ঢাকা-৩: উন্নয়ন প্রচারে এগিয়ে বিপু, মাঠে নেই গয়েশ্বর

বিবিধ, নির্বাচন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-12-28 17:39:22

আগানগর সিনেমা হলের সামনে থেকে শুরু করে, ছোট মসজিদ রোড, আমবাগিচা, বৌ-বাজার, লবাসাধু রোড, তানকা গার্মেন্টস, নদীধারা ও বাবর আলী রোড। পথের হিসাবে মিটার দিয়ে মাপলে প্রায় তিন কিলোমিটার ছাড়িয়ে যাবে।

শনিবার (২২ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় শুরু করে পুরো পথ পায়ে হেঁটে ক্যাম্পেইন করেন নসরুল হামিদ বিপু। এসব রোড ধরে যখন তিনি হাঁটছিলেন তার মাথার ওপর ছাতার মতো নৌকা মার্কার নির্বাচনী পোস্টার। পোস্টারের আধিক্য ভেদ করে সূর্যের আলো মাটিতে ঠিকমতো পৌঁছতে পারছে না। শুধু একটি নির্দিষ্ট রোড নয়, কেরানীগঞ্জের প্রায় সব অলি-গলির একই অবস্থা।

 

ঠিক ভোটের দিন কেন্দ্রের চারপাশে যেভাবে প্রার্থীরা ঠাসাঠাসি করে পোস্টার ঝুলায়। কেরানীগঞ্জে তেমনি এককভাবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পোস্টার শোভা পাচ্ছে। মাঝে মাঝে রয়েছে হাতপাখার পোস্টার। ঢাকা-৩ (কেরানীগঞ্জ) আসনে এই যখন নৌকার মার্কার প্রার্থীর অবস্থা। ঠিক বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছেন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের।

পুরো শহরে কোথাও তার পোস্টার চোখে পড়েনি। আবার তার পক্ষে কোনো প্রচারণা কিংবা মাইকিংয়ের আওয়াজও শোনা যায়নি। বার্তা২৪.কম-এর পক্ষ থেকে বিএনপির এই হেভিওয়েট প্রার্থীকে একাধিক দফায় ফোন দিয়ে তবেই পাওয়া যায়।

তার অবস্থান ও দিনের কর্মসূচি জানতে চাইলে বলেন, এখন ঢাকায় আছি। আজ (২২ ডিসেম্বর) কোনো ক্যাম্পেইন নেই। রোববারের (২৩ ডিসেম্বর) কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন- ভাবছি, এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারছি না। পোস্টার না থাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, সারাদেশে কোথাও কি পোস্টার রয়েছে?

প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, এই আসনে কোথাও কোনো নির্বাচনী সহিংসতা নেই। সব প্রার্থী তাদের নির্বাচনী ক্যাম্পেইন করতে পারছে। যদি বাঁধা দেওয়া হতো তাহলে কিন্তু মিডিয়ায় আসতো। তাদের পোস্টার কেন নেই সে বিষয়ে তারাই ভালো বলতে পারবে। আমাদের পোস্টার জনগণ এবং কর্মীরা লাগাচ্ছে। তাদের হয়তো কর্মীই নেই।

টানা ১০ বছরে সংসদ সদস্য ও শেষ ৫ বছরে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থেকে নানামুখী প্রভূত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে এমনিতেই জনগণ তাকে এগিয়ে রাখছে। জিনজিরার দোকানী ফারুক রহমান বলেন, এক সময়ে এখানে দিনের ২০ ঘণ্টার মতো লোডশেডিং হতো। বিদ্যুৎ নির্ভর কলকারখানা লোকসান দিতে দিতে পথে বসতে বসেছিলো। কিন্তু এখন কোনো লোডশেডিং নেই। সারাদিন কর্মব্যস্ত জিনজিরার কলকারখানাগুলো। এটা যে কি ভালো হয়েছে আমাদের জন্য। মানুষতো তাকেই ভোট দেবে।

তাওয়াপট্টির বাসিন্দা আয়েশা আক্তার বলেন, এখন পর্যন্ত ধানের শীষের পক্ষে কেউ ভোট চাইতে আসেনি। অলিতে-গলিতে আওয়ামী লীগের পোস্টার ও নির্বাচনী মিছিল হচ্ছে প্রতিদিনেই। বিএনপি ভোটে আছে না কি নেই, সেটাই বুঝতে পারছি না।

বিগত সময়ের উন্নয়নের কারণে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে যখন তাকে এগিয়ে রাখছে। ঠিক তখন কেরানীগঞ্জের মাস্টারপ্লান, ৫শ’ শয্যার হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, শিক্ষা বিস্তার, নদী ও খাল উদ্ধার, মাদক নির্মূল, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসমুক্ত মডেল কেরানীগঞ্জের স্বপ্ন নিয়ে দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাইছেন বিপু। কেরানীগঞ্জের উন্নয়নে বিসিক এলাকায় গ্যাস সংযোগ দিয়ে নতুন নতুন শিল্প স্থাপন, স্টেডিয়াম নির্মাণ,বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ার ঘোষণা ভোটারদের মনে সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।

নসরুল হামিদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ১০ বছর আগের কেরানীগঞ্জ ছিলো অনেকটা সন্ত্রাসের জনপদ। আজকের কেরানীগঞ্জে সন্ত্রাসীর কোনো ঠাঁই নেই। দলমত নির্বিশেষে এখানে সুন্দরভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। আমি নির্বাচিত হলে এসব কাজের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।

নির্বাচনে জয়ের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করে নৌকার এই প্রার্থী বলেন, এখানে নৌকার জোয়ার তৈরি হয়েছে। বিএনপির প্রার্থী ২০০৮ সালে আমার কাছে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন। এবার আরও বেশি ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করবে কেরানীগঞ্জের জনগণ।

বুড়িগঙ্গার তীরের এই আসনে ১৯৭৩ সালের পর দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের হাতছাড়া ছিলো আসনটি। ১৯৭৯ সালে বিএনপি, ৮৬ ও ৮৮ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী বিজয়ী হয়। এরপর টানা তিনটি সংসদে বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে বিএনপির প্রার্থী গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন নসরুল হামিদ। এরপর ২০১৪ সালে নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রিপরিষদে ঠাঁই করে নেন তিনি।

এখানে আমান উল্লাহ আমানকে শক্ত প্রার্থী মনে করা হয়। কিন্তু সংসদীয় আসনের নতুন সীমানা নির্ধারণের প্রেক্ষিতে প্রার্থী বদলের কারণে ব্যাকফুটে বিএনপি। তার সঙ্গে প্রচারণার ঘাটতি বিএনপিকে জটিল সমীকরণে ফেলে দিয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর