জনতার রায় আজ

বিবিধ, নির্বাচন

মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-10 07:13:09

প্রতীক্ষার ভোট আজ। সর্বোচ্চ রাজনৈতিক দল এবং প্রার্থীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। রোববার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৮টা থেকে নদীমাতৃক এই দেশের মানুষ মেতে উঠবে ভোট উৎসবে। অনেক হিসেব নিকেষ, অনেক হাওয়া পাল্টা হাওয়া, আর যোগ বিয়োগের হিসেব মিলাতে জনগণের রায় দেবার দিন আজ।

সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রাণ শক্তি যেই জনতা, তাদের রায় দেবার দিন আজ। আগামী ৫ বছরের জন্যে এই দেশের আইন প্রণেতা নির্ধারণের দিন। রাজনীতিবিদরা সবসময় মনে করেন সব জনগণ তাদের সঙ্গেই রয়েছেন। তবে জনগণ কিন্তু ঠিকই জানেন, তারা কি করবেন।

গত কয়েকদিনে আওয়ামী লীগ ও মহাজোট মহলের প্রচারণা ও কথায় এটা স্পষ্ট যে তারা ধরে রেখেছে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে জনগণ তাদেরকেই ভোট দিবেন। তেমনি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টও প্রায় শতভাগ নিশ্চিত ধরে নিয়েছেন জনগণ একটি পরিবর্তনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ধানের শীষে রায় দেবেন। তবে জনগণই কিন্তু আজকের ৮ ঘণ্টায় নির্ধারণ করে দেবেন কে হবে পরের পাঁচ বছরের কাণ্ডারি।

এইবারের নির্বাচন কিন্তু বেশ উল্লেখযোগ্য এই কারণে যে সর্বোচ্চ ৩৯ টি রাজনৈতিক দল বিভিন্ন জোট উপজোটে ভাগ হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। সর্বোচ্চ  ৪০ হাজার ১৯৯টি ভোট কেন্দ্রের ২ লাখ ৬ হাজার ৫৪০টি কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে ভোট।

পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি, আনসার, গ্রাম পুলিশ সহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মোট ৬ লাখ ৮ হাজার সদস্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দায়িত্ব পালন করবেন। ৮১টি দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থার ২৫ হাজার ৯০০ জন প্রতিনিধি, ফেমবোসা, এএইএ, ওআইসি ও কমনওয়েল্থ থেকে আমন্ত্রিত ৩৮ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক থাকবেন।

এছাড়া বিভিন্ন বিদেশি মিশনের ৬৪ জন কর্মকর্তা ভোট পর্যবেক্ষণে থাকছেন। দূতাবাস ও বিদেশী সংস্থায় কর্মরত আরও ৬১ জন বাংলাদেশিও নজর রাখবেন জাতীয় নির্বাচনের দিকে।

দুই দলের প্রার্থীরা কেউ কেউ আশঙ্কার কথা বলছেন, কেউ কেউ অতি উৎসাহের কথা বলছেন। তবে সবকিছুকে সঙ্গে নিয়েই হিমালয় উপত্যকার এই জাতির ভাগ্য নির্ধারণ করতে ছুটে যাবে ভোটাররা। বাংলা ভাষার ওপর ভিত্তি করে ১৯৭১ সালে নয় মাসের জনযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে বাংলাদেশের জন্ম নিয়েছে সেই দেশের জনতা পথভ্রষ্ট হতে পারেন না। ত্যাগের মহীমায় উদ্ভাসিত এই জনগণ ভুল প্রার্থী বাছাই করলে দায় রয়ে যাবে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে।

৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত, ২ লক্ষ বীরাঙ্গনার সম্ভ্রমহানি আর নূর মোহাম্মদের জীবন দানের মধ্য দিয়ে এই দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই দেশে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে জেল খেটেছেন প্রধান দুই দলের নীতি নির্ধারকেরাই। বহু কষ্টের বিনিময়ে পাওয়া এই গণতন্ত্র যেন হেলায় হারিয়ে না যায় বা আবেগে তাড়িত না হয় সেটা জনতাকেই নির্ধারণ করতে হবে। আবেগ নয় বরং যুক্তি দিয়ে বাক্সে ব্যালট ফেলতে হবে।

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি সরকারের অধীনে সেই নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিরোধী দল। আবার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিও আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপির মত অন্যতম রাজনৈতিক দল। গণতন্ত্রের সঙ্গে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এ নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও ২০১৮ সালের শেষে সকল দল এসেছে নির্বাচনে।

নির্বাচনে দলীয় অংশগ্রহণ বাড়লে যে জনগণের জানমাল রক্ষা হয় তা ২০১৪ সালের নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করলেই বেরিয়ে আসে। এবারের নির্বাচনের পূর্বে সেনাবাহিনীর অবস্থান জনমনে আরো স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে। শুধু রাজনৈতিক দলের স্বার্থ রক্ষা নয়, বরং জনগণ নিজেদের অধিকার আদায় করতেই পৌছে যাবে ভোট কেন্দ্রে। সেনা প্রধানও নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রায় ১০ কোটি ৪২ লাখ ভোটার রয়েছেন এই নির্বাচনে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও তার অনুসারীদের আহ্বান জানিয়েছেন যেন কোনো কারণে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। এবার বিভিন্ন দল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে ১ হাজার ৮৬১ জন প্রার্থী নির্বাচনী লড়াইয়ে আছেন। এদের থেকেই জনতা ২৯৯ জন সংসদ সদস্যকে নির্বাচিত করার দিন আজ।

বাংলাদেশের জনগণ রাজনীতি প্রিয়। এখানে জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা লক্ষ্যনীয়। এই জনতা নিজেই নিজের আইনপ্রণেতার রায় দেয়ার এই উৎসবে শামিল হবে। নেতা, দল, প্রার্থী, প্রতীক, স্থানীয় এবং জাতীয় রাজনীতি সকল কিছু বিবেচনা করেই হবে জনতার রায়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর