স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমাদের নিবেদন ‌‘লাল মোরগের ঝুঁটি’: শুকু

সিনেমা, বিনোদন

বিনোদন ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 22:34:40

২০১৫ সালে সরকারি অনুদান পেয়েছিলো ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ ছবিটি। নূরুল আলম আতিকের কাহিনী, চিত্রনাট্য ও পরিচালিত এই ছবির মাধ্যমে সিনেমার প্রযোজক হিসেবে অভিষেক হয় নাট্যকার ও নির্মাাতা মাতিয়া বানু শুকু’র।

সম্প্রতি গৌরিপুরে ছবিটির শুটিং শেষ হয়েছে। প্রযোজক হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতা ও ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ ছবিটি নিয়ে কথা বলেছেন মাতিয়া বানু শুকু।

আপনারা তো ২০১৬ সালে শ্যুট শুরু করেছিলেন ছবিটির। কিন্তু তখন শেষ করতে পারেননি কেনো?
যখন শুরু করেছিলাম তখনই আমাদের আকাঙ্ক্ষা ছিলো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে নতুন মাত্রার একটা ছবি নির্মাণ করার। সেই স্বপ্ন নিয়েই আমরা ছবির শুটিংও শুরু করেছিলাম। শুটিং করতে গিয়ে টের পেলাম, যে টাকা সরকারি অনুদান হিসেবে পেয়েছি তা দিয়ে আমাদের লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব না। তাই সেই সময় কিছুটা শ্যুট করে, আমাদের কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছিলো। এরপর থেকে আমরা আমাদের ছবির জন্য সহ-প্রযোজক ও পৃষ্ঠপোষক খুঁজতে থাকি। সে সময় অনেকেই আগ্রহ দেখালেও বাস্তবে কেউ আর এগিয়ে আসে না। এই করতে করতে আমাদের কয়েকটা বছর হারিয়ে গেলো।

মাতিয়া বানু শুকু

মুক্তিযুদ্ধের গল্পের ছবিতে অর্থলগ্নিকারী বা পৃষ্ঠপোষক পাওয়াটা কিছুটা মুশকিল বলে থাকেন অনেকে। আপনার অভিজ্ঞতা কী বলে?
লগ্নিকারী তো আগে ভাবেন টাকা ফেরত আসবে কী করে। এ ধরনের গল্পে টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয়টা নিশ্চিত করে বলা যায় না। আর মুক্তিযুদ্ধের গল্পে ছবি করতে গেলে তুলনামূলকভাবে টাকা কিছুটা বেশি লাগে, সেসব ভেবেই হয়তো লগ্নিকারীরা পিছিয়ে পড়েন। অথবা ভাবেন এটি সরকারের একার দায়।

প্রায় ৫ বছর পর আবার ছবির শুটিং শুরু করলেন। এবার কি তাহলে প্রযোজক পেয়েছেন?
দেখুন সরকারি অনুদানের ছবি যেহেতু প্রযোজক পাই আর না পাই আমাদের এ ছবির শ্যুট শেষ করে জমা দিতেই হবে। সেই দায় থেকেই প্রযোজনা ব্যয় সংকুচিত করে কাজটা আবার শুরু করার প্ল্যান করি। তাই কাজটা চালিয়ে নেওয়ার জন্য নির্মাতা দল ও কলাকুশলীদের দারস্থ হই, তারা প্রত্যেকেই এমন একটা সংবেদনশীল কাজের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নামমাত্র পারিশ্রমিকে রাজি হয়ে যায়। সেই সাথে আমরা একজন অর্থলগ্নিকারীও পেয়ে যাই। সহ-প্রযোজক পাওয়ার পর আমাদের টিম স্পিড আরও বেড়ে যায় এবং আমরা পুরো উদ্যোমে কাজের প্ল্যান করি। কিন্তু দুঃখের বিষয় শুটিংয়ের ঠিক আগ মূহুর্তে আমাদের প্রযোজক যথারীতি পিছিয়ে গেলেন। কিন্তু আমরা যে জায়গায় তখন ছিলাম সেখান থেকে আর ফেরার কোনো পথ ছিলো না। তাই আমরা ঠিক ১৯৭১ সালের মতো করেই আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়ে, যার যা আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে দ্বিধা করলাম না। শুটিং শুরু হলো। শিল্পের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে, দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকে আমাদের ডিরেকটরিয়াল টিম ও কলাকুশলীরা আত্ম নিবেদন করে গেছেন। শুধু তাই নয়, যে এলাকায় শুটিং করেছি, সেখানকার জনগণ এবং বন্ধু-বান্ধব, কাছের মানুষ অনেকেই সাধ্যমত সহযোগিতা করেছেন। ফলে আমরা ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’কে বলি সিনেমার মুক্তিযুদ্ধ।

নূরুল আলম আতিক ও মাতিয়া বানু শুকু

একজন প্রযোজক হিসেবে ছবিটা না করতে পারায় গত ৫ বছরে হতাশা তৈরি হয়নি?
-হতাশা যে ছিলো না, তা না। হতাশার থেকেও বড়ো করে ছিলো অপেক্ষা। শুরু থেকেই অপেক্ষা ছিলো ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে এই সময়ের সেরা ছবিটা জনগণের সামনে হাজির করার। নির্মাতা হিসেবে নূরুল আলম আতিককে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবার কিছু নেই। তার প্রতি আমার আস্থা এবং প্রত্যাশা ছিলো শতভাগ। ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ ছবিটার একটা ইউনিক চেহারা তৈরী করার জন্য তার বিকল্প কেউ নেই বলে আমার বিশ্বাস। আমি এখনও আশাবাদি। আর আমাদের এই আশাটাকে গত পাঁচ বছর ধরে জাগিয়ে রাখতে সহায়তা করেছিলেন কিছু বরেন্য ব্যক্তি যাদের নাম উল্লেখ না করলেই না। নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, মামুনুর রশিদ, মোরশেদুল ইসলাম এবং মতিন রহমান ভাই। তাদের প্রতি আমার টিম
কৃতজ্ঞ।

ছবির শুটিং তো পুরোপুরি শেষ?
এখনও পুরোপুরি শেষ বলতে পারছি না। দুটো দৃশ্যের শ্যুট এখনও বাকি আছে। এটার জন্য আমাদের একটা রানওয়ে লাগবে। এছাড়া আমাদের আর তেমন কাজ নেই। বর্তমানে এডিটিং আর ডাবিংএর কাজ পুরোদমে চলছে। পোস্টেও আমাদের প্রচুর কাজ রয়েছে, রয়েছে অর্থের প্রয়োজন। কাজটি যথাযথভাবে করার জন্য এখন আমাদের কো-প্রডিউসার, স্পন্সর খুব জরুরী। আমাদের বিশ্বাস, ১৯৭১ সালে প্রেক্ষাপটের সংবেদনশীল এবং সিনেমাটিক উপস্থপনাকে সফল করার এই যাত্রায়, কাউকে না কাউকে নিশ্চয়ই সঙ্গী হিসেবে পাবো।

মাতিয়া বানু শুকু

ছবিটা কবে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন?
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হবার সৌভাগ্য অর্জন করতে চাই। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে আজ থেকে ৫০ বছর আগে যেই জাতির জনগণ নিজেদের প্রাণের মায়া ত্যাগ করে স্বাধীনতার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলো তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতেই আমাদের এই প্রয়াস। আমাদের বিশ্বাস জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের প্রতি সম্মান জানাতে লাল মোরগ ডেকে উঠবেই। নতুন সূর্য উঠবে খুব শিগগিরই।

ছবিতে অভিনয় করেছেন কারা?
পান্ডুলিপি কারখানার ব্যানারে এই ছবির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন, নায়লা হাসান, আহমেদ রুবেল, শিল্পী সরকার অপু, অশোর ব্যাপারী, আশিষ খন্দকার, জ্যোতিকা জ্যোতি, দোয়েল, স্বাগতা, আশনা হাবিব ভাবনা, জয়রাজ, শাহজাহান সম্রাট, খলিলুর রহমান কাদরী, অনন্ত এবং কুস্টিয়া ও গৌরিপুরের জনগণ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর