বগুড়া-৭ আসনে ২ লাখ ভোট পাওয়া বাবলুর এবারের ভোট ২ হাজার

, নির্বাচন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম,বগুড়া | 2024-01-09 10:28:22

একাদশ সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৭(গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনে প্রায় দুই লাখ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম বাবলু। এবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মাত্র ২ হাজার ৭টি ভোট পেয়েছেন। ১ শতাংশেরও কম ভোট হওয়ায় হারিয়েছেন জামানত।

ভোট এত কম পাওয়া প্রসঙ্গে রেজাউল করিম বাবলু বলেন, ‘একাদশ সংসদ নির্বাচনে আমি বিএনপির সমর্থন পেয়ে তাদের ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলাম। এবারও গাবতলী উপজেলা বিএনপির এক নেতার আশ্বাসে প্রার্থী হয়েছিলাম। সেই নেতা এবার আমার সাথে প্রতারণা করেছে। খুব শীঘ্রই সংবাদ সম্মেলন করে সেই নেতার মুখোশ উন্মোচন করবো।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনে পরাজিত হলেও আমার লোকসান হয়নি। ঘোড়া যে দামে কিনেছিলাম সেই দামেই বিক্রি করেছি। মাঝে চাবুকটাই আমার লাভ। লোকসান হয়েছে বিএনপির। এই আসনে নৌকা মার্কার বিজয়ের মধ্য দিয়ে বিএনপির কফিনে শেষ পেরেক বসিয়ে দিল আওয়ামী লীগ।’

বগুড়ার গাবতলী উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাস্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান। সেকারণে রাজনৈতিক মহলে বিএনপির ঘাঁটি বা দুর্গ হিসেবে পরিচিত গাবতলী উপজেলা। বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এই আসন থেকে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে থাকেন।

২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল গাবতলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোর্শেদ মিল্টনকে। উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগপত্র কার্যকর না হওয়ায় মোর্শেদ মিল্টনের মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায়। আর আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থী না দিয়ে মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দেয়। জাতীয় পার্টির আলতাব হোসেন ছিলেন নাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী।

বর্তমান সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। নির্বাচিত হলে বিএনপিতে যোগদানে আশ্বাসে ভোট গ্রহণের আগের দিন বিএনপি রেজাউল করিম বাবলুকে সমর্থন দিয়ে ট্রাক মার্কায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানান। ফলে রাতারাতি দৃশ্যপট পাল্টে যায়। ১ লাখ ৯৮ হাজার ২০০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন রেজাউল করিম বাবলু। এরপর তিনি আর বিএনপিতে যোগ দেননি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ট্রাক প্রতীকে দাঁড়ান। তবে এবারের ভোট ২ হাজার ৭টি। আর এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে  নৌকা প্রতীকে ডাঃ মোস্তফা আলম নান্নু  ৯১ হাজার ২৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সমর্থনে রাতারাতি সংসদ সদস্য হয়ে যাওয়ার আশায় এবার এই আসনে সর্বোচ্চ সংখ্যক ২৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত ১৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এত বেশী সংখ্যক প্রার্থী বগুড়ার অপর ৬ টি আসনে ছিল না। কিন্তু এবার বিএনপি কাউকে সমর্থন না দেওয়ার কারনে ১২ জন প্রার্থী তাদের জামানত হারিয়েছেন।

জেলা নির্বাচন অফিসার মাহমুদ হাসান  জানান,নির্বাচন কমিশনের বিধিমালা অনুযায়ী জামানত রক্ষা করতে প্রার্থীকে প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগ  পেতে হবে।

জেলা রির্টানিং অফিসারের কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বগুড়া-৭ আসনে মোট ভোটার ৫ লাখ ১৩ হাজার ২৫৮ জন। ভোট পড়েছে এক লাখ ১২ হাজার ৪৫১ টি। বাতিল হয়েছে ৪ হাজার ৪৪৪ ভোট। প্রদত্ত ভোটের শতকরা হার ২১ দশমিক ৯৫ ভাগ। প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগ ১৪ হাজার ৫৬ ভোট পেলে প্রার্থী জামানত ফেরত পাবেন।

কিন্তু নির্বাচিত নৌকার প্রার্থী ছাড়া অপর ১২ জন প্রার্থীদের কেউ এত সংখ্যক ভোট পাননি। ফলে ১২ জনই তাদের জামানত ফেরত পাবেন না।

এত কম ভোট পাওয়া প্রসঙ্গে রেজাউল করিম বাবলু আরো বলেন,এই আসনে ব্যক্তি দেখে ভোট দেয় না। ২০১৮ সালে বিএনপির সমর্থনে নির্বাচিত হয়ে দলে যোগদান না করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন,বিএনপি থেকে নির্বাচনের পর কেউ যোগাযোগ করেনি।একারনে যোগদান করা হয়নি।তিনি বলেন,এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী ছিলাম না।কিন্তু বিএনপির এক নেতার আশ্বাসে প্রার্থী হয়েছি।

এপ্রসঙ্গে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও গাবতলী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম হেলাল বলেন, ২০১৮ সালে বিএনপি ভোট বর্জন করেনি।দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হওয়ার কারনে রেজাউল করিম বাবলুকে সমর্থন দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এবার বিএনপি ভোট বর্জন করেছে। যার কারনে কোন প্রার্থীকে আশ্বাস দেয়ার প্রশ্নই উঠে না। তিনি বলেন,রেজাউল করিম বাবলু কোন নেতার আশ্বাসে বিএনপির ভোট প্রত্যাশা করেছিলের সে বিষয়টি তাকে পরিস্কর  করে বলা উচিত।

এ সম্পর্কিত আরও খবর