আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চাহিদার অর্ধেক অগ্রিম দিয়েছে ইসি

বিবিধ, নির্বাচন

ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | 2023-07-30 17:36:31

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আনসার-ভিডিপি, কোস্টগার্ড, এপিবিএনসহ বিপুল সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে। বিগত সময়ের তুলনায় বাড়তি লোকবল নিয়োগসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় বড় বাজেট চায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক খসড়া বাজেটে ৪১০ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ রাখা হলেও তার পরিমাণ বাড়ছে। ইসি আইন-শৃঙ্খলা খাতে যে বরাদ্দ রেখেছে সেনাবাহিনী বাদে সেই অর্থ অন্যান্য বাহিনীর জন্য দিতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর জন্য আলাদাভাবে বাজেটের প্রয়োজন হবে। এদিকে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আনসার-ভিডিপি, কোস্টগার্ডের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের অর্ধেক টাকা আগাম প্রদান করেছে কমিশন।

ইসির কর্মকর্তারা জানান, ইতোমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জন্য ২৭১ কোটি ৮৩ লাখ ৩২ হাজার টাকা ছাড় দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশকে ৬৩ কোটি ২২ লাখ ৮৪ হাজার, র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ানকে (র‌্যাব) ১০ কোটি ২০ লাখ ২৯ হাজার, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডকে ১ কোটি ৫৬ লাখ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) ৩৩ কোটি দুই লাখ ৪৩ হাজার, আনসার ও ভিডিপি ১৬৩ কোটি ৮১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে।

পুলিশের জন্য বরাদ্দকৃত ৬৩ কোটি ২২ লাখ ৮৪ হাজার টাকার মধ্যে খোরাকি বাবদ ৩৬ কোটি ১৬ লাখ ৪৭ হাজার টাকা, জ্বালানি বাবদ ১৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, মনোহরি দ্রব্যাদি বাবদ ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা এবং আপ্যায়ন ব্যয় ৩ কোটি ১ লাখ ৩৭ হাজার, যানবাহন (ভাড়া ও মেরামত) বাবদ ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে।

বিজিবি'র জন্য আগাম ৩৩ কোটি দুই লাখ ৪৩ হাজার বরাদ্দের মধ্যে খোরাকি খাতে ১১ কোটি ৫০ লাখ ৬৫ হাজার, জ্বালানি খাতে ৩ কোটি ৩৫ লাখ, মনোহরি ২১ লাখ ৩৩ হাজার, আপ্যায়ন ব্যয় ৩৩ লাখ ১৫ হাজার, যানবাহন ১৬ কোটি তিন লাখ ৭১ হাজার, ব্যবস্থাপনা ব্যয় ১ কোটি ৫৮ লাখ ৫৭ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে।

র‌্যাবের জন্য আগাম ১০ কোটি ২০ লাখ ২৯ হাজার টাকা বরাদ্দের মধ্যে খোরাকি খাতে ৩ কোটি ৬৪ লাখ ৮৯ হাজার, জ্বালানি খাতে ৩ কোটি ২৪ লাখ ৬৪ হাজার, মনোহরি ৫০ লাখ, আপ্যায়ন ব্যয় ২৮ লাখ ৭৫ হাজার, যানবাহন ২ কোটি ৫২ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে।

বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জন্য আগাম ১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বরাদ্দের মধ্যে খোরাকি খাতে ২৫ লাখ, জ্বালানি খাতে ৮৪ লাখ, মনোহরি ৩ লাখ, আপ্যায়ন ব্যয় ২ লাখ, যানবাহন ৪২ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে।

আনসার ও ভিডিপির জন্য বরাদ্দকৃত ১৬৩ কোটি ৮১ লাখ ৭৫ হাজার টাকার মধ্যে খোরাকি বাবদ ১৪১ কোটি ৩৭ লাখ ৫১ হাজার টাকা, জ্বালানি বাবদ ৫ কোটি ৪৪ লাখ ৫৭ হাজার টাকা, মনোহরি দ্রব্যাদি বাবদ ৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, আপ্যায়ন ব্যয় ১২ কোটি ১৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে পুলিশ চারদিন থাকলেও এবার সাত দিন থাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ সদস্যরা নির্বাচনের সময়ে থাকবেন চারদিন, মোতায়েনের পূর্বে দুইদিন ও প্রত্যাগমনের জন্য একদিন এই মোট সাত দিন ধরে ৪২৪ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। তবে কমিশনের প্রাথমিক বাজেটে ১২০ কোটি টাকা ধরা হলেও, পরে এ বাহিনীর জন্য বরাদ্দ দেড়শ কোটি টাকার কিছু বেশি রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। নির্বাচনে পুলিশের ১ লাখ ৮৪ হাজার ৬৫৭জন মোতায়েন থাকবেন। এর মধ্যে এসপি থেকে তদুর্ধ্ব কর্মকর্তা ৩৪৯ জন রয়েছেন। পুলিশের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের অর্ধেক নির্বাচনের আগে ও বাকি অর্ধেক অর্থ নির্বাচনের পরে দেওয়া হবে।

আর আনসার সদস্যদের জন্য প্রায় দুইশ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কিন্তু তারা এর দ্বিগুণ অর্থ বরাদ্দ চায়। এর কারণ হিসেবে তারা বলছে, ভোটের মাঠে তাদের ছয়দিন থাকতে হবে। তাদের যে ভাতার হার নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্য তারা তার দ্বিগুণ অর্থ দাবি করছে। তাদের জন্য দুইশ কোটি টাকা দেওয়ার জন্য কমিশনের প্রাথমিক বাজেটে রাখা হলেও তারা চাইছে ৪৪৩ কোটি টাকা। কমিশন তাদের ছয়দিনের টাকাই দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। তবে তাদের জন্য বরাদ্দ দুইশ কোটি টাকাই থাকছে। তাদের জন্য বরাদ্দকৃত টাকার সম্পূর্ণ অর্থই আগাম পরিশোধ করা হবে।

অন্যদিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কমিশনের কাছে ৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে। প্রথম দিকে কমিশনের কাছে দেওয়া এক চিঠিতে তারা ৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী বৈঠকে তা বেড়ে ৭০ কোটিতে উঠে আসে। তবে কমিশনের পক্ষ থেকে তাদের জন্য ৩০ কোটি টাকা বাজেট রাখা হয়েছে। আলোচনা সাপেক্ষে তা বেড়ে ৩৫ কোটি টাকা হতে পারে। তাদের জন্য বরাদ্দের অর্ধেক টাকা আগাম পরিশোধ করা হবে। বাকি টাকা নির্বাচনের পর সমন্বয় করা হবে।

এ ছাড়া নির্বাচনে কোস্টগার্ডের সদস্যরা কক্সবাজার, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালীসহ উপকূলীয় এলাকায় দায়িত্ব পালন করবেন। তারাও মাঠে সাতদিন অবস্থান করবেন। এ বাহিনীর জন্য কমিশন ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে। সম্প্রতি এক বৈঠকে তারা কিছু দাবি-দাওয়া রেখেছে। তবে কমিশন তাদের অর্থ বরাদ্দ বাড়াতে সম্মত নয় বলে জানা গেছে। তারাও নির্বাচনের পূর্বে বরাদ্দকৃত অর্থের অর্ধেক এবং নির্বাচনের পরে বাকি অর্ধেক অর্থ পাবেন।

আর সশস্ত্র বাহিনীর চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ দেবে কমিশন। ইতোমধ্যে তারা একটি অনুলিপি কমিশনে দিয়েছে। পরবর্তীতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্তের পর চূড়ান্ত বাজেট দেবেন তারা।

সম্প্রতি ইসির সঙ্গে এক বৈঠকে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, বিগত নির্বাচনে মোট কেন্দ্র ছিল ৩৭ হাজার ৭০৭ কিছু বেশি। কিন্তু নির্বাচন হয়েছে ১৮ হাজার ২০৮ কেন্দ্রে। বাকি নির্বাচনী আসনে একক প্রার্থী জয়ী হওয়া ভোটের প্রয়োজন হয়নি। ফলে বাড়তি লোকবল প্রয়োজন পড়েনি। কিন্তু এবার ৪০ হাজার ১৯৯টি ভোট কেন্দ্র রয়েছে। হিসেব অনুযায়ী এবার ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা দিগুণের চেয়েও বেশি। ফলে দিগুণ জনবল প্রয়োজন। এ ছাড়া বিগত নির্বাচনের তুলনায় এবার ভাতার পরিমাণ বেড়েছে। তাই বিগত সময়ের হিসেব অনুযায়ী বরাদ্দ দিলে সেটি বন্টনে সমস্যা হবে।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের নির্বাচনে সশস্ত্রবাহিনীর জন্য ৫৭ কোটি ২৬ লাখ ৭৪ হাজার ৭৪০ টাকা। পুলিশের জন্য ৫৯ কোটি ৩৮ লাখ ৩৭ হাজার ২৭৯ টাকা, বিজিবির জন্য ১৭ কোটি ১৪ লাখ ৭৬ হাজার ৩৩৫ টাকা, আনসার বাহিনীর জন্য ৬৩ কোটি ২১ লাখ ৯৯ হাজার ৩০২ টাকা বরাদ্দ ছিল।

এবারই প্রথমবারের মতো ভোটকেন্দ্রের পাহারায় নির্বাচনে নামানো হচ্ছে গ্রাম পুলিশ (দফাদার ও চৌকিদার) তারা মাঠে থাকবেন দুই দিনের জন্য। ভোটের মাঠে দুই দিন দায়িত্ব পালন করবেন প্রায় ৪৫ হাজার গ্রাম পুলিশ। দুই দিনে তাদের জনপ্রতি এক হাজার টাকা ভাতা দেয়া হবে।

তফসিল অনুসারে, আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর