ঢাকা-১৯: মুখে মুখে নৌকা, তবে লড়াই হবে ব্যালটে

বিবিধ, নির্বাচন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪ | 2023-08-10 05:28:18

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর বাকি ১১ দিন। সারাদেশে চলছে বিভিন্ন দল ও জোট প্রার্থীদের প্রচারণা। ঢাকা-১৯ আসনেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমান এবং বিএনপি’র প্রার্থী দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন। তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জোর প্রচারণা চালালেও মাঠে নামতে পারছেন না বিএনপি প্রার্থী। তবুও পিছিয়ে নেই ধানের শীষের প্রচারণা। কারণ স্থানীয়দের কাছে বিএনপি প্রার্থীর রয়েছে বিপুল জনপ্রিয়তা। ফলে মূল লড়াইটা ব্যালটে হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা।

মঙ্গলবার আসনটির বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় লোকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। শিমুলিয়া, ধামসোনা, পাথালিয়া, ইয়ারপুর, আশুলিয়া, সাভার, বিরুলিয়া এবং বনগাঁওসহ ৯টি ইউনিয়ন নিয়ে ঢাকা-১৯ আসন গঠিত। এই আসনে মোট ভোটার ১৪ লাখ ৪২ হাজার ৮৮৫ জন।

সরেজমিনে সাভার বাসস্ট্যান্ড, গেন্ডা, ব্যাংক কলোনি এলাকার ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয়রা মুখে মুখে আওয়ামী লীগের সমর্থক বললেও তারা মূলত বিএনপি প্রার্থীকে সমর্থন করেন। কারণ প্রার্থী হিসেবে বর্তমান সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমান খুব ভালো অবস্থানে নেই। স্থানীয়দের দাবি ডা. এনামুর রহমানের চেয়ে আওয়ামী লীগ নেতা তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ বা মুরাদ জং সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। তিনি যদি দলীয় মনোনয়ন পেতেন তাহলে একচেটিয়া ভোট পেয়ে নৌকা বিজয়ী হতো। যদিও ডা. এনামুর রহমানের ক্লিন ইমেজ আছে এবং তিনি বর্তমান সংসদ সদস্য। তারপরও বিএনপি'র প্রার্থী দেওয়ান মো. সালাউদ্দিনের সঙ্গে তার তুমুল লড়াই হবে।

এলাকাবাসীর দাবি রানা প্লাজা ধ্বসের পর এনামুর রহমান তার মেডিকেল কলেজে আহতদের সেবা দিয়ে জনপ্রিয়তা পান। তবে তিনি রাজনীতিবীদ না হওয়ায় ভোটের মাঠে কতটুকু সাফল্য পাবেন সেটাই দেখার বিষয়। আগামী নির্বাচনে তাকে জিততে হলে বিএনপি প্রার্থীর সাথে ভোট লড়াই করেই জিততে হবে।

সাভার ব্যাংক কলোনি এলাকার বাসিন্দা শহীদুর রহমান আরাফাত বার্তা২৪কে বলেন, ‘এলাকায় মুরাদ জং অনেক জনপ্রিয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ তাকে মনোনয়ন না দিয়ে এনামুর রহমানকে দিয়েছে। এনামুর রহমান মূলত একজন ডাক্তার। উনি সেভাবে রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন না। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য হন। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে নির্বাচিত হন বিএনপি প্রার্থী সালাউদ্দিন। তাই আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ হলে সালাউদ্দিনের পাসের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রভাব থাকলেও নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। তবে এনামুর রহমান মানুষ হিসেবে বেশ ভালো।’

সাভার উপজেলার হকার্স লীগের সভাপতি মো. সেলিম বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে এনামুর রহমান বিপুল ভোটে জয়ী হবেন। গত ৫ বছরে তিনি রাস্তাঘাটসহ এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এলাকার মানুষের কাছে এনাম সাহেব বটগাছের মতো। রানা প্লাজা ধ্বসের পর যে উদারতা দেখিয়েছেন তা এলাকার মানুষ মনে রেখেছে। প্রধানমন্ত্রীও ভেবে দেখেছেন উনাকে মনোনয়ন দিলে ভালো করবেন।’

সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকার চায়ের দোকানি মো. লিটন বলেন, ‘স্থানীয়রা বর্তমান সরকারের ওপর সন্তুষ্ট নয়। তাই এবার ভোট পাবেন বিএনপি প্রার্থী। আওয়ামী লীগের হয়ে প্রচারণা চালালেও সবাই ভেতরে ভেতরে বিএনপির সমর্থক। তাই মূল লড়াইটা হবে ব্যালটে। তবে এনামুর রহমান বেশ ভালো মানুষ। কিন্তু তাকে এলাকার মানুষ খুব চেনে না। অন্যদিকে সালাউদ্দিন ভাই অলরাউন্ডার। নিম্ন, মধ্যবিত্ত যাই বলেন, সবাই মুখে বলে আওয়ামী লীগ কিন্তু ভোট দেবে বিএনপিতে। বিএনপির সমর্থকও বেশি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভাই, ব্যবসা করি, পিট বাচাইতে হবে তো। এটাতো বোঝেনই। এলাকায় আপনি গিয়ে জিজ্ঞাসা করবেন সবাই বলবে নৌকায় ভোট দেবে। কিন্তু ৯৫ শতাংশ মানুষ ধানের শীষে ভোট দেবে। এনাম ভাই কাজ করেছেন সত্য কিন্তু আওয়ামী লীগের ওপর মানুষ বিরক্ত।’

এলাকা ঘুরে সর্বত্র নৌকার পোস্টার দেখা গেলেও ধানের শীষের পোস্টার চোখে পড়েনি। বিএনপির নেতা-কর্মীদের দাবি তারা মাঠে নামলেই আওয়ামী লীগের নেতারা হামলা করে। পোস্টার লাগালেও সেগুলো খুলে ফেলে। তাছাড়া সাংগঠনিক ভাবেও দলটি শক্ত অবস্থানে নেই।

এ বিষয়ে মতামত জানতে বিএনপি প্রার্থী দেওয়ান মো. সালাউদ্দিনকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. এনামুর রহমান বার্তা২৪কে বলেন, ‘সারাদিন প্রচারণা চালাচ্ছি। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে দারুণ সাড়াও পাচ্ছি। অনেকে বলছেন, এই রাস্তা, ওই মসজিদ-মন্দির আপনি করে দিয়েছেন। ফলে আমি তাদের বলেছি, গত পাঁচ বছর আপনাদের দিয়েছি, বিনিময়ে আগামী নির্বাচনে আমাকে একটা ভোট দিন।’

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর