নির্বাচনে কারচুপির কারণে জাতীয় পার্টির ১১জন প্রার্থী নির্বাচন বর্জণের ঘোষণা দিয়েছেন। ভোটের দিন বিভিন্ন সময়ে তারা সরে দাঁড়িয়েছেন বলে বার্তা২৪.কমকে নিশ্চিত করেছেন জাতীয় পার্টির যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম।
তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, আমার কাছে ১১ জন সরে যাওয়ার খবর এসেছে। এর বাইরে থাকলে আমার জানা নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমাদের ২৫৭ প্রার্থীর মধ্যে ৫ জানুয়ারি আগে ৩৪ জন প্রার্থী সরে দাঁড়িয়েছিলেন।
ভোটের দিন সবার আগে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান নারায়নগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি আলমগীর শিকদার লোটন। তার এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন।
ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার কিছু সময় আগে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন চাঁদপুর-৪ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাজ্জাদ রশীদ। তিনি ভোটে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন।
দুপুরে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন লালমনিরহাট-২ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন পর ভোটাররা ভোট দিতে এসেছিলেন। কিন্তু অনেকেই ভোট না দিতে পেরে চলে গেছেন। তাদের অভিযোগ ছিল ভোটকেন্দ্রে অনিয়ম হচ্ছিল। তাই আমি এই ভোট বর্জন করছি।
ঠাকুরগাঁও-১ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী রেজাউর রাজী স্বপন চৌধুরী জাল ভোটের অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেছেন। ভোট শেষ হওয়ার ঘণ্টা খানেক পুর্বে বর্জনের সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমকে জানান।
জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী মীর সামছুল আলম লিপ্টন ভোট বর্জন করেছেন। দুপুরে নির্বাচনী কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ভোট বর্জনের কথা জানান। ভোট কারচুপি ও এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগে নরসিংদী-২ আসনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী রফিকুল আলম সেলিম ভোট বর্জন করেছেন।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের রংপুরে ভোট দেওয়ার পর সাংবাদিকদের বলেন, ভোট স্বাভাবিক হবে না, সেই ধরনের একটা আবহাওয়া তৈরি করা হচ্ছে সেইসব জায়গায়। সব জায়গার খবর এখনো পাইনি। যে আশা করছিলাম ভোটটা স্বাভাবিক হবে। কিন্তু রংপুর ছাড়া বেশিরভাগ জায়গায় ভোট স্বাভাবিক হচ্ছে না। সবসময় আমাদের আশঙ্কা ছিল যে, নির্বাচনে নিয়ে এসে আমাদের কোরবানি করা হবে। কোরবানি করে নির্ভেজাল, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা হবে। এসব আশঙ্কা সত্যি হয় কিনা বিকেল হলেই বোঝা যাবে।
ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সালমা ইসলাম কারচুপির অভিযোগ করলেও নির্বাচন থেকে সরে যান নি। সালমা ইসলাম অভিযোগ করেন ৯টি কেন্দ্রে তার এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে।
২৫৭ আসনে প্রার্থী দিলেও অনেক যায়গায় ছিল নামকাওয়াস্তে। নানা কারণে অনেক প্রার্থী নিষ্কিয় হয়ে পড়েছিলেন আগেই। মাত্র অর্ধশত আসনে জোরালো সীমাবদ্ধ ছিল জাতীয় পার্টির প্রচারণা। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ২৬ আসনে সমঝোতা করে জাতীয় পার্টি।
ওই ঘোষণার পর থেকেই ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন ২৬ আসনের বাইরে থাকা সাধারণ প্রার্থীরা। অনেকে মনে করছেন, তাদের অংশগ্রহণ করার বিষয়টি এখন শুধু নির্বাচনে বৈধতা দেওয়ার প্রশ্নে। সে কারণে তারা নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে প্রচারণা চালাতে রাজি ছিলেন না। ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনেক প্রার্থী পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে ঘোরাঘুরি করেছিলেন দলীয় ফান্ডের বিষয়ে। কিন্তু সাড়া না পেয়ে ক্ষোভ হতাশা নিয়ে নির্বাচনী মাঠ থেকে নিষ্কিয় হয়ে পড়েছেন। তারা অভিযোগ করেছেন- পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের সাক্ষাত পাই নি। তাদেরকে ফোন করলেও রিসিভ করেননি।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও নির্বাচন মনিটরিং কমিটির সদস্য খলিলুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, আওয়ামী লীগ কোনো কথাই রাখে নি। ২৬টি আসন থেকে নৌকা সরিয়ে নিয়েছে তাতেও চালাকি করেছে। নৌকার চেয়ে অনেক প্রভাবশালী প্রার্থী রয়ে গেছে। পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনে আওয়ামী লীগের লোকজন জাতীয় পার্টির বিদ্রোহী প্রার্থী রুস্তম আলী ফরাজীর পক্ষে কাজ করছে। আরও অনেক জায়গা রয়েছে এমন।