নির্বাচন এলেই নগরীর চেহারা পাল্টে যায়। দু'চোখ যে দিকে যায়, শুধু পোস্টার আর পোস্টার। দেখে মনে হয় যেন পোস্টারের নগরী। কিছু দিন আগে শেষ হওয়া ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রচারণার ধরনের বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। তবুও থেমে থাকেনি পোস্টারিং।
এবার নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় প্রচারণায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে বলা হয়েছে, নির্ধারিত জায়গায় প্রার্থীরা পোস্টার লাগাতে পারবেন, এর বাইরে নয়। এজন্য গত ২৩ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশন এক বৈঠকে প্রস্তাব করে- প্রার্থীরা আচরণ বিধিমালায় বর্ণিত সংখ্যক অনুমোদিত স্থায়ী স্থাপনায় নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন করতে পারবেন। ক্যাম্পগুলোতে প্রার্থীরা পোস্টার, ব্যানার, ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপন করতে পারবেন তারা। সিটি কর্পোরেশন আইনে অনুমোদিত ডেসিবেল মাত্রায় মাইক বা শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে।
এছাড়া নির্বাচনী আসনের ২১টি জায়গা নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন। সব প্রার্থী সেখানে নিজ নিজ স্ট্যান্ড স্থাপন করে পোস্টার লাগাতে পারবেন। একেকটি জায়গায় পর্যায়ক্রমে সব প্রার্থী শব্দযন্ত্র ব্যবহার করে অচরণ বিধিমালায় বর্ণিত সময়কালে প্রচারণা চালাতে পারবেন।
ইসির ওই নির্দেশনার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে আসছে ঢাকা-১০ আসনের উপ নির্বাচনকে ঘিরে। ধানমন্ডিতে ইউনিমার্টের সামনের সড়কে ফুটওভার ব্রিজের পাশে ছয়জন প্রার্থীর জন্য ছয়টি বোর্ড দেওয়া হয়েছে। বোর্ডে প্রার্থীদের নাম ও রাজনৈতিক দলের নাম দেওয়া রয়েছে। সেই নির্দিষ্ট বোর্ডেই প্রার্থীর পোস্টার লাগানো হয়েছে। এক বোর্ডে আওয়ামী লীগের নৌকার পোস্টার তো আরেক বোর্ডে রয়েছে বিএনপির ধানের শীষের পোস্টার। একে অন্যের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অপসংস্কৃতি থেকে বের হয়ে পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের এ যেন এক অনন্য নজির। যার ফলে রাস্তার ওলি-গলিতে পোস্টার দেখা যাচ্ছে না।
পোস্টার বিহীন পরিচ্ছন্ন নগরীতে স্বস্তি প্রকাশ করে ধানমন্ডির বাসিন্দা আয়নাল হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ইসির এ কাজটি ভালো হয়েছে। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যে হারে পোস্টার লাগানো হয়েছিল, তাতে ঢাকার পরিবেশ তো দূষিত হয়েছেই, পাশাপাশি আমাদের চলতেও কষ্ট হয়েছে। সব নির্বাচনে এ রকম নির্দেশনা থাকলে ভালো হবে।
ঢাকা-১০ আসনের উপ-নির্বাচনে ছয়জন প্রার্থীর সঙ্গে আলোচনা করে সমঝোতার মাধ্যমে ইসি ওই নির্দেশনা জারি করে। শর্ত মেনেই গত ১ মার্চ থেকে পোস্টারিং শুরু করেছেন প্রার্থীরা।ঢাকা-১০ আসন উপ-নির্বাচনের ছয় প্রার্থী হলেন-আওয়ামী লীগের মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিএনপির শেখ রবিউল আলম, জাতীয় পার্টির মো. শাহজাহান, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের নবাব খাজা আলী হাসান আসকারী, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মিজানুর রহমান চৌধুরী এবং প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের (পিডিপি) আব্দুর রহীম।
শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমরা অতীতের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। পোস্টারে আকাশ দেখা যাবে না ফরওয়ার্ড লুকিং পলিটিক্স অতীতের ঘাটাঘাটি করছি, আমরা যদি জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করে জনসেবা করতে চাই তাহলে এটা সঠিক না। পোস্টারের জন্য আকাশ দেখা যাবে না, দূষণ করব, ড্রেনেজ বন্ধ হয়ে যাবে এটা ঠিক না। শব্দ দূষণের জন্য মাইকিং সীমিত। গাড়ি চলবে। কারফিউ ভাব হলে কি উৎসব মনে হয়? সেজন্য আমরা ৬ প্রার্থী মিলে করতে পেরেছি। এটা ভালো দিক। আইনে বাধা দেয় না কিন্তু আমরা চেয়েছি মানুষের কল্যাণের জন্য রাজনীতি। এধরনের জিনিসগুলো না থাকাই বাঞ্ছনীয় আমরা সেটাই করছি।
বিএনপির শেখ রবিউল আলম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, বিএনপি এটাকে পজেটিভলি দেখছে। নির্বাচনের নামে বা প্রচারের নামে ঢাকা শহরকে যেভাবে জঞ্জল তৈরি করা হয়। শব্দ দূষণ, পরিবেশ দূষণ করে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে যার যেখানে ইচ্ছা মাইক বাজাচ্ছে। যেখানে ইচ্ছা পোস্টার লাগাচ্ছে সেটা তো কারো কাম্য না। একটা বাসযোগ্য শহরের জন্য এটা প্রয়োজন রয়েছে। এটাকে স্বাগত জানিয়েছি। যে বিধি বিধান দিয়েছে তা আমি মেনে চলছি ২১টা জায়গায় পোস্টার লাগানোর নির্দেশ দিয়েছে আমি সেই বিলবোর্ডে পোস্টার লাগিয়েছি। ব্যানার নিষিদ্ধ কিন্তু অনেকে দেখলাম বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর ব্যানার লাগিয়েছে। ইসিকে জানিয়েছি, উনারা বলছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে সর্তক করব। কিন্তু এখনো ব্যানার দেখছি। বাকি সব ঠিক আছে। এটা ভালো পদ্ধতি।
উল্লেখ্য, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ভোট করতে শেখ ফজলে নূর তাপস পদত্যাগ করায় ঢাকা-১০ আসনটি শূন্য হয়।ঢাকা-১০ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ১২ হাজার ২৮১ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ৬৮ হাজার ৭৭৭ জন এবং নারী ভোটার রয়েছেন ১ লাখ ৪৩ হাজার ৫০৪ জন। আসটিতে মোট ১১৭টি ভোটকেন্দ্রে ৭৩৪টি ভোটকক্ষ রয়েছে।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২১ মার্চ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট অনুষ্ঠিত হবে।