ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণে কেউ লিখিতভাবে অভিযোগ জানালে নির্বাচন কমিশন (ইসি) তা পুনর্বিবেচনা করতে পারে বলে জানিয়েছেন ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর।
বুধবার (১ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে এ কথা জানান তিনি।
গণবিজ্ঞপ্তি জারিসহ সব প্রস্তুতির পর সিটি নির্বাচনের আগে ইভিএম বাদ দেয়া সম্ভব কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কমিশন সেটা পারে। কমিশনের সেই ক্ষমতা আছে। কমিশন যে কোনো সময় নির্বাচন স্থগিত করতে পারে, পিছিয়ে দিতে পারে, কোনো নির্বাচন যৌক্তিক কারণে বাতিল করতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘ইভিএমে ভোটের বিষয়ে না জানার কারণে আগে অনেকে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু চট্টগ্রাম ও বিভিন্ন পৌরসভার ভোটের পর কেউ এটি নিয়ে সমস্যা বা সন্দেহের কথা বলেনি। কমিশন তাদের আহ্বান করেছে, কারো সন্দেহ থাকলে কমিশনে এসে ইভিএম মেশিনগুলো দেখতে পারেন, দেখে তারা কি সিস্টেমে করা যায় বলতে পারেন। এছাড়া ভোটাররাও কেন্দ্রে এসে ভোটের পদ্ধতি দেখতে পারেন। তারপরও কেউ লিখিতভাবে কমিশনকে ইভিএমের বিষয়ে অভিযোগ জানালে কমিশন হয়তো সভায় বসবেন। তারপর যে সিদ্ধান্ত হবে, সেটি বাস্তবায়ন করা হবে।’
ইভিএমে ভোটের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইভিএমের বিষয়ে প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় ইভিএমে ভোট দেয়ার বিষয়ে বিজ্ঞাপন যাবে। দুই-একদিনের মধ্যে মোটামুটি সব পত্রিকায় আপনারা তা দেখতে পাবেন। এরপর তথ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেব যে সরকারি টেলিভিশনসহ সব বেসরকারি টেলিভিশনে যেন তা প্রচার করা হয়। এছাড়া সিনেমা হলগুলোতে সিনেমা শুরু হওয়ার আগে যেন ইভিএমে ভোট দেয়ার পদ্ধতি দেখানো হয়। সিটি করপোরেশনকে অনুরোধ করব, যেন বিলবোর্ডের মাধ্যমেও ইভিএমে ভোটের পদ্ধতি দেখানো হয়।’
আর মক ভোট যে কোনো মানুষ যে কোনো দিন নির্বাচনের আগে দিতে পারবে। কীভাবে ভোট দিতে হয়, তা সব ভোটারই নিজ নিজ কেন্দ্রে গিয়ে প্র্যাক্টিস করে আসতে পারবে বলেও জানান তিনি।
মো. আলমগীর বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে দুই-একজন মানুষ যে আশঙ্কা করছে, এ প্রচারের পর এগুলো থাকবে না। তাদের আস্থা ফিরে আসবে বলে আমার মনে হয়। কোনো প্রার্থী যদি ভোট পুনঃগণনা করতে চান, ইভিএমে তার সুযোগ রয়েছে। তারা নির্বাচন কমিশনের কাছে ভোট পুনঃগণনার জন্য আবেদন করতে পারে। তাদের আবদনের পরিপ্রেক্ষিতে টেকনিক্যাল টিম গঠন করে তা তদন্ত করা হবে। আবার কমিশনের ভোট গণনায় সন্তুষ্ট না হলে তারা আদালতে যেতে পারে। তখনও আবার টিম গঠন করে তদন্ত করা হবে।’
সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে ইভিএমে কত শতাংশ ভোট সংরক্ষিত থাকবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশ ভোট সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে সংরক্ষিত থাকবে। তাও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার নিজে চাইলে করতে পারবেন না, এজন্য ভোটরদের তাকে অনুরোধ করতে হবে। অনেক ভোটারের আঙুলের ছাপ কোয়ালিটি প্যুর থাকলে, তার ছাপ না মিললে ভোটার যদি তাকে অনুরোধ করে, তাহলে তার ব্যালট ওপেন করে দিতে পারবে। কিন্তু ব্যালটে নিজের আঙুলের ছাপ না এলেও ভোটার যদি তার মাধ্যমে ভোট দিতে না চায়, তাহলে তাকে বাধ্য করা হবে না। আর ব্যালট ওপেনের পর বুথের ভেতরে গিয়ে ভোটার ভোট দেবে।’
ভোটার সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারকে ব্যালট বের করে দিতে অনুরোধ জানালে সেই রেকর্ডও থাকবে বলে জানান মো. আলমগীর।
উল্লেখ্য, ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৩১ ডিসেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ২ জানুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহার ৯ জানুয়ারি, প্রতীক বরাদ্দ হবে ১০ জানুয়ারি। আর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ৩০ জানুয়ারি। আর সম্পূর্ণ ভোট হবে ইভিএমে।