জামায়াতের ২৫ প্রার্থীর প্রার্থিতার বিষয়ে সিদ্ধান্ত রোববার

বিবিধ, নির্বাচন

ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 14:46:55

একাদশ সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের ২৫ জনের প্রার্থিতা নিয়ে হাইকোর্টের রুলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠকে বসছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রোববার (২৩ ডিসেম্বর) বিকাল তিনটায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে বিকাল সাড়ে তিনটায় কমিশনের ৪১তম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

বৈঠকের আলোচসূচিতে ব্যালট পেপার মুদ্রণ ও একাদশ সংসদ নির্বাচনের সার্বিক অগ্রগতি ও মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগের দায়েরকৃত রিট পিটিশন ১৫২৩৭/২০১৮ বিষয়ে আদালতের রুলের বিষয়টি রাখা হয়েছে।

জানা গেছে, জামায়াতকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিলের পাশাপাশি সংগঠনটির রাজনৈতিক কার্যক্রমও নিষিদ্ধ করে রায় রয়েছে আদালতের। কিন্তু একাদশ জাতীয় নির্বাচনে দলটির রাজনৈতিক মিত্র বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে দলটির কয়েকজন প্রার্থী। বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ২২ জন এবং স্বতন্ত্র আরো তিনটিসহ মোট ২৫টিতে আসনে লড়ছেন দলটির নেতারা।

ভোটের আগের সকল কার্যক্রম তদারিকের পাশাপাশি জামায়াত ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নিতে আজ অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ব্যালট মুদ্রণ, নির্বাচনের সামগ্রীক কার্যক্রম ও জামায়ত ইস্যুতে আইনি দিকগুলো খতিয়ে দেখা হয়।

এদিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা এবং প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর নতুন করে জামায়াত প্রার্থীদের বিষয়ে রিট দায়ের করায় বিপাকে পড়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আদালতের নির্দেশনা নিষ্পত্তি না হওয়ায় সংসদ নির্বাচনের অনেক কাজ আটকে রয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি সংসদীয় আসনের ব্যালট মুদ্রণ বন্ধ রয়েছে। কারণ আজকের মধ্যে ব্যালট মুদ্রণ শেষ করে তা মাঠ পর্যায়ে পাঠানোর কথা রয়েছে।

জামায়াতের ২৫ প্রার্থীর প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে সম্প্রতি হাইকোর্টেও রিট করেন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপূরী, মো. আলী হোসেন, মো. এমদাদুল হক ও হুমায়ুন কবির। জামায়াত নেতাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে হাইকোর্টে ওই রিট আবেদন দাখিল করেন। আবেদনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), নির্বাচন কমিশন সচিবকে বিবাদী করা হয়। আবেদনে জামায়াত নেতাদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা অবৈধ ঘোষণার প্রশ্নে রুল জারির জন্য আদালতে প্রার্থনা জানানো হয়েছে। এই রুল বিচারাধীন থাকাবস্থায় বৈধ প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে ইসি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা স্থগিতের আবেদন করা হয়েছে এই রিটে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে রিটটি নিষ্পত্তির নির্দেশনা দিয়েছিল আদালত। সোমবার ওই আদেশ নিষ্পত্তির শেষ দিন।

ইসির সংশ্লিষ্টরা জানান, জামায়াতের প্রার্থিতা বাতিল করা সংক্রান্ত আদালত যে নিদের্শনা দিয়েছে সেখানে সরাসরি নিষিদ্ধ দলটির ধানের শীষের ব্যানারে নির্বাচন করা প্রার্থীদের প্রার্থিতার বিষয়ে কিছু বলেননি। তারা কমিশনকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে রুল ইস্যুটি নিষ্পত্তির নিদের্শনা দিয়েছে। তবে, বিধি অনুযায়ী কমিশনের করণীয় কিছু নেই। তবে, এ কারণে অনেক সংসদীয় আসনের ব্যালট মুদ্রণ বন্ধ রাখা হয়েছে। আজ-কালের মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তি না করা হলে ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের ভোটগ্রহণ কার্যক্রম সুষ্ঠূভাবে সম্পন্ন করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। তাই কমিশন রোববার বৈঠক ডেকেছে।

জানা গেছে, জামায়াতের ২৫ জন নেতা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এদের মধ্যে ২২ জন ধানের শীষে ও বাকিরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়েছে। এরা হলেন, ঠাকুরগাঁও-২ আসনে মাওলানা আবদুল হাকিম, দিনাজপুর-১ আসনে মাওলানা মোহাম্মদ হানিফ, দিনাজপুর-৬ আসনে মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম, নীলফামারী-২ আসনে মুক্তিযোদ্ধা মনিরুজ্জামান মন্টু, নীলফামারী-৩ আসনে মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম, রংপুর-৫ আসনে অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, গাইবান্ধা-১ আসনে মাজেদুর রহমান সরকার, সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, পাবনা-৫ আসনে মাওলানা ইকবাল হুসাইন, ঝিনাইদহ-৩ আসনে অধ্যাপক মতিয়ার রহমান, যশোর-২ আসনে আবু সাঈদ মুহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন, বাগেরহাট-৩ আসনে অ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াদুদ, বাগেরহাট-৪ আসনে অধ্যাপক আবদুল আলীম,  খুলনা-৫ আসনে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, খুলনা-৬ আসনে মাওলানা আবুল কালাম আযাদ, সাতক্ষীরা-২ আসনে মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, সাতক্ষীরা-৩ আসনে মুফতি রবিউল বাশার, সাতক্ষীরা-৪ আসনে গাজী নজরুল ইসলাম, পিরোজপুর-১ আসনে আলহাজ্ব শামীম সাঈদী, ঢাকা-১৫ আসনে ডা. শফিকুর রহমান, সিলেট-৫ আসনে মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, সিলেট-৬ আসনে মাওলানা হাবিবুর রহমান, কুমিল্লা-১১ আসনে ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, চট্টগ্রাম ১৫ আসনে আ ন ম শামসুল ইসলাম, কক্সবাজার-২ আসনে হামিদুর রহমান আযাদ।

জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে ২০০৯ সালে রিট হয়। ওই রিটের ওপর জারিকৃত রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে ২০১৩ সালে হাইকোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও অবৈধ ঘোষণা করে। হাইকোর্টের ওই রায়ে বলা হয়, রাজনৈতিক দল হিসেবে ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০বি (১)(বি)(২) এবং ৯০সি অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও সংবিধানপরিপন্থী। এই রায় এখনো বহাল আছে। তিনি বলেন, যেহেতু জামায়াতের নিবন্ধন নেই সেহেতু ওই দলের কোন নেতা নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করতে পারছেন না। যেহেতু নিজস্ব প্রতীকে পারছেন না সেহেতু অন্য কোন দলের প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই।

এদিকে জামায়তের প্রার্থীদের প্রার্থিতা বাতিলের জন্য ইসিকে অনুরোধ জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। শুক্রবার কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম বলেন, হাইকোর্ট থেকে জামায়াত ইসলামের যে সকল সদস্য প্রার্থী আছেন তালিকা দিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে তাদের নাম পাঠানো হয়েছে। এবং হাইকোর্ট তাদের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে। জামায়াতের প্রার্থীরা তাদের হলফনামা যখন দাখিল করেছে তখন তাদের বলতে হয়েছে তারা কোন দলের সদস্য। যারা ধানের শীষ ব্যবহার করছেন তারা বলেছেন বিএনপির, কিন্তু আসলে তো তারা বিএনপির নন। তাদের ওয়েবসাইটে, পত্র-পত্রিকায় পরিষ্কারভাবে প্রত্যেকের অবস্থান উঠে এসেছে। আমরা নির্বাচন কমিশনকে তাদের প্রার্থিতা বাতিলের অনুরোধ করেছি।

বিএনপি বলছে জামায়াতের কোনো প্রার্থী নাই, সবই ধানের শীষের প্রার্থী। দলটির বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেছেন, নির্বাচনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কোনো প্রার্থী নেই। তারা শুধু ধানের শীষের প্রতীক নয়, তারা বিএনপির মনোনীত প্রার্থী। বিএনপির দলীয় প্রতীক ধানের শীষে নির্বাচন করছেন তারা। বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ তাদের দেয়া হয়েছে। জামায়াত তাদের মনোনীত করেনি। বিএনপি মনোনীত করেছে। তাই সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর কোনো প্রার্থী নেই।

এছাড়াও আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জামায়াতের ইসলামীর ২২ নেতার প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে প্রজন্ম ৭১ এর ব্যনারে দাবি জানিয়েছেন শহীদের সন্তানরা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর