জোটের খেলায় কপাল পুড়তে পারে আ.লীগের হেভিওয়েট প্রার্থীদেরও

, নির্বাচন

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-11-20 11:03:10

জোট মহাজোটের সমীকরণে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থীদেরও কপাল পুড়তে পারে। আসন পুনঃবিন্যাস করে জাতীয় পার্টির সিনিয়র নেতাদের ছাড় দেওয়ার দেন দরবার চলছে বলে জানা গেছে।

যাদের আসন নিয়ে আলোচনা চলছে তারা হলেন, ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ঢাকা-১৯ (সাভার) থেকে নির্বাচিত ড. এনামুর রহমান, ঢাকা-১১ (বাড্ডা, রামপুরা ও ভাটারা) থেকে নির্বাচিত কেএম রহমতুল্লাহ, ঢাকা-১৭ থেকে নির্বাচিত ড. এ আলী আরাফাত। গোপন সমঝোতার অংশ হিসেবে আসনগুলো জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়ার জোর গুঞ্জন রয়েছে।

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সাবেকমন্ত্রী কাজী ফিরোজ রশীদ বিগত দশম ও একাদশ সংসদে ঢাকা-৬ (ওয়ারী-গেন্ডারিয়া-সূত্রাপুর) আসন থেকে নির্বাচিত হন। এবার ওই আসনটি ছাড় দিতে নারাজ আওয়ামী লীগ। ওই আসনে আওয়ামী লীগ সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনকে প্রার্থী করতে চান। সমঝোতার অংশ হিসেবে ফিরোজ রশীদের সাভার থেকে নির্বাচনের আলোচনা চলছে। সাভারের কবীরপুরে রয়েছে কাজী ফিরোজ রশীদের বাগান বাড়ি।

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও পার্টির ডোনার খ্যাত যমুনা গ্রুপের কর্ণধার সালমা ইসলাম এমপির আসন নিয়েও জটিলতা দেখা দিয়েছে। সামলা ইসলাম এমপির আসন ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) নিয়ে ২০১৮ সালের নির্বাচন থেকেই রশি-টানাটানি চলছে। ওই নির্বাচনে সালমা ইসলামকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমান। পরে সংরক্ষিত কোটায় এমপি হয়ে আসেন সামলা ইসলাম। এবার সালমা ইসলামের জন্য বিকল্প হিসেবে ঢাকা-১১ আসনের বিষয়ে আলোচনা চলছে। যেখানে যমুনা গ্রুপের প্রধান কার্যালয় ও যমুনা ফিউচার পার্ক অবস্থিত। ওই আসনের বর্তমান সংসদে রয়েছেন কেএম রহমতুল্লাহ।

সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের আসন নিয়েও জটিলতার খবর পাওয়া গেছে। সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বিগত কয়েকটি সংসদে চট্টগ্রাম-৫ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হচ্ছেন। নানা কারণে ওই আসনটিও ছাড়তে চায় না আওয়ামী লীগ। সেখানে হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছে সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ সালাম। জাপার সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার ২০১৪ সালে পটুয়াখালী-১ আসন থেকেনির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে গোপন সমঝোতা থাকলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী থেকে যান। আর ধরাশায়ী হন রুহুল আমিন হাওলাদার। সম্প্রতি ওই আসনে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন।

আওয়ামী লীগের সঙ্গে জটিলতার পাশাপাশি জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ বিষয়েও কিছু সংকট রয়ে গেছে। সরকারের গুড বুকে থাকা রওশন এরশাদের পছন্দের প্রার্থীদের ওই সংকট। রওশনপন্থী নেতাদের ছাড় দিতে নারাজ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। জাতীয় পার্টির দুর্গখ্যাত রংপুর-৩ আসন থেকে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বারবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এরশাদের মৃত্যূর পর আসনটি থেকে এমপি নির্বাচিত হন রওশন পুত্ররাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদ। আসনটিতে নির্বাচনের বিষয়ে পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের খুবই আগ্রহী। অন্যদিকে রওশন এরশাদও তার পুত্রকে রাখতে বদ্ধপরিকর। উপনির্বাচনেও সময়েও বিষয়টি নিয়ে রশি টানাটানি হয়। সমঝোতার অংশ হিসেবে আলোচনার টেবিলে ঢাকা-১৭ (গুলশান, বারিধারা ও ক্যক্যান্টনমেন্ট) আসন রাখা হয়েছে। এখান থেকে ২০০৮ সালে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন। পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যানকে আসনটি ছেড়ে দেওয়া হতে পারে।

কঠোর গোপনীয়তার সঙ্গে চলছে আসন সমঝোতার ইস্যুটি। ‍উচ্চ পর্যায়ের একটি টিম এ নিয়ে কাজ করছে বলে জানা গেছে। আসন সমঝোতার গুঞ্জন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, বিষয়টি পুরোপুরি সত্য না আবার মিথ্যাও না। এই মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি মন্তব্য করতে পারছি না।

সিনিয়র নেতাদের এসব আসনের পাশাপাশি জাতীয় পার্টির নেতাদের মধ্যে প্রবল আস্থার সংকট রয়েছে। জাতীয় পার্টি মনে করে ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে কোন প্রতিশ্রুতিই রক্ষা করেনি আওয়ামী লীগ। নানাভাবে তাদের সঙ্গে অবিচার করা হয়েছে। উপনির্বাচন, উপজেলা পরিষদ থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত কোথাও ছাড় দেওয়া হয়নি। অনেক সময় জোর করে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে জাপার প্রার্থীদের। সে কারণে এবারের প্রতিশ্রুতি কতটা রক্ষা করবে সে সম্পর্কে তাদের মনে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। যে কারণে জাতীয় পার্টি আগেভাগেই নিশ্চিত হয়ে তারপর সিদ্ধান্ত দিতে চায়। তারা এমন কোন মাধ্যমে নিশ্চিত হতে চান যাতে, আওয়ামী লীগ আর প্রতিশ্রুতি ভাঙতে না পারে।

১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। নির্বাচন প্রশ্নে ভেবেচিন্তে পা ফেলতে চায় জাতীয় পার্টি। সময়ক্ষেপণ করে দেখতে চান অন্য কিছু ঘটে কিনা। বিশেষ করে আমেরিকার দৌড়ঝাপের দিকেও নজর রাখছে দলটি। মনোনয়ন ফরম বিক্রি করলেও এখনও দুই দিকেই পা দিয়ে রাখছে দলটি। অনেকেই ২০১৪ সালের নির্বাচনের আলামত দেখতে পাচ্ছেন। ২০১৪ সালে নির্বাচনে মনোনয়ন দাখিল করার পর হঠাৎ করেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। কিন্তু সেই নির্দেশ অমান্য করে রওশনের নেতৃত্বে ৮৭ জন প্রার্থী নির্বাচনে থেকে যান। রওশন এরশাদ এবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা দিয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর