শেষ পর্যন্ত ঢাকা উত্তর সিটির ভোটে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করে শেষটা দেখে ছাড়বেন বলে জানিয়েছেন বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুর ২টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইটিআই ভবনে উত্তর সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাসেমের কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রের প্রতি বিশ্বাস রেখে আমরা মনোনয়র ফরম জমা দিয়েছি। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা আমাদের সন্দেহ আছে। গতবার বিতর্কিত নির্বাচন যেহেতু হয়েছে, ইভিএম যেন না হয়, সেটি আমরা বলেছি। নির্বাচন নিয়ে আমরা অত্যন্ত সিরিয়াস। আশঙ্কা থাকলেও চেষ্টা করছি শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আগের দাবিগুলো আবার করছি। গত নির্বাচনের পরে অনেক নির্বাচন হয়েছে, শেষ পর্যন্ত আমরা ছিলাম। ভোটের কোনো অভিযোগ কিন্তু তদন্ত করা হয়নি। ভোটাররা ভোট দিতে পারেনি গতবার। গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা রেখে সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে কমিশনের সঙ্গে সংলাপের চেষ্টা করব।
কমিশনের প্রতি জনগণের আস্থা নেই। জনগণের ওপর আস্থা রেখে আমরা ভোট করছি। গতবার পরিস্থিতি যেটা হয়েছিল, সেজন্য নির্বাচন বর্জন করেছিলাম। এবার শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাবব। শেষটা দেখে ছাড়ব, যোগ করেন তাবিথ।
তিনি আরো বলেন, ইভিএম নিয়ে কমিশন আমাদের সঙ্গে বসবে। আমরা আশা করি, ইভিএমে ভোট না করার ব্যাপারে তাদের কনভিনস করতে পারব।
তাবিথ আউয়াল বলেন, জনগণের প্রতি আস্থা রেখে এ নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। কারণ জনগণ বারবার বিএনপিকে ভোট দিতে চেয়েছিল। সেই জনগণকে নিয়েই আমরা মাঠে নেমেছি।
এ সময় সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চান, আপনাদের নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা নেই, সরকারের প্রতি আস্থা নেই, প্রশাসনের প্রতি আস্থা নেই- তাহলে কোন ভরসায় এ নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন? জবাবে তাবিথ বলেন, শুধু আমাদের নয়, জনগণেরও এ তিনটি সংস্থার প্রতি কোনো আস্থা নেই। তবে আমরা নিজেদের এবং জনগণের প্রতি আস্থা রেখে এ নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। কারণ জনগণ বারবার বিএনপিকে ভোট দিতে চেয়েছে। জনগণকে নিয়েই আমরা মাঠে নেমেছি। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি বিশ্বাস রেখে আমরা এ নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। তারপরও আমরা আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় কিনা তা নিয়ে সন্দিহান।
এখানে সন্দেহ শুধু আমাদের একার নয়, সাধারণ জনগণও একই সন্দেহ করছে। জনগণ নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবে কি না, আর ভোট দিতে পারলেও তা ঠিকভাবে গণনা করা হবে কিনা, জনগণের এ সন্দেহ আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে তুলে ধরেছি। আমরা বলেছি, অতীতে একটি বিতর্কিত নির্বাচন হয়েছে, সে বিতর্ক আর না বাড়িয়ে এ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বন্ধ করুন। কারণ ইভিএম নিয়ে অনেক বিতর্কের সুযোগ রয়েছে, যোগ করেন তিনি।
তাবিথ বলেন, ইভিএম কেনার প্রক্রিয়া নিয়েও আমাদের অনেক প্রশ্ন রয়েছে। এ নিয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনেও কথা বলব। নির্বাচনে যত সমস্যা আসুক না কেন, সব সমস্যা অতিক্রম করে আমরা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকব। তবে তার মানে এই নয়, যেসব আশঙ্কা করছি, সেগুলো বহাল থাকলে আমরা তা মেনে নেব। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে। আশা করছি, আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে।
গত মেয়র নির্বাচনের পরেও অনেক নির্বাচন হয়েছে। সেসব নির্বাচনে বিএনপির শেষ পর্যন্ত থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাঠে থাকা অবস্থায় আমরা অনেকগুলো অভিযোগ করেছিলাম। সেগুলোর কোনোটিই আমলে নেওয়া হয়নি। তদন্ত করা হয়নি। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, যেটা ‘২৯’ এবং ৩০ ডিসেম্বর হয়েছিল সেখানে আমরা শেষ পর্যন্ত ছিলাম। সেখানে তো ভোট হয়নি, তাই গণনারও দরকার হয়নি। নির্বাচন কমিশনের কাছে আমাদের দাবি থাকবে, তারা যেন আমাদের অভিযোগগুলো যেন আমলে নিয়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেন।
গত মেয়র নির্বাচনের দিন মাঝ পথে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায় বিএনপি। অথচ জনগণ আপনাদের প্রতি আস্থা রেখে তিন লাখ ভোট দিয়েছিল, জনগণকে এবারও আপনারা হতাশ করবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, তার প্রতিবাদে আমরা নির্বাচন বর্জন করেছিলাম। আমরা চেষ্টা করেছিলাম, শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকার। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। তবে আমরা এবার শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকব এবং নির্বাচনের শেষটা দেখব।
তিনি বলেন, ২০১০ সাল থেকেই আমরা ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে কথা বলে আসছি। আমরা কারিগরি দল নিয়ে এসেছিলাম। তারপরও এটির সমাধান হয়নি। এবারও আমরা সে চেষ্টাই করব।
আওয়ামী লীগ দাবি করছে, জনগণ উন্নয়ন দেখে তাদের ভোট দেবে, তাহলে আপনাদের জনগণ কেন ভোট দেবে জানতে চাইলে তিনি জানান, জনগণ গণতান্ত্রিক অধিকার ফেরত পাওয়ার জন্য বিএনপিকে ভোট দেবে। তারা ভয়-ভীতির মধ্যে রয়েছে। এর থেকে তারা মুক্তি চায়। ভোটের অধিকার ফেরত চায়। জনগণ বিশ্বাস করে, খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে রাখা হয়েছে। এসব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য জনগণ বিএনপিকে অর্থাৎ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে।
এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
এর আগে গত ২৮ ডিসেম্বর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নির্বাচনে দলের মেয়র প্রার্থী হিসেবে তাবিথ আউয়ালকে মনোনয়ন দেয় বিএনপি।