ঢাকা-১: প্রচারণায় এগিয়ে সালমান, সমীকরণে সালমা

বিবিধ, নির্বাচন

রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-18 09:02:41

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের বাকী আর মাত্র ৪ দিন। দেশের অন্যান্য স্থানের মত নির্বাচনী প্রচারণা চলছে ঢাকা-১ আসনে। তবে এখানকার চিত্র খানিকটা ব্যতিক্রম। কেননা এই আসনে মুখোমুখি দুই হেভিওয়েট শিল্পপতি। শুধু তাই নয় মহাজোট থেকে উন্মুক্ত এই আসন নিয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস দিচ্ছে ভোটাররা।

বুধবার (২৬ ডিসেম্বর) সরেজমিনে ঢাকার নবাবগঞ্জ ও দোহার উপজেলা ঘুরে এমন চিত্রের দেখা মিলেছে। স্থানীয় ভোটাররা বলছে, প্রচার প্রচারণায় সবচেয়ে এগিয়ে আছেন সালমান এফ রহমান। কিন্তু নির্বাচনী কৌশলে বেশ এগিয়ে গেছেন ওই আসনের আরেক প্রার্থী সালমা ইসলাম। অন্য প্রার্থীরা তেমন একটা আলোচনায় না থাকায় মূলত সালমান ও সালমার লড়াই হতে যাচ্ছে ৩০ ডিসেম্বর।

কমিশন সূত্রে জানা যায়, নবাবগঞ্জ ও দোহার উপজেলা নিয়ে ঢাকা-১ আসন। এ আসনে মোট ভোটার চার লাখ ৪০ হাজার ৪০৭ জন। এর মধ্যে দুই লাখ ১৬ হাজার ৮০৫ পুরুষ ভোটার আর দুই লাখ ২৩ হাজার ৬০২ জন নারী ভোটার।

এই আসন থেকে এবারের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে মো: কালাম হোসেন, ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে মো: করম আলী, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ থেকে জালাল উদ্দিন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পাটির আবিদ হোসেন, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পাটির মোঃ সেকেন্দার হোসেন, স্বতন্ত্রভাবে বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির সালমা ইসলামও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিএনপি বা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে থেকে প্রার্থী ছিলেন নবাবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাক। কিন্তু হাইকোর্ট থেকে তার প্রার্থিতা স্থগিত হয়ে গেলে তাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বছরখানেক আগে থেকেই এলাকায় বেশ সক্রিয় ছিলেন সালমান। নিয়মিত এলাকায় যাতায়াত করে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। প্রতীক বরাদ্দের পর সেটা আরো বেড়ে গেছে। নিয়মিত নির্বাচনী এলাকায় একাধিক পথসভা, উঠান বৈঠক ও জনসভায় অংশ নিচ্ছেন। বর্তমান এমপি সালমা ইসলামও ভোটের মাঠে সক্রিয় আছেন। তার এলাকায় উন্নয়নমূলক কাজগুলোর কথা তুলে ধরে ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন। এরমধ্যে নবাবগঞ্জে সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনা এই আসনকে দেশবাসীর নজরে এনেছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ব্যানার ফেস্টুন প্রচার প্রচারণায় সালমান এফ রহমান এগিয়ে থাকলেও তার জন্য নির্বাচনটি সহজ হবে না। বেশ কয়েকটি কারণে ঢাকা-১ আসনের ভোট বেশ জমে উঠেছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:

মহাজোট থেকে ‘উন্মুক্ত’ আসন:

ঢাকা-১ আসন (দোহার-নবাবগঞ্জ) বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত। ১৯৯১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ছয়টি সংসদ নির্বাচনে এই আসনে চারবার জয় পেয়েছে বিএনপি। একবার করে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি (জাপা)। দুটি দলই চায় আসন পুনরুদ্ধার করতে। মহাজোটের সমীকরণে এই আসনটি নিয়ে এখনো দেনদরবার চলছে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে। কিন্তু বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের কোন প্রার্থী এ আসনে না থাকায় আসনটি শেষ পর্যন্ত ‘উন্মুক্ত’ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও সালমা ইসলাম স্বতন্ত্রভাবে মটোরগাড়ি প্রতীকে নির্বাচন করছেন তবুও তার প্রতি জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের পূর্ণ সমর্থন আছে।

প্রার্থীদের আঞ্চলিকতা ফ্যাক্টর:

নৌকার প্রার্থী সালমান এফ রহমানের গ্রামের বাড়ি দোহার উপজেলায়। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী সালমা ইসলামের বাড়ি নবাবগঞ্জ উপজেলায়। ঢাকা-১ আসনে নবাবগঞ্জের ভোট বেশি। ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে নবাবগঞ্জ। আর ৯টি ইউনিয়নের দোহার। দুটি উপজেলাতেই আঞ্চলিকতা নিয়ে বেশ টান রয়েছে। স্ব স্ব উপজেলার প্রার্থীকেই জয়ী দেখতে চান স্ব স্ব এলাকার অধিকাংশ ভোটার।

সালমা পেতে পারেন বিএনপির সমর্থন:

নবাবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাক ছিলেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী। কিন্তু তার প্রার্থিতা আইনি জটিলতায় হাইকোর্ট থেকে স্থগিত হয়ে যায়। আবু আশফাক এক সময় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। ২০১০ সালে ঢাকা জেলার যুবদলের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৩ সালে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০১৬ সালে ঢাকা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে টানা দুইবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। এলাকায় তার বিশাল একটা ভোট ব্যাংক আছে। অন্যদিকে বিএনপিরও প্রচুর জনসমর্থন আছে। ঢাকা-১ আসনে বিএনপি নির্বাচন করতে না পারায় তার ক্ষোভ যেতে পারে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর উপর। নিজেরা করতে না পারলেও তারা কোনভাবে আওয়ামী লীগকে ভোটে জিততে দিতে রাজি নয়। তাই সালমা ইসলামের সমর্থনে বিএনপির ভোটগুলো চলে যাওয়ার সম্ভাবনাও আছে।

তবে শেষ পর্যন্ত এই আসনে শেষ হাসিটা কে হাসবে সেটার জন্য ভোটারদের অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুটা সময়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর