গাইবান্ধায় ছেড়ে দেওয়া ২ আসনেই লাঙলের পরাজয়

, নির্বাচন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেট, বার্তা ২৪.কম, গাইবান্ধা | 2024-01-08 16:32:32

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধার সংসদীয় পাঁচটি আসনের মধ্যে জাপা-আ.লীগ সমঝোতায় দুটি আসন জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আসন দুটিতে নৌকার প্রার্থীরা মনোনয়ন পেলেও দলের নির্দেশে তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন। পরে ছেড়ে দেওয়া আসন দুটিতে জোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয় দুই জাপা প্রার্থী। কিন্তু আ. লীগ ছেড়ে দিলেও দুটি আসনেই স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হেরে যায় জোটের এই দুই লাঙল। তাদের মধ্যে আবার একজন হেরে যান বিপুল ভোটের ব্যবধানে।

গাইবান্ধার পাঁচটি সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৯ গাইবান্ধা-১ সুন্দরগঞ্জ আসন। জাপার সাথে ক্ষমতাসীন আ.লীগের সমঝোতায় এই আসনের নৌকার প্রার্থী আফরোজা বারী দলের নির্দশে তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন। আফরোজা বারী সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আ.লীগের সভাপতি ও ওই আসনের প্রয়াত সাংসদ মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের বড় বোন। 

বিএনপি না থাকা এই নির্বাচনে আসনটিতে জোটগত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ওই আসনের বর্তমান সাংসদ ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। কিন্তু জোটগত সিদ্ধান্তে আ.লীগ মনোনীত আফরোজা বারী দলের চাপে তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী  হিসেবে ঢেঁকি প্রতীক নিয়ে লাঙ্গলের বিপক্ষে ওই আসনে লড়াই নামেন তারই মেয়ে কম্পিউটার ইঞ্জিড়নিয়ার আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগার (সাগর)। উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। এছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে তাঁর নাম রয়েছে।

ভোট যুদ্ধে জাপাসহ আরও ৯ জন প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে জোটের প্রার্থী লাঙলকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হারান তিনি। ফলাফলে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগার ১১৪ কেন্দ্রে ৬৬ হাজার ৪৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। 

অপরদিকে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ওই আসনের এমপি ও জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের জোটগত প্রার্থী ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী ৪৩ হাজার ৪৯১ ভোট পেয়ে হেরে যান। ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী ওই আসনের বর্তমান সাংসদ। 

জাতীয় পার্টির দূর্গ এই আসনটিতে ২০০১ সালে জামায়াতের প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে ২০০৮ সালে আবারও আসনটি দখলে নেয় জাতীয় পার্টি। এরপর ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের এমপি নির্বাচিত হয়ে ২০১৬ সালে নিজ বাড়িতেই গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন।

তার মৃত্যুতে অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন তৎকালীন উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা। পরে ওই বছর তিনিও সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মারা গেলে পরের উপ-নির্বাচনে ২০১৭ সালে এমপি নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। এছাড়া ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি এমপি নির্বাচিত হন।

অপরদিকে, ৩০ গাইবান্ধা-২ সদর আসন। এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ এ আসনটিও জাতীয় পার্টিকে (জাপা) ছেড়ে দেয়। ছেড়ে দেওয়ার ফলে এ আসনে জোটের প্রার্থী হয়ে লাঙল নিয়ে লড়েন এ আসনের  পরপর দুইবারের নির্বাচিত সাবেক সাংসদ ও একবারের উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রশীদ সরকার। তিনি এই আসনে ১৯৯১-১৯৯৬ সালে দুই দফায় সংসদ সদস্য নির্বাচি হয়েছিলেন। এছাড়া আব্দুর রশীদ সরকার ২০০৯ সালে গাইবান্ধা সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।

কিন্তু এই আসনের নৌকার মনোনয়ন পাওয়া টানা তিনবারের এমপি ও জাতীয় সাংসদের হুইপ মাহাবুব আরা বেগম গিনি দলের নির্দেশে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলেও ভোট যুদ্ধে নৌকার মনোনয়ন চেয়ে না পেয়ে আর দলীয় নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার সুযোগ পাওয়ায় শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন আওয়ামী লীগেরই স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহ সারোয়ার কবীর (ট্রাক)। তিনি জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদ্য পদত্যাগ করা সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। এছাড়া তিনি গণপরিষদের প্রথম স্পীকার শাহ আব্দুল হামিদের নাতী। 

নির্বাচনে জোটগত প্রার্থী আব্দুর রশীদ ছাড়াও আরো তিন প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সারোয়ার। আসনের ১১৪ কেন্দ্রের বেসরকারি ফলাফলে ৬৪ হাজার ১৯০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহ সারোয়ার কবির। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙল প্রতীকের জোটগত প্রার্থী আব্দুর রশিদ সরকার ৬১ হাজার ৩৭ ভোট পেয়ে হেরে যান।

গাইবান্ধা-২ এই সদর আসনে ১৯৭৩ ও ৭৯ সালে জয় পায় আওয়ামী লীগ। এরপর ১৯৮৬ ও ৮৮ সালে এমপি হয় স্বতন্ত্র প্রার্থী। তারপর ৯১ ও ৯৬ এ জাতীয় পার্টির দখলে যায় আসনটি। আর সর্বশেষ ২০০১ থেকে এ পর্যন্ত সদর আসন নিজেদের দখলে রেখেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর