সরিষা ক্ষেতে মধু আহরণ, ফলন বেশি লাভ দ্বিগুণ

বিবিধ, নির্বাচন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 19:48:31

রৌমারী উপজেলায় সরিষা ক্ষেতে মৌমাছির খামার দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। গত বছর হাতেগোনা কয়েকটি জমিতে মৌমাছির বাক্স স্থাপন করা হলেও এবার কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। লাভজনক হওয়াতে স্থানীয় ও দূরদুরান্ত থেকে মৌয়ালরা আসছে এখানে।

স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে, সরিষা ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করা মধু বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে। আর ক্ষেতে মৌমাছি বিচরণ করে পরাগায়নে সহায়তা করে ফলে সরিষার ফলনও হয় বেশি। কৃষি বিভাগ নানাভাবে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আগ্রহী করে তুলেছে সরিষা ক্ষেতে মৌমাছির খামার করার।

কৃষি অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য মতে, কোনো দুযোর্গ না হলে চলতি মৌসুমে রৌমারী থেকেই প্রায় ৪০ টন মধু পাওয়া যাবে। যার বর্তমান বাজার দর  প্রায় ১০ কোটি টাকা।

বন্যার কারণে আমন ধান নষ্ট হওয়ায় এবছর রৌমারীতে প্রচুর সরিষা আবাদ হয়েছে। সরিষা ক্ষেতে মৌমাছির খামার থাকলে স্বাভাবিক যে ফলন হয় তার চেয়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ফলন বাড়ে। সরিষার ফুলে মৌমাছি পরাগায়ন ঘটায় এতে সরিষার দানা বেশি হয় ফলনও বৃদ্ধিপায়।

রৌমারী উপজেলায় এবার ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। সরিষা চাষী ,মৌচাষী সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন গ্রামের বিস্তৃর্ণ জমিতে মৌমাছির বক্স বসানো হয়েছে। দুই হাজারের ওপরে বক্স রয়েছে। প্রতি বক্স থেকে গড়ে ২০ কেজি করে মধু পাওয়া যাবে। সে হিসেবে ৪০ টন মধু আসবে। বর্তমানে বাজারে প্রতি লিটার মধু ৫০০ টাকা করে বিক্রি করা যায়। এতে চলতি মৌসুমে  প্রায় ১০ কোটি টাকা আয় হবে মধু থেকে। রাজীবপুর উপজেলায় এবছর ১ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে  পাটাধোয়াপাড়া ও নয়াচর নতুন বাজার গ্রামে ২৪০ টি মৌবক্স স্থাপন করেছে সাতক্ষীরা থেকে আসা দুটি দল ।

সরেজমিনে সরিষা ক্ষেতের মধু খামারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুঁজির অভাব, আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব এবং সুষ্ঠ বিপনন ব্যবস্থা না থাকায় খামারিরা সমস্যায় পড়ছে। সবচেয়ে বড় যে সমস্যা সেটা হলো পুঁজি। পাটাধোয়া পাড়া গ্রামের আফজাল হোসেন বলেন, ক্ষেতে খামার গড়ে তুলতে অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমাদের হাতে প্রয়োজনীয় টাকা না থাকায় খামার করতে পারছি না। সাতক্ষীরা থেকে আমাদের এলাকায় আইস্যা মানুষ মধু নিয়া যায়।

মৌ খামারীদের দেয়া তথ্যে জানা গেছে, প্রতিটি বাক্সে ৮/১০টি করে মোমের ফ্রেম থাকে। মোমের ফ্রেমে মাছি মধু জমা করে আর রানী মাছি ডিম দেয়। ফ্রেমগুলো মধুতে ভরে যাওয়ার পর বাক্স থেকে ফ্রেমগুলো খুলে বিশেষ প্রক্রিয়ায় মাছি মুক্ত করে মধু আলাদা করা হয়। এই বাক্স ভর্তি মৌমাছি কিনতে হয়। বাজারে প্রতি লিটার মধু ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা বিক্রি করা যায়।

সরিষা ক্ষেতে গিয়ে দেখা গেছে, সারি বদ্ধভাবে বসানো হয়েছে মৌমাছির বাক্স। হাজার হাজার মৌমাছি হলুদ রঙের সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে বাক্সে জমা করছে। ৭/৮ দিন পর পর ওই সব বাক্স থেকে বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রতি বাক্সে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার মৌমাছি আর একটি মাত্র রানী মৌমাছি থাকে। আবু তাহের নামের এক খামারি বলেন, এই মৌমাছির নাম ‘এফিস মিলি ফেরা’ জাতের মাছি। সারাদিন মাছিগুলো সরিষা ফুলে পরাগায়ন ঘটায় এবং মধু সংগ্রহ করে। প্রায় ৩ কিলোমিটার দুরের সরিষা ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহ করতে পারে মৌমাছি।

রৌমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ফুলের ওপর নির্ভর করে মধুর স্বাদ ভিন্ন হয়। বাজারে সরিষার ফুল থেকে যে মধু পাওয়া তার দাম একটু কম। রৌমারীর বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রতি বছর যে পরিমাণ সরিষার আবাদ হয় তাতে মধু চাষে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ায় উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। এই বিষয়টি নিয়ে মৌচাষীও সরিষা চাষীদের পরামর্শসহ দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন আমরা কৃষি বিভাগ মাঠ পর্যায়ে জরিপ করে জানতে পেরেছি প্রায় ৪০ হাজার লিটার মধু পাওয়া যাবে যার বাজার মূল্যে প্রায় ২০ কোটি  ক্ষেতে মৌমাছি বিচরণ করে মধু সংগ্রহের ফলে পরাগায়ন ভাল হয় সরিষার ফলনও বাড়ে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর