ভোটের মাধ্যমে নিজেদের অভিভাবক খুঁজে নিয়েছেন ঢাকাবাসী। আগামী পাঁচ বছরের জন্য ঢাকার উন্নয়নের দায়িত্ব যাদের কাঁধে দেওয়া হলো, তারা কবে শপথ নেবেন আর কতদিনেই বা নিজেদের দায়িত্ব বুঝে নেবেন, তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা।
এদিকে, আইনি জটিলতায় দীর্ঘায়িত হতে পারে দায়িত্ব গ্রহণের সময়।
স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯ অনুযায়ী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর মেয়র বা কাউন্সিলরদের নাম সরকারি গেজেটে প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন। গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে সরকার বা সরকার কর্তৃক মনোনীত কর্তৃপক্ষ মেয়র ও সব কাউন্সিলরের শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা করবে।
সাধারণত নির্বাচনের পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিজয়ীদের নামে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। ২০১৫ সালের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছিল। আর গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে শপথ গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
গেজেটের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর গত ২ ফেব্রুয়ারি জানিয়েছেন, ফলাফল ঘোষণার সাত দিনের মধ্যে নির্বাচিতদের নামে গেজেট প্রকাশ করা হবে। সে ক্ষেত্রে আগামী ৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে যে কোনো দিন গেজেট প্রকাশিত হতে পারে।
গত নির্বাচনের পর গেজেট প্রকাশের সময় ধরলে ৩ বা ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই গেজেট প্রকাশ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ৪ ফেব্রুয়ারি গেজেট প্রকাশ হলে ৪ মে শপথ গ্রহণ করতে হবে নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের।
আইনের ৭ ধারার (১) উপবিধিতে বলা হয়েছে, মেয়র বা কোনো কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত ব্যক্তি তার দায়িত্ব গ্রহণের আগে নির্ধারিত পদ্ধতি ও সময়ের মধ্যে সরকার কর্তৃক মনোনীত ব্যক্তির সামনে শপথ গ্রহণ করবেন বা ঘোষণা দেবেন এবং শপথ বা ঘোষণা পত্রে স্বাক্ষর করবেন। সে ক্ষেত্রে মেয়রদের শপথ পাঠ করান সরকার প্রধান। আর কাউন্সিলরদের শপথ পাঠ করান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী।
আইনে সিটি করপোরেশনের মেয়াদ নিয়ে ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, করপোরেশন গঠিত হওয়ার পর প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর এর মেয়াদ থাকে। আর মেয়র ও অন্যান্য কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণের ৩০ দিনের মধ্যে প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে করপোরেশন পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান করপোরেশনের মেয়াদ উত্তীর্ণের ৩০ দিনের মধ্যে করপোরেশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হবে।
আইন অনুযায়ী, বর্তমান সিটি করপোরেশনের মেয়রের মেয়াদ আগামী মধ্য মে পর্যন্ত। কেননা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রথম সভা হয়েছিল ২০১৫ সালের ১৭ মে, আর উত্তরের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ১৪ মে। অর্থাৎ মে মাসের মাঝামাঝি শেষ হবে মেয়াদ। সে ক্ষেত্রে মধ্য মে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলাম ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসকে।
মধ্য মে পর্যন্ত যে অপেক্ষা করতে হবে, সে ইঙ্গিত দিয়েছেন ফজলে নূর তাপস। বিজয়ী হওয়ার পর ২ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় দায়িত্ব গ্রহণ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, গত মেয়াদে যারা নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের মেয়াদ শেষ হলেই আমরা দায়িত্ব গ্রহণ করব। অর্থাৎ আগামী ১৭ মে পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়রের পাঁচ বছর পূর্ণ হচ্ছে। এরপর নতুন মেয়ররা তাদের দায়িত্ব বুঝে নেবেন। আর উত্তরের মেয়রকেও দায়িত্ব পেতে অপেক্ষা করতে হবে ১৪ মে পর্যন্ত।