খুলনায় বইছে পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের হাওয়া। নির্বাচনের আর মাত্র ১ দিন বাকি। ভোটযুদ্ধে অংশ নেয়া প্রার্থীরা শেষমুহুর্তের প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভোট প্রার্থনা করছেন। এর মধ্যে বটিয়াঘাটা ও ফুলতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রার্থী আশরাফুল আলম খান ও শেখ আকরাম হোসেন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। আর ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাচন আগামী এপ্রিলের ১০ তারিখ পর্যন্ত স্থগিত করেছে হাইকোর্ট। বাকি ছয় উপজেলায় চতুর্থ ধাপে ৩১ মার্চ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
তবে খুলনার এ ছয় উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন আওয়ামী লীগেরই বিদ্রোহী প্রার্থীরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দাকোপ উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবুল হোসেন। এ উপজেলায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন মুনসুর আলী খান।
পাইকগাছায় উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগ নেতা গাজী মোহাম্মদ আলী। এ উপজেলায় তাকে পড়তে হবে কঠিন লড়াইয়ের মুখে। বিশেষ করে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রশিদুজ্জামান মোড়ল ও সাবেক এমপিপুত্র শেখ মনিরুল ইসলাম এর সাথে তার ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
কয়রায় উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম মহসিন রেজা। এ উপজেলায় আ’লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়ছেন বিদ্রোহী প্রার্থী এস এম শফিকুল ইসলাম ও আব্দুল্লাহ আল মামুন। ইতোমধ্যে বিদ্রোহী প্রার্থী এস এম শফিকুল ইসলামের প্রচারণায় দেখা গেছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে। এছাড়া ওই দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।
রূপসায় উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন বাদশা। এ উপজেলায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে শক্ত প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আলী আকবর। এছাড়া আওয়ামী লীগের ওলিয়ার রহমান মাস্টারও রয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে।
তেরখাদায় উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান সরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চু। এ উপজেলায় জেলা আওয়ামী লীগের নেতা এড. মোস্তাফিজুর রহমান কালু বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগ নেতা শেখ শহিদুল ইসলামও রয়েছেন ভোটের লড়াইয়ে।
দিঘলিয়ায় উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান খান নজরুল ইসলাম। এ উপজেলায় তার দুই কঠিন প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মারুফুল ইসলাম ও মল্লিক মহিউদ্দিন। এ উপজেলায়ও ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়া ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের কারণও বিদ্রোহী প্রার্থী। এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন গুটুদিয়া ইউপি’র সদ্য পদত্যাগী চেয়ারম্যান মোস্তফা সরোয়ার। তার কঠিন প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী আব্দুল হাদি’র পুত্র গাজী এজাজ আহম্মেদ ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহনেওয়াজ হোসেন জোয়াদ্দার। স্বয়ং স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ বিদ্রোহী প্রার্থী শাহনেওয়াজ হোসেন জোয়াদ্দারের পক্ষে কাজ করছেন বলে জানা গেছে। এ উপজেলায় ইতোমধ্যে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর (মোস্তফা ও এজাজ) মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়া প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে স্থানীয় এমপির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরেছেন নৌকার প্রার্থী মোস্তফা সারোয়ার। বিদ্রোহী প্রার্থী শাহনেওয়াজ হোসেন জোয়াদ্দারের হাইকোর্টের রিটের কারণে এ উপজেলায় স্থগিত হয়েছে নির্বাচন।
বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ বার্তা২৪. কম কে বলেন, ‘চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ দিয়েছে। আর ভাইস চেয়ারম্যান পদে উন্মুক্ত প্রার্থী ঘোষণা করেছে আ’লীগ। স্থানীয় নেতাদের সিদ্ধান্ত নয় এটা। আর নৌকার প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হলেও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের কারণে চেয়ারম্যান পদ কেন্দ্র থেকে 'ওপেন' রাখা হয়েছে। এখানে যে কেউ প্রার্থী হতে পারে। তবে তিনি দলের সমর্থন পাবেন না। যে কারণে এবার সব উপজেলায়ই দলের একাধিক প্রার্থী।'