এরশাদের আসনে উপ-নির্বাচনে থাকছে প্রয়োজনের দ্বিগুণ ইভিএম

বিবিধ, নির্বাচন

ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-31 17:05:48

সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে রংপুর-৩ আসন। এ আসনের উপ-নির্বাচন হবে আগামী ৫ অক্টোবর। এ উপ-নির্বাচনে সম্পূর্ণ ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে। প্রতিটি বুথে কোনো ধরনের ত্রুটি দেখা গেলে বিকল্প হিসেবে রাখা হবে অতিরিক্ত একটি করে ইভিএম। তবে সম্প্রতি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ইভিএম ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এর কোনো প্রভাব ভোটে পড়বে না বলে জানিয়েছেন ইভিএম সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, রংপুর-৩ আসনে ১৭৫টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে পোলিং বুথ রয়েছে এক হাজার ২৩টি। প্রতিটি বুথে একটি করে ইভিএম মেশিন প্রয়োজন হয়। তবে প্রতিটি বুথের জন্য অতিরিক্ত আরো একটি করে ইভিএম মেশিন সেখানে রাখা হবে। মেশিনে কোনো সমস্যা দেখা দিলে অতিরিক্ত মেশিনটি ভোটের কাজে ব্যবহার করা হবে। আর এ নির্বাচনে ইভিএম মেশিনগুলো নিয়ন্ত্রণ করবেন সেনা বাহিনীর প্রশিক্ষিত সদস্যরা।

এছাড়াও নির্বাচনী এলাকায় ভোটারদের উৎসাহ উদ্দীপনা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষিত করে তোলার জন্য প্রচারণা চালাবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরই অংশ হিসেবে ভোটের দুই দিন আগে আগামী ৩ অক্টোবর এ আসনের সব কেন্দ্রে দিনভর ইভিএমে ‘অনুশীলনমূলক’ ভোট দিতে পারবেন ভোটাররা। ওই দিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত আগ্রহীরা কেন্দ্রে গিয়ে কীভাবে ভোট দেবেন, তা জানতে পারবেন।

এ বিষয়ে ‘ইভিএম ব্যবহার’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. কামাল উদ্দিন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘রংপুর-৩ উপ-নির্বাচনের জন্য আমাদের এক হাজার ২৩টি ইভিএম প্রয়োজন হবে। তবে ব্যাকআপ হিসেবে প্রতি বুথে আরো একটি করে ইভিএম রাখা হবে। সেক্ষেত্রে সেখানে মোট দুই হাজার ৪৬টি ইভিএম মেশিন লাগবে। আর ভোটারদের ইভিএম সম্পর্কে ধারণা দিতে ৩ অক্টোবর মক (অনুশীলনমূলক) ভোটিং অনুষ্ঠিত হবে।’

গত ৮ সেপ্টেম্বর এ উপ-নির্বাচনের জন্য নতুন চার হাজার ইভিএম আনা হয়। সেদিন রাতে কমিশনের বেজমেন্টে ইভিএমের সংরক্ষিত কক্ষে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে সেখানে থাকা কিছু ইভিএমের মনিটর ও ক্যাবল পুড়ে যায়, ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিছু মেশিনও। পরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটি ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করে জানায়, অগ্নিকাণ্ডে ইভিএম কন্ট্রোল ইউনিট ৫৯টি, ব্যাটারি ৪৭টি, ব্যালট ৭৮৯টি, মনিটর এক হাজার ২৩৩টি, ক্যাবল ৫৫৭ সেট এবং মনিটরের ৬৪টি ব্যাটারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি উইং) মহাপরিচালক ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ইভিএমের সংখা খুবই সামান্য। আমাদের এখানে কয়েক হাজার ইভিএম ছিল, সেই তুলনায় খুব একটা ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আর রংপুরের নির্বাচনের জন্য যতগুলো ইভিএম সংরক্ষিত থাকার কথা, তার চেয়ে অনেক বেশি ইভিএম আমাদের রয়েছে। আমরা সব নির্বাচনেই ইভিএমে ভোট করার দিকেই আগাচ্ছি, ফলে এ বিষয়ে আমাদের সব সময়ই প্রস্তুতি রয়েছে।’

ইসির কর্মকর্তারা জানান, ইভিএম যন্ত্রে আঙ্গুলের ছাপ, ভোটার নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর বা স্মার্ট পরিচয়পত্র ব্যবহার করে ভোটার শনাক্ত করা হয়। নির্দিষ্ট কেন্দ্রের ভোটকক্ষে একজন পোলিং অফিসার ভোটার ভেরিফিকেশনের কাজটি করেন। ডেটাবেজে ভোটার বৈধ বা অবৈধ হিসেবে শনাক্ত হলে প্রজেক্টরের মাধ্যমে তা দেখতে পান পোলিং এজেন্টরা। ভোটার বৈধ হলে মেশিনে কুইক রেসপন্স কোড (QR CODE) এবং কিছু তথ্য সম্বলিত একটি টোকেন প্রিন্ট হবে, যা ভোটারকে দেওয়া হয়।

ভোটার টোকেন নিয়ে সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কাছে গেলে ভোটিং মেশিনের QR CODE স্ক্যানারের মাধ্যমে তার টোকেন শনাক্ত করে গোপন কক্ষে থাকা ব্যালট ইউনিটে ব্যালট ইস্যু করা হবে। ভোটার পছন্দের প্রার্থী ও প্রতীক দেখে বাঁ দিকের বোতামে চাপ দিয়ে সিলেক্ট করবেন। ওই ব্যালট ইউনিটে সবুজ রংয়ের CONFIRM বোতামে চাপ দিলে তার ভোট দেওয়া হয়ে যাবে। কখনো ভুল প্রতীক সিলেক্ট করা হলে ব্যালট ইউনিটের লাল রংয়ের CANCEL বোতাম চেপে পরে যে কোনো প্রতীক আবার সিলেক্ট করা যাবে। এভাবে দুই বার CANCEL করা যাবে, তৃতীয়বার যেটি সিলেক্ট করা হবে, সেটি বৈধ ভোট হিসেবে গৃহীত হবে।

গত ১৪ জুলাই রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন এইচএম এরশাদ। এতে শূন্য হয় এরশাদের রংপুর-৩ আসন। এরপর ১৬ জুলাই সংসদ সচিবালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) আ ই ম গোলাম কিবরিয়া আসনটি শূন্য হওয়ার গেজেট প্রকাশ করেন।

উল্লেখ্য, রংপুর-৩ আসনে ১৭৫টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এ আসনে মোট ভোটার চার লাখ ৪১ হাজার ৬৭১ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার দুই লাখ ২১ হাজার ১০৯ জন আর নারী ভোটার রয়েছেন দুই লাখ ২০ হাজার ৫৬২ জন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর