ভাসমানদের কাছে ভোট যেন ‘ প্রতিশ্রুতি ও আক্ষেপের বোঝা’

বিবিধ, নির্বাচন

হাদিদ মো. জাবীর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা, বার্তা২৪.কম | 2023-08-13 05:13:45

‘ভোট দিয়া হইব কি?, আমরা তো রোহিঙ্গাদের চাইতেও অবহেলিত, তাগো তো তিনবেলা খাওনের জোগাড় আছে, আমাগো তো থাকবার জায়গাই নাই’।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আক্ষেপের স্বরে কথাগুলো বলেন মিরপুরের ভ্রাম্যমাণ বস্তিতে থাকা হাসেম মিয়া।

ভোটার তিনি, তাই তার কাছে বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা ভোট চাইতে আসে, কিন্তু গত ১০ বছর ধরে বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ ভাবেই বসবাস করছেন হাসেম। স্থায়ী বাসস্থানের প্রতিশ্রুতি তিনি প্রত্যেক বার পেয়েছেন, কিন্তু এখনও বাস করেন খোলা আকাশের নিচে। তাই আর কাউকে বিশ্বাস করেন না হাসেম মিয়া।

আসন্ন নির্বাচনের ব্যাপারে সাধারণ শ্রমজীবী মানুষদের সাথে কথা বললে এমন সব চাপা ক্ষোভ আর হতাশাই বেরিয়ে আসে। কথা বলে জানা গেছে, শ্রমজীবী মানুষের ভোট নিয়ে আক্ষেপের কথা।

দরজায় কড়া নাড়ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন । আসন্ন  নির্বাচন নিয়ে চলছে জোড় প্রস্তুতি, বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা ভোট চাইতে যাচ্ছেন জনগণের দোরগোড়ায়। শীত, বৃষ্টি,  ঠাণ্ডা বাতাস উপেক্ষা করে প্রার্থীরা চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের নির্বাচনী প্রচারণা। নানা উন্নয়নের পাশাপাশি দিচ্ছেন তাদের ভাগ্য উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি। প্রাপ্ত বয়স্ক, ছাত্র, শিক্ষক, কর্মজীবী, শ্রমজীবী, খেটে খাওয়া মানুষসহ নানা শ্রেণির ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। লক্ষ একটাই, ভোট চাই তাদের।

কিন্তু ভোটের পর নির্বাচিত প্রার্থীরা কতটা কথা রাখতে পারেন বা রাখতে পেরেছেন? এমন প্রশ্ন ছিল খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষদের কাছে।

উত্তরে সবার মোটামুটি একি কথা "ভোট বড়লোকের জন্য, আমাদের গরীবদের জায়গা নাই সেখানে"।

শীতের পোষাক বিক্রেতা নজরুল সরকার বললেন "ভোট নিয়া মাথা ব্যথা নাই, যে আহে তারেই চলব। আমি খালি ব্যবসাডা ভালভাবে করতে চাই।

মিরপুর অস্থায়ী বস্তিতে থাকেন বারেক মিয়াঁ। তারও আক্ষেপ প্রতিশ্রুতি পাওয়া সত্ত্বেও এখনো তিনি ঘর তোলার জন্য জমি পাননি। তিনি বলেন "আমি তো সারাজীবন রাস্তায় কাটাইয়া গেলাম, কিন্তু আমার প্রজম্ম যারা তারা কি বস্তিতেই থাকবো" প্রশ্ন তার।

রিকশা চালান সেলিম । নির্বাচনের ব্যাপারে কথা বললে তিনি জানান পাঁচ বছর পর ভোট আইছে, ভোট দিমু, তয় কারে ভোট দিমু এখনো জানি না, আর কয়দিন দেহি, কে কি কয়, তহন ঠিক করুম, তয় ভোট দিমু"।

নির্বাচনের অবস্থা কি তা জানতে চাইলে সেলিম বলেন, "ঢাকা শহর ঘুরি সারাদিন, যা দেহি ইলেকশন ঠিকমত হইবো না"।

রাজধানীতে মাছ বিক্রি করেন আলম , তিনি বললেন "আমার ভোট গ্রামে, কিন্তু যামু না ভোট দিতে, যেই একদিন ভোট দিমু তাতে আমার ঘরে দুইদিন ভাত বন্ধ থাকবো"। 

রাজধানী ঘুরে এমন অনেক শ্রমজীবী মানুষের সাথে কথা বলে নির্বাচনের একই চিত্র পাওয়া গেলো। ভোট নিয়ে তাদের তেমন কোন ভাবনা নেই। তারা শুধু চান দুবেলা খেয়ে পড়ে ভাল থাকতে। নির্বাচন নিয়ে তাদের ভাববার সময় কই । কিন্তু তারপরও অনেকেই বলেছেন, নিজ এলাকায় যাবেন ভোট দিতে। প্রার্থীও মনে মনে ঠিক করে রেখেছেন। হয়তো তাদের মনে এখনো কিছুটা হলেও আশা আছে " যদি একটু পরিবর্তন হয়"।

এ সম্পর্কিত আরও খবর