দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে আওয়ামী লীগসহ ২০টি দল এবং স্বতন্ত্র মিলিয়ে ১২৫ জন প্রার্থী অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ৫ দলের চেয়ারম্যানসহ ৯৫ প্রার্থীই খুইয়েছেন জামানত। সেই হিসেবে ৭৫ শতাংশ প্রার্থীরই জামানত বাজেয়াপ্ত হলো।
নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, কেউ যদি প্রদত্ত ভোটের সাড়ে ১২ শতাংশ না পান, তাহলে তিনি জামানতের টাকা ফেরত পাবেন না। এই ৯৫ প্রার্থী সেই ভোটের আশপাশেও যেতে পারেন নি।
পাঁচ দলের প্রধানের চূড়ান্ত লজ্জা:
চট্টগ্রামের চার আসনে এবার নির্বাচন করেছিলেন পাঁচ দলের প্রধান। কিন্তু একজনও জয় তো দূরে থাক, জামানতটাই রক্ষা করতে পারলেন না। তারা হলেন, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) চেয়ারম্যান এস এম আবুল কালাম আজাদ, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরামের (নিবন্ধনহীন) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন প্রকাশ ভিপি নাজিম, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান এম এ মতিন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমেদ মাইজভান্ডারি।
এর মধ্যে চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে জামানাত বাজেয়াপ্ত হয়েছে তরিকত ফেডারেশন এবং সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান যথাক্রমে নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি ও সাইফুদ্দিন আহমেদ মাইজভান্ডারির। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেওয়া নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি ফুলের মালা প্রতীকে পেয়েছেন মাত্র ২৩০ ভোট। আর সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমেদ মাইজভন্ডারি পেয়েছেন ৩ হাজার ১৩৮ ভোট। এখানে নৌকা প্রতীকের খাদিজাতুল আনোয়ার সনি ১ লাখ ৩৭০ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন।
চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরামের (নিবন্ধনহীন) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনে। দলটি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত দল না হওয়ায় তিনি তৃণমূল বিএনপির টিকেটে ভোটের মাঠে ছিলেন। সোনালী আশঁ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে এই প্রার্থী ভোট পেয়েছেন মাত্র ১ হাজার ৪০১টি। এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ লাঙ্গল প্রতীকে ৫০ হাজার ৯৭৭ ভোট নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন।
চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও-পাঁচলাইশ) আসন থেকে জামানত হারিয়েছেন গুলশান-বনানীর সাবেক সংসদ সদস্য বিএনএফের চেয়ারম্যান এস এম আবুল কালাম আজাদ। তিনি টেলিভিশন প্রতীকে পেয়েছেন মাত্র ১৫৯ ভোট। চট্টগ্রাম-৮ আসনে ৭৮ হাজার ২৬৬ ভোট নিয়ে জিতেছেন কেটলি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুচ ছালাম।
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে জামানত হারিয়েছেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান এম এ মতিন। মোমবাতি প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে এই প্রার্থী ভোট পেয়েছেন ৮ হাজার ২৯৮ টি। এই আসনে নৌকা নিয়ে জয়ী হয়েছেন মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী।
জামানত হারালেন ৯৫ জন:
চট্টগ্রামের প্রায় সবকটি আসনেই বেশিরভাগ প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন। এর মধ্যে চার আসনে নৌকার প্রার্থী ছাড়া বাকি সবাই জামানত হারিয়েছেন। এবার দেখা যাক কোন আসনে কতজন জামানত হারালেন।
চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মাহবুব উর রহমান রুহেল ও স্বতন্ত্র পার্থী গিয়াস উদ্দীন ছাড়া বাকি ৫ প্রার্থীরই জামানত বাতিল হয়েছে। একইভাবে চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে নৌকার প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হোসাইন মো. আবু তৈয়ব ছাড়া বাকি ৭ প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন।
চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে মাহফুজুর রহমান ও মো. জামাল উদ্দিন চৌধুরী ছাড়া বাকি ৫ জন প্রার্থীই জামানত বাতিল হয়েছে। চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড-নগর আংশিক) আসনে এসএম আল মামুন ছাড়া বাকি ৬ প্রার্থীর জামানত বাতিল হয়। চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী-নগর আংশিক) আসনে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী ছাড়া বাকি ৫ প্রার্থীর জামানত বাতিল হয়।
চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী ছাড়া বাকি ৪ প্রার্থীর জামানত বাতিল হয়েছে। চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে নৌকার প্রার্থী ড. মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ ছাড়া জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপিসহ ৫ প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন।
চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-নগর আংশিক) আসনটি জাতীয় পার্টির প্রার্থী সোলায়মান আলম শেঠকে ছেড়ে দিয়ে নৌকার প্রার্থী নোমান আল মাহমুদকে সরিয়ে নিয়েছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই শেঠ নিজের জামানতটাও রক্ষা করতে পারলেন না। এ আসনে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুচ ছালাম। এ আসনে শেঠসহ জামানত হারিয়েছেন ৮ জন। চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী ছাড়া বাকি ৬ প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন।
চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-পাহাড়তলী) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ মনজুর আলম ছাড়া ৮ প্রার্থী জামানত হারান। চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে এম আবদুল লতিফ ও জিয়াউল হক সুমন ছাড়া বাকি ৫ জনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনেও ৭ প্রার্থী হারিয়েছেন তাদের জামানত। চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ছাড়া ৬ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে নৌকার প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আবদুল জব্বার চৌধুরী ছাড়া ৬ জন জামানত খুয়েছেন। চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মোতালেব (ঈগল) এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী ছাড়া ৫ জন জামানত হারান। চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুজিবুর রহমান এবং আবদুল্লাহ কবির ছাড়া ৭ জন জামানত হারিয়েছেন।