ভোট দিতে না পারার কষ্ট মক্কা প্রবাসীদের

বিবিধ, নির্বাচন

ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪. কম | 2023-08-26 03:56:00

'মারহাবা ইয়া হাজি, মারহাবা' আহ্বানে মসজিদুল হারামে নামাজ শেষে ফিরে আসার সময় রাস্তার দুই পাশ থেকে মুসুল্লিদের  ডাকা হয়। হজ বা ওমরাহ করতে গেলে এ ডাক সবাই শুনতে পান। ফিক্সড প্রাইসের দোকানের মালিক ও কর্মী চিৎকার করে ডাকেন হজ পালনকারী কাস্টমার।

দোকানগুলোও অদ্ভুত। কোনটি শুধু দুই রিয়াল দামের জিনিসে ঠাসা। কোনটি পাঁচ বা দশ রিয়ালের সামগ্রী। যা-ই কেনা হোক, দাম ফিক্সড। দেশ-বিদেশের হাজিগণ স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সময় এসব দোকানের খেলনা, কাপড়, পোশাক দেদার কেনেন।

মক্কার মসজিদুল হারামের পাশে মিসফালাহ এলাকার মধ্য দিয়ে ইবরাহিম খলিল রোড এবং হিজরা রোডের দোকানগুলো বাংলাদেশি অধ্যুষিত। বৃহত্তর চট্টগ্রাম, নোয়াখালি, কুমিল্লা, ফরিদপুরের প্রবাসী গিজগিজ করছে এখানে। 'সৌদিতে এখন প্রায় আঠারো লাখ বাংলাদেশি ব্যবসা বা চাকরিরত আছেন। অধিকাংশই রাজধানী রিয়াদ ও অন্যান্য শিল্প এলাকায় কর্মরত। মক্কা,  মদিনায় অল্প সংখ্যক বাংলাদেশি আছেন', বললেন মক্কার ফল ব্যবসায়ী মাদারিপুরের শিবচরের আবু তাহের।

আকামা বা বসবাসের পারমিট খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যবসা করে বিশেষ লাভ হচ্ছে না', জানান তিনি। চকরিয়ায় সুলেমান মিয়া মিসফালাহ এলাকায় গ্রোসারি চালান। তিনিও জানালেন একই কথা, 'দিনে দিনে মক্কার বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর সংখ্যা কমছে।'

ব্যবসা-বাণিজ্য যেমনই হোক দেশের খবরে সব বাংলাদেশি উদগ্রীব। দেশে যে জমজমাট ভোট হচ্ছে, তা সকলেই ওয়াকিবহাল। চট্টগ্রামের বাঁশখালির ফরিদ মিয়া হিজরা রোডে স্টেশনারিজ ব্যবসা করেন। তার এলাকায় কে কে প্রার্থী হয়েছেন,  কার অবস্থান কেমন?  তা গড়গড় করে বললেন। 'ইন্টারনেটের সুবাদে ঘণ্টায় ঘণ্টায় দেশের বাড়িতে কথা বলি।  তাৎক্ষণিক সব খবর পেয়ে যাই', জানান তিনি।

মক্কার হোটেল ব্যবসায়ী হাটহাজারির আবুল কাশেম অবশ্য নির্বাচনের উত্তাপ-উত্তেজনার খবরে উদ্বিগ্ন। 'অনলাইন পোর্টালে মুহূর্তে খবর পাই।  বেশি পাচ্ছি বিভিন্ন দলের মারপিটের খবর। এজন্য নির্বাচন নিয়ে চিন্তায় আছি।' এমন উৎকণ্ঠা অনেকের মধ্যেই দেখা যাচ্ছে।

সবচেয়ে বেশি আফসোস ভোট দিতে না পারার জন্য। ছুটি না পাওয়ায় কিংবা ব্যবসার সিজন শুরু হওয়ায় মক্কা প্রবাসীরা বাড়ি যেতে পারছেন না। ভোটের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনে অংশ নিতে না পারায় তারা মনের কষ্টে আছেন। 'প্রার্থীরা সবাই পরিচিত।  কেউ কেউ আত্মীয়। তারা আশা করেন আমরা ভোটের সময় থাকবো। কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছে না ', দুঃখ করে বললেন টাঙ্গাইলের তোফাজ্জল হোসেন, যিনি মিসফালাহর লাগোয়া আবু তামাঞ্জা এলাকায় কাপড় ও পোষাকের ব্যবসা করেন।

ভোটে অংশ নিতে দেশে যেতে না পারলেও মক্কার প্রবাসীরা এলাকার পছন্দনীয় প্রার্থীর খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। সাধ্যমতো আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতাও করছেন। মনে প্রাণে চাচ্ছে নিজের প্রার্থী বিজয়ী হোক। এজন্য ফোনে জনসংযোগ ও ক্যাম্পেইন করছেন প্রবাসীরা।

প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিয়ে যে একটি দাবি আছে, এ সম্পর্কে মক্কার বাংলাদেশিরা বিশেষ কিছুই জানেন না। প্রবাসী ভোটাধিকার আন্দোলন প্রসঙ্গে তাদের কোনো ধারণা নেই। 'বিদেশে থেকেও দেশের নির্বাচনে ভোট দিতে পারলে তো খুবই ভালো হয়। মনের কষ্ট অনেক কমবে তাহলে', হোটেল মালিক সৈয়দ আহমদ খুশি মনে জানান।      

সৌদি আরবের আঠারো লাখ আর বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা কয়েক কোটি প্রবাসীর ভোটাধিকারের প্রশ্নটি বাংলাদেশের নির্বাচনে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বাড়ছে। সামনের নির্বাচনে এই বিপুল প্রবাসী ভোটারের ভোটাধিকারের বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনা করা দরকার।

এ সম্পর্কিত আরও খবর