মুজিবনগরে পরাজয়ের গ্লানি মুছতে তৎপর আ.লীগ

বিবিধ, নির্বাচন

মাজেদুল হক মানিক, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, মেহেরপুর, বার্তা২৪.কম  | 2023-08-15 21:37:31

সংসদ নির্বাচনের ডামাডোল শেষ হতে না হতেই মেহেরপুরের মুজিবনগরে এখন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। বিশেষ করে সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিভিন্নভাবে তাদের আগ্রহ জানান দিচ্ছেন। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু এ উপজেলা গঠনের পর দু’টি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে। তাই পরাজয়ের গ্লানি মুছতে এবার আগেভাগেই তৎপর আওয়ামী লীগ। তবে বিএনপি প্রার্থীদের কোনো সাড়া নেই।

জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আয়ুব হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জিয়া উদ্দীন বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক আমাম হোসেন মিলু, যুবলীগ নেতা কামরুল ইসলাম চাঁদু ও আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম মোল্লা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের জন্য গণসংযোগ করছেন।

আয়ুব হোসেন মুজিবনগর উপজেলা গঠন ও বাস্তবায়ন আন্দোলনের নেতা হিসেবে পরিচিত। ২০০০ সালে মুজিবনগর উপজেলা গঠনের বিষয়ে তার অন্যতম ভূমিকা ছিল। এছাড়াও ঐতিহাসিক মুজিবনগরের উন্নয়নের বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা আন্দোলন করে আলোচনায় ছিলেন। বর্তমানে মুজিবনগরকে পৌরসভায় রূপান্তরিত করার দাবি নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিচ্ছেন তিনি। আয়ুব হোসেন বাগোয়ান ইউনিয়নে দুইবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমাম হোসেন মিলু মহজানপুর ইউনিয়নে দুইবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নে তারও ভূমিকা রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘গত দু’টি উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান না থাকায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্থ হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের যারা নির্বাচিত চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন তারা নাশকতা মামলার আসামি। তাদের দিয়ে উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই এবার যেকোনো ভাবে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে আগেভাগে আমরা মাঠে নেমেছি। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে অবশ্যই জয়লাভ করব।’

গত দু’টি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জিয়া উদ্দীন বিশ্বাস। এছাড়াও তিনি বাগোয়ান ইউনিয়নে চারবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাদের গোপন ভোটে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মোল্লার কাছে পরাজিত হয়ে নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে বিএনপি প্রার্থী আমিরুল ইসলামের কাছে পরাজিত হন তিনি। এছাড়াও ২০১৪ সালের উপজেলা নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান পদে বিএনপি প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। দলীয় সমর্থন পেয়েও তিনি জয়লাভে ব্যর্থ হয়েছিলেন।

কামরুল ইসলাম চাঁদু ২০০৯ সালের নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন। পরবর্তী নির্বাচনে তিনি দলীয় সমর্থন পাননি এবং বিজয়ী হতে পারেননি।

অপর প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রফিকুল ইসলাম মোল্লা ২০০৯ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও নেতাকর্মীরা তাকে সেইভাবে সমর্থন দেয়নি। ফলে তিনিও পরাজিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে দলীয় সমর্থনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়েও জয়লাভে ব্যর্থ হয়েছিলেন।

জানা গেছে, বিগত সবগুলো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুজিবনগর উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে নৌকা প্রতীক বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু উপজেলা নির্বাচনে কেন পরাজয়? এই প্রশ্নের ব্যাপারে বাগোয়ান ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আয়ুব হোসেন জানান, ২০০৯ সালের নির্বাচনে রফিকুল ইসলাম মোল্লা দল সমর্থিত এবং জিয়া উদ্দীন বিশ্বাস বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। এ কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যেও ছিল দ্বিধা বিভক্তি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জিয়া উদ্দীন বিশ্বাসকে আবারো দল সমর্থন দেয়। ভাইস চেয়ারম্যান পদে ছিলেন রফিকুল ইসলাম মোল্লা। কিন্তু তাদের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা না থাকায় পরাজিত হন। তাই এবারের নির্বাচনে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে যোগ্য প্রার্থী বাছাই করতে পারলেই জয় নিশ্চিত বলে মনে করছেন তিনি।

জেলা আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারক পর্যায়ের কয়েকজন নেতা জানান, এবারে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তৎপর আওয়ামী লীগ। যাকে মনোনয়ন দিলে জয় আসবে এমন প্রার্থী বাছাই করা হবে।

নেতাকর্মীরা জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের পক্ষে সবাই কাজ করলেও উপজেলা নির্বাচনে স্থানীয় কোন্দল দেখা দেয়। এই কোন্দল নিরসন করা না গেলে এবারো ভরাডুবি হতে পারে।

তবে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের কেউ মাঠে নেই। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন তারা।

উল্লেখ্য, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুজিবনগরে নৌকা প্রতীক বিজয়ী হয়েছে। আর আগামী মার্চে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর