অনাগ্রহের ভোট, খুলনায় তবুও উত্তাপ

বিবিধ, নির্বাচন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, খুলনা, বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 21:01:18

সারাদেশে বইছে পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের হাওয়া। খুলনায়ও তার ব্যতিক্রম নয়। তাই নির্বাচনের চতুর্থ ধাপে খুলনার ৯টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩১ মার্চ। সে অনুযায়ী নির্বাচনের আর মাত্র ১০ দিন বাকি।

যদিও প্রার্থীরা নিয়মিত নির্বাচনী এলাকায় ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভোট চাচ্ছেন। তবে এবারের নির্বাচনী হাওয়া কিছুটা বিপরীতে ধাবমান। এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিরোধী দল দুর্বল হওয়ায় ভোটে অনাগ্রহ ভোটারদের। ভোটযুদ্ধে শামিল হতে একই উপজেলায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা প্রার্থী হয়েছেন। ফলে ভোটের উৎসবমুখর পরিবেশ বজায় না থাকায় দলীয় কোন্দল বাড়ছে। ভোটের দিন যত এগিয়ে আসছে নির্বাচনী এলাকায় উত্তাপ তত বাড়ছে। এতে ভোটারদের মনে ভোট নিয়ে ভয়ও বাড়ছে, আবার খুলনায় ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারাও শঙ্কায় আছেন।

দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অস্থিতিশীল পরিবেশ, সহিংসতা ও ভোটার উপস্থিতি দেখে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কর্মকর্তারা। বিশেষ করে সোমবার (১৮ মার্চ) উপজেলা নির্বাচন পরবর্তী হামলায় প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসারসহ কয়েকজ নিহতের ঘটনায় শঙ্কিত তারা।

বিগত সময়ে দায়িত্ব পালন করা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পাল করতে গেলে প্রভাবশালীদের হাতে নিগৃহীত হতে হয়। বেশিরভাগ সময় নীরব ভূমিকায় থাকতে হয়। প্রকাশ্যে ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনার স্বাক্ষী হলেও কিছুই বলার থাকে না। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করতে না চাইলেও চাকরিবিধিতে ঝামেলায় পড়ার ভয় থাকে। এছাড়া ক্ষমতাসীন দলের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে উভয় সংকটে পড়তে হয়। প্রভাবশালীদের কথামতো নির্বিকার না থাকলে তোপের মুখে পড়তে হয়, আবার প্রতিপক্ষ প্রার্থীও ক্ষমতাসীন দলের হলে আরও সমস্যা। উভয় গ্রুপের চাপে এখনই চরম ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।'

তেরখাদা উপজেলায় ভোটের দায়িত্ব পালন করবেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে দূরে থাকতে, কিন্তু পারলাম না। চাকরি রক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছি দায়িত্ব পালনে। এখনি প্রভাবশালী দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। না জানি নির্বাচনের দিন কি হয়!’

ডুমুরিয়া উপজেলার এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ‘মূল প্রতিদ্বন্দ্বী দু’জনই ক্ষমতাসীন দলের। এজন্য অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতেই পারে। সেক্ষেত্রে নিরাপদে থেকে দায়িত্ব পালন করা চরম ঝুঁকিপূর্ণ হবে মনে হচ্ছে। সব রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে আসলে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখী হতে হয় না। গতকালও (মঙ্গলবার) ডুমুরিয়ার চুকনগরে দু’প্রার্থীর কর্মীদের সংঘর্ষে ১০ জনের মতো আহত হয়েছে। দিন যত ঘনিয়ে আসছে, তত পরিস্থিতি উত্তপ্ত হচ্ছে।’

কয়রা উপজেলার সরকারি স্কুলের এক শিক্ষক বরেন, ‘২০১৬ সালে ২২ মার্চ অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনেও কয়রা সদরে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপট আরও ভয়াবহ। এরই মধ্যে কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। ক্ষমতাসীন দু’পক্ষের প্রার্থীরা নির্বাচনী সহিংসতায় মামলাও করেছেন।’

জানা গেছে, খুলনার তেরখাদা, দিঘলিয়া, কয়রা, ডুমুরিয়া অধিক ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা। এছাড়াও রূপসা, পাইকগাছা ও দাকোপ উপজেলায়ও ক্ষমতাসীন দলেরই বিদ্রোহী প্রার্থী প্রভাবশালী হওয়ায় আতঙ্কিত কর্মকর্তারা। বাকি দু’টি উপজেলা বটিয়াঘাটা ও ফুলতলায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত প্রার্থীরা। তবে ভাইস-চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে পক্ষ-বিপক্ষ উভয়েই প্রভাবশালী হওয়ায় বিরোধের শঙ্কা থেকেই যায়।

তথ্য মতে, গত বছরের ১৫ মে অনুষ্ঠিত খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে তিনটি কেন্দ্রে অনিয়মের দায়ে অভিযুক্ত ৫৭ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় কর্তৃপক্ষ। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের আলোকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের এক বছরের ইনক্রিমেন্ট বন্ধ, পদোন্নতি স্থগিত ও পরবর্তীতে ভোট কেন্দ্রের দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখার পরামর্শ দেয়। সে আলোকে জেলা নির্বাচন কার্যালয় গত কেসিসি নির্বাচনে বিতর্কিতদের বাদ দেয়।

খুলনা জেলা পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ্ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হবে। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে অধিক সংখ্যক ফোর্স মোতায়েন করা হবে। কেউ যেনো নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে এজন্য অপতৎপরতার বিরুদ্ধে জিরোটলারেন্সে থাকবে খুলনা জেলা পুলিশ।'

এ সময় ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে আসার আহ্বান জানান পুলিশ সুপার।

উপজেলা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা এম মাজহারুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘খুলনার ৯টি উপজেলার সকল প্রার্থী শান্তিপূর্ণ পরিবেশে প্রচারণায় ব্যস্ত। গত ১৫ মার্চ থেকে জেলার পোলিং, প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। উপজেলায় পর্যায়ক্রমে এ প্রশিক্ষণ চলবে ২৮ মার্চ পর্যন্ত। নির্বাচনে প্রার্থীদের আচরণবিধি পালনে প্রতিটি উপজেলায় দু’জন করে ম্যা‌জি‌স্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও নির্বাচন সুষ্ঠু করতে নির্বাচনের দু’দিন আগে থেকে ভোট গ্রহণের দু’দিন পর পর্যন্ত জুডিসিয়াল ও নির্বাহী ম্যা‌জি‌স্ট্রেটরা দায়িত্ব পালন করবেন। ফলে শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।'

তিনি আরেও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনের অনিহা সম্পর্কে কোনো লিখিত অভিযোগ জমা হয়নি।'

জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্য মতে, খুলনার ৯টি উপজেলায় ৫ শতাংশ অতিরিক্তসহ সম্ভাব্য প্রিসাইডিং ও সহ-প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন ৪ হাজার ২৮৯ জন, পোলিং অফিসার থাকবেন ৭ হাজার ৪৮০ জন।

উল্লেখ্য, খুলনায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৯টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ২৫ জন, ভাইস-চেয়ারম্যান পদে ৫০ জন ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে ৩৬ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর