সদ্য শেষ হওয়া উপজেলা নির্বাচনের মতো সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের বিধিমালায় ব্যাপক রদবলের খবর পাওয়া যাচ্ছে। নতুন বিধিমালায় প্রার্থীদের জামানত ও নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণায় পরিবর্তনের ঈঙ্গিত দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
এই লক্ষ্যে ইসি গঠিত বিধি সংস্কার কমিটির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। নতুন এই বিধিমালা কার্যকর হবে আসন্ন ঢাকা উত্তর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে।
ইসি’র একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আসন্ন সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীদের জামানত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোটার স্বাক্ষর বিধান সংস্কারসহ একাধিক বিষয় পরিবর্তনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে ইসি। সে অনুযায়ী, মেয়র প্রার্থীদের জামানত বাড়বে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মনোয়নপত্র জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনশতাধিক ভোটারের স্বাক্ষরসহ জমা দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। একইসঙ্গে ১৫ শতাংশ ভোট না পেলে প্রার্থীদের জামানত বাজেয়াপ্ত করা হবে।
এর আগে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীদের জামানত বাড়ানোসহ একাধিক বিধিমালা সংস্কার করার বিষয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে, নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা প্রার্থীদের জামানত বাড়ানোর বিষয়ে বিরোধিতা করেছিলেন।
গণপ্রতিনিধিত্ব (সংশোধন) আইন-২০২৩ (আরপিও) অনুযায়ী, স্থানীয় সরকারের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যেসব এলাকায় পাঁচ লক্ষাধিক ভোটার থাকবে, সেখানে মেয়র প্রার্থীর জামানত ধরা হয়েছে ২০ হাজার টাকা। ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ ভোটার থাকলে প্রার্থীর জামানত হবে ৩০ হাজার টাকা এবং যেসব সিটিতে ২০ লাখের ওপরে ভোটার থাকবে, সেখানে মেয়র প্রার্থীর জামানত ১ লাখ দেওয়ার বিধান আছে।
সিটি নির্বাচনে বর্তমানে ওয়ার্ডে ভোটারের সংখ্যা অনুযায়ী কাউন্সিলর প্রার্থীদের জামানত ১০ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা জামানত দেওয়ার বিধান রয়েছে। নতুন বিধিমালা সংস্কার হলে সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীর সঙ্গে কাউন্সিল প্রার্থীদের জামানত বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিয়েছে ইসি। কিন্তু স্থানীয় সরকারের উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের জামানত ২০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের জামানত ১০ হাজার থেকে ৭৫ হাজার টাকা করে ‘উপজেলা নির্বাচন সংশোধন আইন-২০২৪’ করা হয়েছিল। তার ধারাবাহিকতায় এখন ইসি উপজেলা নির্বাচনের মতো সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের জামানত বাড়ানো হবে।
ইসির আইন বিধিমালা সংস্কার কমিটির নেতৃত্বে আছেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা।
সিটি নির্বাচনের নতুন বিধিমালা সংস্কারের বিষয়ে তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, উপজেলা নির্বাচনের মতো সিটি নির্বাচনে একাধিক বিধিমালা ও আচরণবিধি পরিবর্তন করার বিষয়টি আলোচনা চলছে। সিদ্ধান্তগুলো এখনো খসড়া পর্যায়ে আছে। ফলে এখনি চূড়ান্ত কিছু বলা যাবে না।
ইসির কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, আসন্ন দেশের সব সিটি নির্বাচনে আইন ও আচরণবিধি পরিবর্তন করা হবে। তার মধ্যে অন্যতম- নির্বাচনি প্রচারণায় সাদাকালো পোস্টারের পাশাপাশি রঙিন পোস্টার ব্যবহার, নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের আগে জনসংযোগ এবং ডিজিটাল মাধ্যমে নির্বাচনি প্রচার করা, মেয়র ও কাউন্সিল প্রার্থীদের জামানত বৃদ্ধি, ১৫ শতাংশ ভোট না পেলে জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।
এগুলো ছাড়াও একাধিক বিষয় পরিবর্তন করতে ইসির আইন বিধিমালা সংস্কার কমিটি কাজ করছে।
তারা আরো বলেন, ইতোমধ্যে খসড়া বিধিমালাগুলো নিয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। কমিটি প্রধান বিষয়টি আর পর্যালোচনার কথা বলেছেন। পরবর্তীতে কমিশন সভা খসড়ার সিদ্ধান্তগুলো চূড়ান্ত করলে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হবে। ভেটিং চূড়ান্ত হলে ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিধিগুলো কার্যকর হবে।