১৫০ কেন্দ্রে একসঙ্গে ভোট ও পূজা, থাকবে বাড়তি নিরাপত্তা

, নির্বাচন

ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 05:48:57

আসন্ন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৫২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৫০ কেন্দ্রে ভোট ও সরস্বতী পূজা একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে। এর ফলে এসব কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়ে বাড়তি নিরাপত্তা চেয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। আর কমিশন বলছে ভোট ও পূজা একসঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে পালনে এসব কেন্দ্রে থাকবে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

দুই রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষনে দেখা গেছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে ৫২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৫০ কেন্দ্রে ৮৯৫টি কক্ষ রয়েছে, যেখানে পূজা ও ভোট একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে। এতে মোট ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৫৩ জন ভোটার ভোট দেবেন। এরমধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৫৮ হাজার ৫০৪ এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭৭ হাজার ৫৪৯ জন। দুই সিটিতে মোট কেন্দ্র রয়েছে- ২ হাজার ৪৬৮টি।

উত্তর সিটিতে ২৭টি প্রতিষ্ঠানের ৯৪টি কেন্দ্রের ৫৫৬টি কক্ষ রয়েছে, যেখানে পূজা ও ভোট একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে। এতে মোট ২ লাখ ১৮ হাজার ৯৪৫ জন ভোটার ভোট দেবেন। এরমধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ০৩ হাজার ৭৭৪ জন এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১৫ হাজার ১৭১ জন। এই সিটিতে তিনটি কেন্দ্রে ৬ হাজার ৩২৫ জন নারী ও পুরুষ ভোটার একই সঙ্গে ভোট প্রদান করবেন। এরমধ্যে নারী ২ হাজার ৮৫২ জন আর পুরুষ ৩ হাজার ৪৩৭ জন। এই সিটিতে মোট কেন্দ্র ১ হাজার ৩১৮টি।

আর দক্ষিণ সিটিতে ২৫টি প্রতিষ্ঠানের ৫৬টি কেন্দ্রের ৩৩০টি কক্ষ রয়েছে, যেখানে পূজা ও ভোট একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে। এতে মোট ১ লাখ ১৭ হাজার ১০৮ জন ভোটার ভোট দেবেন। এরমধ্যে নারী ভোটার ৫৪ হাজার ৭৩০ জন এবং পুরুষ ভোটার ৬২ হাজার ৩৭৮ জন। এই সিটিতে ১৯ কেন্দ্রে ৬৪ হাজার ৩১৮ জন নারী ও পুরুষ ভোটার একই সঙ্গে ভোট প্রদান করবেন। এরমধ্যে নারী ২৩ হাজার ৩৭৩ জন আর পুরুষ ভোটার ৪০ হাজার ৯৪৫ জন। এই সিটিতে মোট কেন্দ্র ১ হাজার ১৫০টি।

একই কেন্দ্রে ভোট ও পূজার কারণে নিরাপত্তা শঙ্কা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে দক্ষিণ সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, কিছুটা সমস্যা তো রয়েছেই। যারা পূজা করতে আসবে তাদের হয়ত কিছুটা তল্লাশী করে প্রবেশ করাতে হবে। এক্ষেত্রে বাড়তি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লাগবে। আমরা বলেছি যে সিকিউরিটি অবশ্যই ইনশিউর করতে হবে। বাড়তি নিরাপত্তা তো রাখতেই হবে। কারণ তাদের দিকটিও দেখতে হবে, আবার নির্বাচনেরও যাতে বিঘ্ন না ঘটে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। আমরা এটা নিয়ে মিটিংও করেছি। আর প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে আমরা জানতে চেয়েছি ভোট ও পূজা একসঙ্গে হলে বিকল্প ব্যবস্থা রাখা যায় কিনা। তারা বলেছে, বিকল্প অপশন রয়েছে, স্কুলের অডিটোরিয়াম বা প্যান্ডেল করে আলাদাভাবে করা যাবে।

এ বিষয়ে উত্তর সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবুল কাসেম বার্তা২৪.কমকে বলেন, যেহেতু এখন পর্যন্ত ভোট ও পূজা একসঙ্গে হবে বলেই সিদ্ধান্ত আছে, আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। ভোট ও পূজা যেন একসঙ্গে শান্তিপূর্ণ হয় সে জন্য আমরা বাড়তি নিরাপত্তা চাই। যাতে ভোট বা পূজা কোনটিতেই ব্যাঘাত না ঘটে।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, পূজার কারণে পূজার কারণে ভোটের তারিখ পরিবর্তনে করা রিট আবেদন খারিজের পর নির্বাচন কমিশনারদের নিয়ে বুধবার বৈঠক করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)। সেখানে দুই রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ভোট এবং পূজা একসঙ্গে যেসব কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে সে বিষয়ে আলোচনা হয়। সর্বশেষ বৃহস্পতিবারও এ নিয়ে দুই রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সচিবকে নিয়ে বৈঠকে বসেন সিইসি। সেখানে ভোট ও পূজা একসঙ্গে হলে সেসব নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাড়তি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের দাবি জানান দুই রিটার্নিং কর্মকর্তা। এসময় তাদের কাছ থেকে কতটি প্রতিষ্ঠানে এবং কতটি কেন্দ্রে একসঙ্গে ভোট ও পূজা হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য নেয়া হয়। আর ভোটে এসব কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তা থাকবে বলেও নিশ্চিত করা হয়। এক্ষেত্রে সেসব কেন্দ্রে পূজায় আগতদের তল্লাশী করে প্রবেশ করানোসহ বেশ কিছু বিষয়ে পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে কমিশন।

দুই সিটির নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ও পূজা একসঙ্গে করার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা শঙ্কা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপস) কৃষ্ণ পদ রায় বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেবো। এ জন্য একই সঙ্গে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। যেহেতু ভোট এবং পূজা একই কেন্দ্রে এক সঙ্গে চলবে সেহেতু ভোটার এবং উৎসব পালনকারীদের যাতে কোন ধরনের কোন সমস্যা না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এখনও পর্যন্ত আমরা কোন শঙ্কা দেখছি না।

নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ভোটকেন্দ্র এবং যেখানে পূজা হবে এমন জায়গাগুলোতে আইশৃঙ্খলা বাহিনীকে বেশি নিরাপত্তা জোরদার করতে বলব। এখানে তেমন সমস্যা হওয়ার কথা না। কোথাও কোন অনাকাঙ্খত ঘটনা ঘটলে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।

নির্বাচনের আচরন বিধি অনুযায়ী, ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনি কর্মকর্তা-কর্মচারি, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, নির্বাচনী এজেন্ট, নির্বাচনি পর্যবেক্ষক, কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত ব্যক্তিবর্গ, ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ এবং ভোটারদেরই প্রবেশাধিকার থাকবে। আর ভোটার স্লিপ প্রদানে নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও কোন ভোটকেন্দ্রের ১৮০ মিটারের মধ্যে ভোটার স্লিপ প্রদান করা যাবে না।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব মো: আলমগীর বার্তা২৪.কমকে বলেন, পূজা ও ভোট একসঙ্গে হবেএটি সাংঘর্ষিক হবে না। বলা আছে, পূজার রুম বাদ দিয়ে বাকি জায়গায় ভোটগ্রহনের ব্যবস্থা করা হবে। এমনও বলা আছে যে এই স্কুলে পূজা করলে নির্বাচন করার জায়গায় নেই তাহলে সেই কেন্দ্রই বাদ দিয়ে দেবে এবং পাশে অন্য কোন কেন্দ্র দেখবে। তবে পূজায় কোন ডিস্টার্ব করা যাবে না।

উত্তরে যে ২৭ প্রতিষ্ঠানে পূজা ও ভোট একসঙ্গে (কেন্দ্রসহ)-

সরকারি কালাচাদপুর হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ (কেন্দ্র-৯), ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ (কেন্দ্র-৪), ডক্টর মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ আদর্শ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যাপীঠ (কেন্দ্র-৩), মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় (কেন্দ্র-৪), কল্যাণপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ (কেন্দ্র-৭), বনানী মডেল স্কুল (কেন্দ্র-৪), সরকারি তিতুমীর কলেজ (কেন্দ্র-৪), তেজগাঁও শিল্প এলাকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (কেন্দ্র-৩), বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (কেন্দ্র-৪), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক (কেন্দ্র-২), ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট (কেন্দ্র-২), নাখালপাড়া হোসেন আলী উচ্চ বিদ্যালয় (কেন্দ্র-৬), ইস্পাহানি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ (কেন্দ্র-৫), সরকারি বিজ্ঞান কলেজ (কেন্দ্র-২), তেজগাঁও মহিলা কলেজ (কেন্দ্র-১), বটমুলী হোম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (কেন্দ্র-৪), রাজধানী উচ্চ বিদ্যালয় (কেন্দ্র-৫), তেজগাঁও ফার্ম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (কেন্দ্র-২), তেজগাঁও কলেজ (কেন্দ্র-৬), গণভবন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (কেন্দ্র-১), সরকারি সংগীত কলেজ (কেন্দ্র-২), লায়ন্স অগ্রগতি শিক্ষা নিকেতন (হাইস্কুল) (কেন্দ্র-১), লালমাটিয়া হাউজিং সোসাইটি স্কুল অ্যান্ড কলেজ (কেন্দ্র-২), লালমাটিয়া মহিলা কলেজ (কেন্দ্র-৩), মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ (কেন্দ্র-২), ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ (কেন্দ্র-৪) এবং গ্রাফিক্স আর্টস ইনস্টিটিউট (কেন্দ্র-২)।

দক্ষিণে যে ২৫ প্রতিষ্ঠানে পূজা ও ভোট একসঙ্গে (কেন্দ্রসহ)-

রাজারবাগ আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (কেন্দ্র-৪), কমলাপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ (কেন্দ্র-২), লিটল বার্ড কিন্ডারগার্টেন (কেন্দ্র-১), ঢাকা কলেজ (কেন্দ্র-৪), গভ: ল্যাবরেটরি হাইস্কুল (কেন্দ্র-২), আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ (কেন্দ্র-২), অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজ (কেন্দ্র-২), ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ (কেন্দ্র-২), বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ (কেন্দ্র-৩), পোগোজ স্কুল (কেন্দ্র-২), ইস্ট বেঙ্গল ইনস্টিটিউট (কেন্দ্র-১), বুলবুল ললিতকলা একাডেমি (কেন্দ্র-২), বাংলাবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (কেন্দ্র-২), সিলভার ডেল প্রিপারেটরি অ্যান্ড গার্লস হাইস্কুল (কেন্দ্র-২), শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয় (কেন্দ্র-২), সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজ (কেন্দ্র-২), সিটি করপোরেশন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় (কেন্দ্র-৪), সবুজ বিদ্যাপিঠ উচ্চ বিদ্যালয় (কেন্দ্র-৩), কবি নজরুল সরকারি কলেজ (কেন্দ্র-২), ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (কেন্দ্র-১), সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ (কেন্দ্র-১), কে এল জুবিলী হাইস্কুল (কেন্দ্র-৪), গেন্ডারিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (কেন্দ্র-৪), বাংলা ব্যাংক আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় (কেন্দ্র-১) এবং ধার্মিকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (কেন্দ্র-১)।

প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল ৯ জানুয়ারি। পরে ১০ জানুয়ারি প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ করা হয়। আর ভোটগ্রহন করা হবে আগামী ৩০ জানুয়ারি। এই নির্বাচনে সব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহন করা হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর