আওয়ামী লীগের ইশতেহার মঙ্গলবার, থাকছে চমক!

বিবিধ, নির্বাচন

রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-22 08:28:31

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চমক নিয়ে হাজির হচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে প্রার্থীর মত ইশতেহারেও চমক দেখাতে চান তারা। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা শেষে মঙ্গলবার (১৮ ডিসেম্বর) এবারের নির্বাচনি ইশতেহার প্রকাশ করা হবে। এদিন সকাল ১০টায় রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁয়ে এক অনুষ্ঠানে জাতির সামনে ইশতেহার তুলে ধরবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ইশতেহার হবে সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশের রোডম্যাপ। একটি উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপরেখা তুলে ধরা হবে এতে।

আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী পর্যায় থেকে জানা যায়, ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ হচ্ছে ইশতেহারের স্লোগান। ইশতেহারে থাকবে সরকারের গত দুই মেয়াদের সাফল্যচিত্র। ২০২১, ২০৩০, ২০৪০, ২০৭১ এবং ২১০০ এরকম কয়েকটি ধাপে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায় থাকবে তার সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা তুলে ধরা থাকবে। ডেল্টা প্ল্যানে আগামী ২১০০ সালে বাংলাদেশ কোথায় অবস্থান করবে সেই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বদ্বীপ বা ডেল্টা পরিকল্পনা, ব্লু ইকোনোমি ও তরুণদের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে ইশতেহারে বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

ইশতেহার কমিটির আহ্বায়ক ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বার্তা২৪কে বলেন, আওয়ামী লীগের এবারের ইশতেহারে আগামীর বাংলাদেশের কথা তুলে ধরা হবে। আগামী ১০০ বছরে বাংলাদেশের অবস্থান কী হবে তা স্পষ্ট করা হবে ঘোষণা পত্রে। বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় তরুণদের সম্পৃক্ত করাসহ জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিশেষ পরিকল্পনাগুলোর কথা বলা হয়েছে। এছাড়া, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালনে বছর দু’টি নিয়ে আওয়ামী লীগের বিশেষ পরিকল্পনা তুলে ধরা হবে ইশতেহারে।

সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের ইশতেহারে প্রাধান্য পাওয়া বিষয়গুলোকে মোট ৭টি অধ্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। অঙ্গীকারে শুরু হয়ে পটভূমি, তৃতীয় ভাগে থাকছে আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত দুই মেয়াদের সাফল্যচিত্র।

দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক চিত্র জাতির সামনে তুলে ধরা হয়েছে ইশতেহারে। পঞ্চম অধ্যায়ে জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের অবস্থান গত দশ বছরে কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে তা স্থান পেয়েছে। এরপর ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা। এরপর উপরের ছয় অধ্যায়ের সারসংক্ষেপ তুলে ধরে জাতির কাছে নৌকায় ভোট চাওয়ার মধ্যদিয়ে ইশতেহার ৬৪তম পৃষ্ঠায় শেষ হয়েছে।

ইশতেহারের অঙ্গীকারনামা ঠিক করতে প্রতিপাদ্য ধরা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্ধৃতি: ‘এ স্বাধীনতা আমার ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি আমার মানুষ পেট ভরে ভাত না খায়। এই স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মা-বোনেরা কাপড় না পায়। এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি এ দেশের মানুষ, যারা আমার যুবক শ্রেণি আছে তারা চাকরি না পায় বা কাজ না পায়।’

ইশতেহারে অনেকগুলো অঙ্গীকার করা হয়েছে যার মধ্যে আছে-আমার গ্রাম-আমার শহর: গ্রাম পরিকল্পনায়, প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণসহ ‘তারুণ্যের শক্তি, বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’ শিরোনামে থাকবে তরুণদের নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা। যাতে শিক্ষিত বেকার তরুণদের জন্য একটি এবং গ্রামের তরুণদের জন্য আরেকটি আলাদা পরিকল্পনা থাকবে। তরুণ-যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা; দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ; নারীর ক্ষমতায়ন; লিঙ্গ সমতা ও শিশু কল্যাণ; পুষ্টিসম্মত ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা; সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ নির্মূল; মেগা প্রজেক্টসমূহের দ্রুত ও মানসম্মত বাস্তবায়নের মতো বিষয়গুলো।

থাকছে মেগা প্রকল্পগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, ব্লু ইকোনোমি, ব-দ্বীপ বা ডেল্টা পরিকল্পনা, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, বিদ্যুৎ-জ্বালানি, সার্বিক উন্নয়নে তথ্য প্রযুক্তির অধিকতর ব্যবহার, শিক্ষার মান বৃদ্ধি, আধুনিক কৃষি ব্যবস্থার প্রচলন, টেকসই উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা ও শিশুকল্যাণ, নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা, সন্ত্রাস-সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ ও মাদক নির্মূল; নিরাপদ সড়ক ও দারিদ্র্য নির্মূল উল্লেখ থাকবে ‘বিশেষ অগ্রাধিকার’ হিসেবে। পাশাপাশি গণতন্ত্র, নির্বাচন ও কার্যকর সংসদ, আইনের শাসন ও মানবাধিকার সুরক্ষা, দক্ষ, সেবামুখী ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন, জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গড়ে তোলা, শিল্প উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, জলবায়ু পরিবর্তন ও সুরক্ষা, মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ, ক্রীড়া, সংস্কৃতি, প্রতিরক্ষাসহ অন্যান্য খাতে থাকবে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা।

২০০৮ সালের ‘দিন বদলের সনদ’ ও ২০১৪ সালের ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ স্লোগানে ইশতেহার প্রকাশ করে জনসাধারণের ব্যাপক সাড়া পেয়েছিলো আওয়ামী লীগ। তারা আশা করছে এবারো ইশতেহার দিয়ে চমক দেখাতে পারবেন তারা। আওয়ামী লীগের ইশতেহার কমিটির সদস্য সায়েম খান বলেন, এবারের ইশতেহার দিয়েও আওয়ামী লীগ জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করে চমক দেখাবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর