আসন্ন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) থেকে মাঠে নামছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আর ভোটে অর্ধলক্ষ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ভোটকেন্দ্র এবং মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সে মোতায়েন থাকবে। ভোটের আগে-পরে চার দিনের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা পরিকল্পনায় নির্বাহী ও বিচারিক হাকিম নিয়ে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সে থাকবে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, এপিবিএন সদস্য। আর পুলিশসহ অঙ্গীভূত আনসার ও ভিডিপির সদস্যরা থাকবে কেন্দ্রে।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে জানা গেছে, সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ১৬ জন ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৮ জন সদস্য মোতায়েন থাকবে। গড়ে দুই সিটির ২ হাজার ৪৬৮ কেন্দ্রে পুলিশ এবং আনসার ভিডিপির সদস্যই থাকছেন ৪১ হাজার ৯৫৬ জন। আর পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে গঠিত ১২৯টি মোবাইল ফোর্সে থাকবে ১ হাজার ২৯০ জন, ৪৩টি স্ট্রাইকিং ফোর্সে থাকবে ৪৩০ জন, রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্সে থাকবে ৫২০ জন। প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে টিম হিসাবে দুই সিটিতে র্যাবের টিম থাকবে ১৩০টি। গড়ে ১১ জন করে এতে মোট ১ হাজার ৪৩০ জন র্যাব সদস্য থাকবে। এছাড়াও দুই সিটিতে র্যাবের ১০টি রিজার্ভ টিম থাকবে, এতে ১১০ জন সদস্য থাকবে। আর রিজার্ভসহ দুই সিটিতে ৭৫ প্লাটুন বিজিবি দায়িত্ব পালন করবে। গড়ে ৩০জন করে মোট ২ হাজার ২৫০ জন বিজিবি সদস্য থাকবে। সবমিলে দুই সিটিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় অর্ধলক্ষ সদস্য মাঠে থাকছে। আর দুই সিটিতে আজ ৩০ জানুয়ারি থেকে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি (রোববার) পর্যন্ত নির্বাচনী অপরাধ দমন ও সংক্ষিপ্ত বিচার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মাঠে থাকবে ১৭২জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ৬৪ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, মহিলা ভােটকেন্দ্রে ও ভােটকক্ষে মহিলা এবং পুরুষ ভােটকেন্দ্রে ও ভােটকক্ষে পুরুষ অঙ্গীভূত আনসার-ভিডিপি সদস্য নিয়ােগ করা হবে। ভােটকেন্দ্রে নিয়ােজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভােটগ্রহণের দিন এবং এর আগে দুইদিন ও পরে একদিনসহ মােট চারদিনের জন্য নিয়ােজিত থাকবে। তবে ভােটকেন্দ্রে অঙ্গীভূত আনসার ও ভিডিপি পাঁচ দিনের জন্য নিয়ােজিত থাকবে। ভােটগ্রহণের পূর্বের দিন ও রাতে ভােটগ্রহণ কর্মকর্তার সঙ্গে ভােটকেন্দ্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়ােজিত বাহিনীর সকল সদস্য ভােটকেন্দ্রে অবস্থান করবে। এছাড়াও মােবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স ভােট গ্রহণের দিন এবং তার আগে দুইদিন ও পরে এক দিন মােট চার দিন অর্থাৎ আজ ৩০ জানুয়ারি থেকে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ভােটকেন্দ্রের বাইরে র্যাব-পুলিশের টিম সংশ্লিষ্ট ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে। স্থানীয় চাহিদা, ভােটকেন্দ্রের অবস্থান ও ভােটকেন্দ্র সংখ্যা, ওয়ার্ড বিন্যাস ইত্যাদি বিবেচনায় এবং বাস্তবতার নিরিখে রিটার্নিং অফিসার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ঢাকা ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার এর সঙ্গে আলােচনা করে তাৎক্ষণিক ভােটকেন্দ্রের ফোর্স এবং মােবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সংখ্যা হ্রাস-বৃদ্ধি করতে পারবেন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জন্য পাঁচ প্লাটুন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জন্য পাঁচ প্লাটুন বিজিবি সুবিধাজনক স্থানে রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে নিয়ােজিত রাখা হবে। সেই সঙ্গে উভয় সিটি করপোরেশনে পাঁচটি করে র্যাবের রিজার্ভ টিম নিয়ােজিত রাখতে হবে। মােবাইল-স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়ােজিত প্রতিটি টিম, বিশেষ করে বিজিবির টহল দলে একজন করে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ােগ করতে হবে।
নির্বাচনের রুটিন ওয়ার্কের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার আর সন্ত্রাসী, মাস্তানদের আটকে পরিচালনা করছে বিশেষ অভিযান। সিটি নির্বাচনে জনস্বার্থে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে লাইসেন্সধারী অস্ত্রের মালিকদের ৩০ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুায়ারি পর্যন্ত সব ধরনের আগ্নেয়াস্ত্রসহ চলাফেরা করার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
এদিকে ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহ সততা, নিরপেক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করলে অবশ্যই সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে নির্বাচন সম্ভব হবে বলে মনে করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন স্বাক্ষরিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর নির্দেশনায় একথা বলা হয়েছে। এ সংক্রান্ত পরিপত্রে বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথাযথ ভূমিকার উপর সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান বহুলাংশে নির্ভর করে। এমনকি নির্বাচনে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পরিচালনায় দায়িত্বরত সেনা সদস্যরা। এই নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারকে। মন্ত্রিপরিষদ, মূখ্য, ইসিসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, পুলিশের আইজি, বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান, দুই রিটার্নিং অফিসারসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবাইকে এই পরিপত্র পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বলা হয়, দুই সিটি ভোটের নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা প্রদানের জন্য প্রতিকেন্দ্রে দুইজন করে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবে। তবে তারা কোনো ধরনের অস্ত্র, গোলাবারুদ বহন করবেন না। কিন্তু ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় দায়িত্ব পালন করবেন। দায়িত্ব পালনকালে ইভিএম-এর মাধ্যমে ভোটে প্রদান যথাযথভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করবেন। ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত কর্মকর্তা, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্যান্য সবার নিরাপত্তা, ইভিএমের নিরাপত্তা বিধান ও সুশৃঙ্খলভাবে ভোটগ্রহণের নিশ্চয়তা বিধানের লক্ষ্যে ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রয়োজনীয় সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এছাড়া রিটার্নিং অফিসার/সহকারী রিটার্নিং অফিসার এবং ক্ষেত্রমতে, প্রিজাইডিং অফিসার ভোটকেন্দ্রে অবস্থানকারী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং টহল কাজে নিয়োজিত পুলিশ, র্যাব, বিজিবির সহায়তায় সশস্ত্র বাহিনীর কারিগরি সদস্যদের যাবতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা প্রিজাইডিং অফিসারের সহায়তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করবেন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, সব কেন্দ্রে ইভিএম-এর ব্যবস্থাপনায় সশস্ত্র বাহিনীর ৫ হাজার ২৮০ জন সদস্য থাকবেন। তারা শুধু ইভিএম পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন।
মাঠে নামছে বিজিবি
ঢাকা উত্তর সিটিতে ২৭ প্লাটুন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৩৮ প্লাটুন বিজিবি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে দায়িত্ব পালন করবে। প্রতি দুইটি সাধারণ ওয়ার্ডে এক প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে। বিজিবির প্রতিটি টিমের সঙ্গে মোতায়েনকালীন সময়ে অর্থাৎ আজ ৩০ জানুয়ারি তারিখ হতে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি (রোববার) পর্যন্ত একজন করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৫৪ জন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৭৬ জনসহ ১৩০ জন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়ােজন হবে। আর বিজিবির ১ প্লাটুনে দুইটি টিম গঠন করা হবে।
বিজিবি মোতায়েন প্রসঙ্গে উত্তর সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবুল কাসেম বার্তা২৪.কম-কে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বিজিবির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সকাল নয়টা থেকেই বিজিবির সদস্যরা মাঠে থাকবেন। শুধু তারাই নয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন। প্রতিটির জন্য ওয়ার্ডে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং দুইটি ওয়ার্ডের জন্য একজন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট থাকছেন। ৩০ জানুয়ারি রাত ১২টা পর্যন্ত প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারবেন। এরপর যদি কোনো প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারণা চালায় সেক্ষেত্রে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা তাদের সংক্ষিপ্ত বিচার (সামারি ট্রায়াল) করে এরপর ব্যবস্থা নেবেন।
প্রসঙ্গত এবারের উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাধারণ ওয়ার্ড ৫৪, সংরক্ষিত ১৮, মোট ভোট কেন্দ্র ১৩১৮, মোট ভোট কক্ষের সংখ্যা ৭৮৪৬, মোট ভোটার ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩ জন। পুরুষ ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৭ জন ও মহিলা ১৪ লাখ ৬০ হাজার ৭০৬ জন রয়েছেন।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাধারণ ওয়ার্ড ৭৫, সংরক্ষিত ২৫, মোট ভোট কেন্দ্র ১১৫০, মোট ভোট কক্ষের সংখ্যা ৬৫৮৮, মোট ভোটার ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৪ জন। পুরুষ ১২ লাখ ৯৩ হাজার ৪৪১ জন ও মহিলা ১১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫৩ জন রয়েছেন।
আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।