রাত পোহালেই ৮৭ উপজেলায় নির্বাচন

, নির্বাচন

জাহিদ রাকিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2024-05-28 22:31:40

রাত পোহালেই ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের তৃতীয় ধাপের ৮৭ উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। বুধবার (২৯ মে) সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে ভোট চলবে বিকাল চারটা পর্যন্ত। ভোটের মাঠে ভোটারের উপস্থিতি বাড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।

এই নির্বাচনের প্রথম ধাপে নির্বাচন কমিশনের প্রত্যাশা অনুযায়ী ভোটার উপস্থিতি হয়নি। দ্বিতীয় ধাপে ও একই হারে ভোট পড়েছে। এসময় গড়ে মোট ভোটারের ৩৬ দশমিক এক শতাংশ ভোট পড়েছিলো।

তৃতীয় ধাপে মোট ১১২ উপজেলায় তফশিল ঘোষণা করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। এই ধাপে পরবর্তীতে মামলা ও ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে ২৫ উপজেলা ভোট স্থগিত করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। তারমধ্যে রিমালের জন্য ২২টি উপজেলা ও মামলা ও পার্বত্য এলাকায় বিশেষ অভিযানের জন্য তিনটি উপজেলা নির্বাচন স্থগিত করে ইসি।

এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, কেউ যদি শৃঙ্খলা বিরোধী কাজ করে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে যে উপজেলাগুলোয় নির্বাচন বন্ধ আছে সেগুলোর ভোট করে হবে তা আবহাওয়া কবে ভালো হবে, সামনে ঈদ, স্থানীয় প্রশাসনের মতামত ইত্যাদি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আগামী ৫ জুন চতুর্থ ধাপে ভোট আছে, সেদিনও হতে পারে। এক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন মতামতের উপর নির্ভর করবে।

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, তৃতীয় ধাপের ৮৭ উপজেলায় তিন পদে এক হাজার ১১শত ৯৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। তারমধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৪১১ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪২৩ জন ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩১৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। সেই সাথে তিন পদে ১২জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছে।

ইসি জানায়, ৮৭ উপজেলার মধ্যে ১৭ উপজেয়ায় ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হবে। বাকি ৭০ উপজেলায় ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে। যেসব এলাকায় ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা ওইসব এলাকায় একটি করে কারিগরি টিম গঠন করেছে ইসি।

ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা

এদিকে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ও সাধারণ কেন্দ্রে বিবেচনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ইসি। সেই হিসেবে সাধারণ কেন্দ্রে ১৭জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ বা ১৯ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। এছাড়া দুর্গম এলাকায় সাধারণ কেন্দ্রে ১৯জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২০ বা ২১ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে ইসি। উপজেলার আয়তন, ভোটার সংখ্যা ও ভোটকেন্দ্রের গুরুত্ব বিবেচনায় প্রতি উপজেলায় ২ থেকে ৪ প্লাটুন বিজিবি দায়িত্ব পালন করবেন।

৮৭ উপজেলায় মোবাইল স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বিজিবি মোতায়েন থাকবে ৪৫৮ প্লাটুন। ভোটকেন্দ্রে পুলিশ মোতায়েন থাকবে ৪৭ হাজার ৮২৯ জন। স্ট্রাইকিং ও মোবাইল টিম হিসেবে পুলিশ থাকবে ১৯ হাজার ৫৭ জন। র‍্যাব থাকবে ২৭৬৮ জন ও আনসার সদস্য থাকবে এক লাখ ৯৩ হাজার ২৮৭ জন।

আচরণবিধি মানাতে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ

তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোট গ্রহণের তিন দিন পূর্ব পর্যন্ত আচরণ বিধি প্রতিপালন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও প্রতিরোধে প্রতি উপজেলায় একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট এবং ভোট গ্রহণের তিনদিন পূর্ব থেকে ভোট গ্রহণের পরের দিন পর্যন্ত প্রতি তিন ইউনিয়নের জন্য একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া ভোট গ্রহণের দুইদিন পূর্ব থেকে ভোট গ্রহণের দুইদিন পর পর্যন্ত প্রতি উপজেলায় একজন করে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবেন।

ভোটার ও ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা

৮৭ উপজেলায় মোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৩ হাজার ১৬টি। ভোট কক্ষ রয়েছে ৯১ হাজার ৫৮৯। অস্থায়ী ভোট কক্ষ রয়েছে আট হাজার ৮৪১টি। এই ধাপের মোট ভোটার তিন কোটি ৫২ লাখ চার হাজার ৭৪৮ জন। তারমধে পুরুষ ভোটার রয়েছেন এক কোটি ৭৯ লাখ পাঁচ হাজার ৪৬৪ জন। নারী ভোটার রয়েছে এক কোটি ৭২ লাখ ৯৯ হাজার ৪৭ জন ও হিজড়া ভোটার রয়েছেন ২৩৭ জন।

দেশের ৪৯৫টি উপজেলার মধ্যে চার ধাপে ৪৭৬টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। এর মধ্য কিছু উপজেলায় তফশিল ঘোষণায় মামলা জটিলতা ও বৈধ প্রার্থীর মৃত্যু ঘটনায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। বাকি ১৯টি উপজেলা পরিষদে নির্বাচনের সময় হয়নি, পরবর্তীতে সে সব পরিষদে ভোট নেওয়া হবে জানান সংস্থাটি।

এদিকে ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলায় ভোট সম্পন্ন হয়েছে গত ৮ মে, দ্বিতীয় ধাপের ভোট সম্পন্ন হয়েছে ২১ মে, ও চতুর্থ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ৫ জুন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। প্রথম ধাপে ২২টি, দ্বিতীয় ধাপে ২৪টি, তৃতীয় ধাপে ২১ ও চতুর্থ ধাপে দুটি উপজেলায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর