মুম্বাইয়ে চলছে ‘বঙ্গবন্ধু’র বায়োপিকের শুটিং যজ্ঞ

সিনেমা, বিনোদন

বিনোদন ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 16:33:49

চলচ্চিত্র, নাটক, ওয়েব সিরিজ, মিউজিক ভিডিও বা মঞ্চ নাটক যাই হোক না কেনো একটি চরিত্র সঠিকভাবে ফুটিয়ে তোলা চারটে খানি কথা নয়। চরিত্রের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হয় একজন অভিনেতাকে। সেই সঙ্গে লুকের একটি ব্যাপার তো রয়েছেই।

কিন্তু সেই চরিত্রটি যদি হয় বাঙালি জাতির মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তাহলে দায়িত্বের পাল্লাটা যেনো একটু বেশি ভারি হয়ে যায়। কেননা পাকিস্তানিদের শাসন, শোষণ এবং নিপীড়ন থেকে মুক্তি দিতে ৭ কোটি মানুষের ত্রাতা হিসেবে এসেছিলেন সর্বকালের সেরা পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

মুম্বাইয়ের শহরতলির এক প্রান্তে পাহাড়, লেক আর গাছগাছালিতে ঘেরা দাদাসাহেব ফালকে ‘চিত্রনগরী’ বা ফিল্মি সিটি- সেখানেই কিছুদিন আগে শুরু হয়েছে বহুপ্রতীক্ষিত বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকের শুটিং।

অ্যারে পার্ক নামে একটা বিস্তীর্ণ সবুজ পাহাড়ি অরণ্যের কোলে বিছানো এই ফিল্ম সিটি, আপাতত তারই অন্তত ছয়টা লোকেশনে পড়েছে বঙ্গবন্ধুর সেট। কোথাও টুঙ্গিপাড়ার নদীর ঘাট বা ফুটবল মাঠ, কোথাও আবার শেখ মুজিবের স্মৃতিবিজড়িত কলকাতার বেকার হোস্টেল।

শুটিং সেটে ক্যামেরাবন্দি শ্যাম বেনেগাল

বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে ছবিটি নির্মাণের জন্য তিন জন নির্মাতার নাম প্রস্তাব করা হয়েছিলো। যেখান থেকে বেছে নেওয়া হয়েছে বলিউডের বর্ষীয়ান নির্মাতা শ্যাম বেনেগালকেই।

বেশ কিছুদিন আগেই শুরু হওয়ার কথা ছিলো বায়োপিকটির কাজ। কিন্তু করোনাভাইরাস ও অন্যান্য কিছু নানা কারণে বার বার পিছিয়ে যাচ্ছিলো সেটি। পরে গত ২১ জানুয়ারি মুম্বাইতে মহরতের মাধ্যমে শুরু হয়েছে ছবির প্রথম পর্বের কাজ।

বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক নির্মাণের দায়িত্ব ভারতীয় পরিচালকের কাঁধে পড়লেও এতে যারা অভিনয় করছেন তাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশের তারকা। প্রথমে বাংলা ভাষায় নির্মিত হবে এটি। পরে সেটি ইংরেজি ও হিন্দিতে ডাবিং করা হবে।


ফিল্মের প্রযোজক হিসেবে রয়েছে দুই দেশের বিএফডিসি ও এনএফডিসি।

বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক নির্মাণের দায়িত্ব পেয়ে উচ্ছ্বসিত শ্যাম বেনেগাল। এ প্রসঙ্গে বিবিসি’তে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “প্রায় চল্লিশ বছর আগে ‘আরোহণ’ নামে একটা বাংলা ছবি করেছিলাম, তারপর এটি আমার দ্বিতীয় বাংলা ছবি। যদিও দুটোর মধ্যে কোনও তুলনাই চলে না।”

যোগ করে এই নির্মাতা আরও বলেন, “আসলে এর আগেও গান্ধী, সুভাষ বোস, নেহরুর জীবন নিয়ে কাজকর্ম করেছি, এই জঁনর-টাই আমার খুব প্রিয়। এবার বাঙালি জাতীয়তাবাদের নায়ককে নিয়ে কাজ করার এতো বড় সুযোগ- সেই ড্রাইভটাই বোধহয় আমাকে দিয়ে সব করিয়ে নিচ্ছে।”

আরিফিন শুভ

মুম্বাইতে এখন বঙ্গবন্ধুর যে কাজগুলো হচ্ছে সেগুলো মূলত তার জীবনের প্রথম পর্ব ও পারিবারিক অংশটুকুর- পরিচালকের কথায় যেটা ছবির ‘ডোমেস্টিক পার্ট।’

“এটি একটা খুব লম্বা কাজ, লং হল! এপ্রিলে ভারতের এই অংশটুকুর কাজ শেষ হয়ে যাবে। এরপর মনসুন শেষ হলে, ধরা যাক আগস্টের শেষ দিকে বা সেপ্টেম্বরের শুরুতে লোকেশন সরে যাবে বাংলাদেশের বিশাল ক্যানভাসে। যেমন ধরুন শেখ মুজিবের বিশাল জনসভাগুলো। তিনি তো আর দশটা মানুষের সামনে ভাষণ দিতেন না, তাঁর কথা শুনতে হয়তো পাঁচ লাখ মানুষের ভিড় হতো। তো সেই জিনিস তো আর এখানে রিপ্রোডিউস করা সম্ভব নয়, বাংলাদেশেই সেটি করতে হবে।”

মুম্বাইয়ের ফিল্ম সিটিতে চলছে বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকের শুটিং

বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকে নাম ভূমিকায় অভিনয় করছেন আরিফিন শুভ। বেশ কয়েক দফা অডিশন দেওয়ার পর গত বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি তার নাম এই চরিত্রের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছিলো।

সিলেকশনের দিনটির স্মৃতিচারণ করে বিবিসি’কে আরিফিন শুভ বলেন, “সত্যি বলতে কী সেই দিনটার পর আমার জীবন পুরোপুরি পাল্টে গেছে। আমি যেন একটা অদ্ভুত মোডে ঢুকে গেছি।”

বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয় প্রসঙ্গে শুভ বলেন, “বলে না যে ভালবাসা অন্ধ হয়? ভালোবাসার বা প্রেমের কোনও চোখ থাকে না? আমারও এখন যেন সেই অবস্থা, জানেন? কারণ আমি মানুষ শেখ মুজিবের প্রেমে পড়ে গেছি।”

মুম্বাইয়ের ফিল্ম সিটি

বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকে তার বাবা লুৎফর রহমানের চরিত্রে অভিনয় করছেন চঞ্চল চৌধুরী। তিনি বলেন, “পিতার সঙ্গে শেখ মুজিবের আসলে একটা মাল্টি-ডায়মেনশনাল সম্পর্ক ছিল। বাপ-ব্যাটা একসঙ্গে ফুটবল খেলতেন, আরও অনেক কিছু করতেন যেগুলো সে আমলে খুব একটা দেখা যেতো না। আদর, সোহাগ, শাসন- সেই সম্পর্কের আসলে অনেকগুলো পরত ছিল। তার সব খুঁটিনাটি হয়তো চিত্রনাট্যে আসেনি, তারপরও যেটুকু এসেছে সেগুলো সাধ্যমতো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।”

বঙ্গবন্ধুর মা সায়েরা খাতুনের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী দিলারা জামান। তিনি বলেন, “আসলে কি আমেরিকার পাট গুটিয়ে যখন দেশে ফিরে আসি, তখন স্বপ্নেও ভাবিনি এত বড় একটা কিছু আমার জন্য অপেক্ষা করছে। কাজটা শেষ করতে পারলে হয়তো এটাই হবে আমার জীবনের শেষ কাজ, জানি না!”

যোগ করে তিনি আরও বলেন, “কিন্তু এটুকু নিশ্চিত জানি এই ছাপ্পান্ন বা সাতান্ন বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে এটাই হবে আমার শ্রেষ্ঠতম কাজ। কারণ জাতির পিতা এবং সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি যাকে বলা হয়- তার মায়ের চরিত্রে অভিনয় করতে পারাটা আমার জীবনের এক পরম প্রাপ্তি।”

কস্টিউম ডিজাইনার পিয়া বেনেগাল

শুধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চরিত্র নিয়েই নয়, শেখ মুজিবের নিজস্ব স্টাইল স্টেটমেন্ট, পোশাক আর বিখ্যাত ‘মুজিব কোট’ নিয়েও অনেক গবেষণা করা হয়েছে।

ছবিতে কস্টিউম ডিজাইন করছেন পিয়া বেনেগাল। যার ঝুলিতে রয়েছে বলিউডের বহু ছবির জন্য কাজ করার অভিজ্ঞতা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর