লালমনিরহাট-৩: কাদেরের হ্যাট্রিক নাকি দুলুর সমতা

বিবিধ, নির্বাচন

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-24 23:05:15

লালমনিরহাট থেকে: তারা একে অপরের মুখোমুখি হয়েছেন টানা তিন সংসদ নির্বাচনে। জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের জয়ী হয়েছেন দুই বার, আর জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু জিতেছেন একবার।

সে কারণে এবার আলোচনা চলছে কাদেরের হ্যাট্রিক নাকি দুলুর সমতায় ফেরা। লালমনিরহাট-৩ (সদর) আসনে কে নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন সদরের সর্বত্র চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

জাতীয় পার্টি ও বিএনপির এই হেভিওয়েট প্রার্থীদের জমজমাট লড়াইয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করতে দেখা যাচ্ছে। প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী সমানতালে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলা সদরের মিশন মোড় থেকে রেলগেট, প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি সব রাস্তায় পোস্টারে ছাওয়া। অনেকটা প্রতিযোগিতার মতো দেখাচ্ছে। যেন কে কার চেয়ে বেশি সেটা প্রদর্শনের চেষ্টা চলছে।

তবে যেই জিতুক অল্প ব্যবধানে জিতবেন বলে মনে করছেন ভোটাররা। এক পক্ষ জাতীয় পার্টি তথা মহাজোটের প্রার্থী জিএম কাদেরকে এগিয়ে রাখছেন। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, এখানে জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগ, বিএনপির কিছু রিজার্ভ ভোট রয়েছে। প্রধান তিন রাজনৈতিক দলের রিজার্ভ ভোট প্রায় কাছাকাছি। জাপা আওয়ামী লীগ জোট হয়েছে, এ কারণে বিএনপি ধোপে টিকতে পারবে না।

১৯৯১ সালের নির্বাচনে জাপা পায় ৩১ হাজার, আ’লীগ ২৫ হাজার আর বিএনপির প্রার্থী দুলু পান ২১ হাজার। এরপর ১৯৯৬ সালে জাপা ৩৯ হাজার, বিএনপি ৩৬ হাজার। এই আসনে ১৯৮৬ সালের পর মাত্র একবার ২০০১ সালে বিজয়ী হয় বিএনপি। ঐ নির্বাচনে বিএনপি ৬৩ হাজার, আ’লীগ ৪২ হাজার, জাপা ৩৩ হাজার ভোট পান।

জাপার জয় দেখা ভোটারদের যুক্তি হচ্ছে, ৩৩ ও ৪২ যোগ হলে ৭৫ হাজার হয়। তাই এবার জাপা এগিয়ে রয়েছে।

আবার অপর পক্ষের বক্তব্য হচ্ছে, মানুষ আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। আর জিএম কাদেরের রয়েছে বেশ কিছু মাইনাস পয়েন্ট। প্রথমত তিনি দুই দফায় এমপি নির্বাচিত হলেও এলাকার উন্নয়নে তেমন ভূমিকা রাখতে পারেননি। আবার ভোটের পর মানুষ তাকে কাছে পায়নি। ভোটের পর সারা সময় তিনি ঢাকায় ছিলেন।

২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে জিএম কাদের বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপান। তখন স্থানীয়দের প্রত্যাশা ছিলো পরিত্যাক্ত লালমনিরহাট বিমানবন্দর চালু করার। এ নিয়ে অনেক জল ঘোলা হয়েছে। কিন্তু এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি অপূর্ণই থেকে গেছে। যে কারণে জিএম কাদেরকে মানুষ ভোট দিতে চায় না।

একই সঙ্গে জাপার বেহাল অবস্থা তার পরাজয়ের আরেকটি কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এসব দিক থেকে বিএনপি নেতা অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলুকে এগিয়ে রাখছেন। এখানে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে খুবই শক্তিশালী। আবার অধ্যক্ষ দুলু ভোটের পরেও এলাকায় অবস্থান করেন। বিষয়টি দুলুর জয়ের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জিএম কাদের প্রথমদিকে অনেক পিছিয়ে ছিলেন। দিনে দিনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফিরেছেন। প্রথম দিকে ভোট হলে কাদেরের ভরাডুবি হতো। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।

জিএম কাদের বার্তা২৪কে বলেন, ‘যেদিকে যাচ্ছি মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। এখানে জাতীয় পার্টির পক্ষে জোয়ার শুরু হয়েছে। মানুষ আমার কথা শুনতে দৌড়ে আসছেন। সাধারণ মানুষ লাঙ্গলের জন্য পজেটিভ। সময় যত গড়াচ্ছে, আমাদের ভোট বাড়ছে।’

অনেক চেষ্টা করেও আসাদুল হাবিব দুলুর সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি। ফোনে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি তিনি। জেলা বিএনপির নেতারা দাবি করছেন, ভোটাররা ভোট দিতে পারলে ধানের শীষের বিজয় সুনিশ্চিত।

এ সম্পর্কিত আরও খবর