ১৩ ডিসেম্বর প্রচারণার সময় শহরের কদমতলি এলাকায় ধানের শীষ মার্কার প্রচারণার গাড়িবহরে হামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ জানিয়েছে বিএনপি প্রার্থীর সমর্থকরা। হামলায় গাড়ির কাঁচ, প্রচারণায় ব্যবহৃত মাইক ভাংচুর করা হয়। এ ঘটনার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছে জেলা বিএনপি।

একই দিনে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে প্রার্থী সোলায়মান আলম শেঠকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুল আলম রাসেল।

খাগড়াছড়ি আসনে পাঁচ জন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই আসনে অন্য প্রার্থী ইসলামী আন্দোলনের আব্দুল জব্বার গাজীরও কোন দৃশ্যমান প্রচারণা নেই।

এ সম্পর্কিত আরও খবর