আইয়ুব বাচ্চুকে শহীদ মিনারে নেওয়া হবে শুক্রবার সকালে

সুরতাল, বিনোদন

বিনোদন ডেস্ক | 2023-08-22 18:46:23

কিংবদন্তি ব্যান্ডসংগীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চুকে শুক্রবার (১৯ অক্টোবর) সকালে নিয়ে যাওয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানিয়েছেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ। বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) স্কয়ার হাসপাতালে তিনি এ কথা বলেন।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার কিছুক্ষণ আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বাংলাদেশের ব্যান্ড জগতের জনপ্রিয় এই শিল্পী। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর। তার মৃত্যুতে সংগীতাঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। গানের মানুষরা স্কয়ার হাসপাতালে একে একে সমবেত হচ্ছেন।

এলআরবি ব্যান্ডের সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার শামীম জানান, গত ১৬ অক্টোবর রাতে রংপুরে একটি কনসার্টে সংগীত পরিবেশন করেন আইয়ুব বাচ্চু। সেখান থেকে বুধবার দুপুরে বিমানে ঢাকায় ফেরেন তিনি। বৃহস্পতিবার সকালে ঘুম থেকে উঠে গ্লাসে পানি পান করছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। হঠাৎ তার হাত থেকে গ্লাস পড়ে যায়। এরপরই অচেতন হয়ে পড়েন তিনি। গাড়িচালক তাকে স্কয়ার হাসপাতালে হাসপাতালে নিয়ে যান। সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটের দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

একটি সূত্র জানিয়েছে, আইয়ুব বাচ্চুর হৃদযন্ত্রের পাম্পিং আশঙ্কাজনক হারে কমে এসেছিল। এ কারণে দুই দিন আগেও স্কয়ার হাসপাতালে চেকআপ করিয়েছেন তিনি।

দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যান্ড এলআরবির দলনেতা আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন একাধারে গায়ক, গিটারিস্ট, গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক। ভক্তদের কাছে তিনি ‘এবি’ নামেও পরিচিত। ঢাকার মগবাজারে তার নিজের স্টুডিও এবি কিচেন আছে। সেখানেই গান তৈরি ও কনসার্টের আগে অনুশীলন করতেন তিনি।

১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আইয়ুব বাচ্চু। ১৯৭৮ সালে ফিলিংস ব্যান্ডের মাধ্যমে সঙ্গীতজগতে তার পথচলা শুরু হয়। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সোলস ব্যান্ডে লিড গিটারিস্ট হিসেবে যুক্ত ছিলেন তিনি।

১৯৯১ সালে এলআরবি ব্যান্ড গঠন করেন আইয়ুব বাচ্চু। এর প্রথম অ্যালবাম ‘এলআরবি’ বাজারে আসে ১৯৯২ সালে। এটাই দেশের প্রথম ডাবল অ্যালবাম। এলআরবির অন্য অ্যালবামগুলো হলো ‘সুখ’ (১৯৯৩), ‘তবুও’ (১৯৯৪), ‘ঘুমন্ত শহরে’ (১৯৯৫), ‘ফেরারী মন’ (১৯৯৬), ‘স্বপ্ন’ (১৯৯৬), ‘যুদ্ধ’ (২০১১), ‘স্পর্শ’ (২০১৩)।

১৯৮৬ সালে প্রকাশিত ‘রক্তগোলাপ’ হলো তার প্রথম প্রকাশিত একক অ্যালবাম। তার সাফল্যের শুরুটা হয় দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘ময়না’র (১৯৮৮) মাধ্যমে। ১৯৯৫ সালে বাজারে আসে তার তৃতীয় একক অ্যালবাম ‘কষ্ট’। এর প্রায় সব গানই জনপ্রিয়তা পায়। বিশেষ করে ‘কষ্ট কাকে বলে’, ‘কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘অবাক হৃদয়’, ‘আমিও মানুষ’ গানগুলো। তার অন্য একক অ্যালবামগুলো হলো ‘সময়’ (১৯৯৮), ‘একা’ (১৯৯৯), ‘প্রেম তুমি কি’ (২০০২), ‘দুটি মন’ (২০০২), ‘কাফেলা’ (২০০২), ‘রিমঝিম বৃষ্টি’ (২০০৮), ‘বলিনি কখনো’ (২০০৯), ‘জীবনের গল্প’ (২০১৫)।

আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া গানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ‘চলো বদলে যাই’। এর কথা ও সুর তারই। শ্রোতাপ্রিয় গানের তালিকায় আরও রয়েছে ‘শেষ চিঠি কেমন এমন চিঠি’, ‘ঘুম ভাঙা শহরে’, ‘হকার’, ‘সুখ’, ‘চলো বদলে যাই’, ‘রূপালি গিটার’, ‘গতকাল রাতে’, ‘তারা ভরা রাতে’, ‘এখন অনেক রাত’ ইত্যাদি।

রক ঘরানার গানের এই শিল্পী আধুনিক আর লোকগীতিতেও শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন আইয়ুব বাচ্চু। বেশকিছু চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেছেন তিনি। চলচ্চিত্রে তার গাওয়া প্রথম গান ‘লুটতরাজ’ ছবির ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’। এছাড়া বড় পর্দার জন্য তিনি গেয়েছেন ‘আম্মাজান’, ‘ভুলে গেছি জুতোটার ফিতেটাও বাঁধতে’ (চোরাবালি), ‘আকাশ ছুঁয়েছে মাটিকে’ (সাগরিকা), ‘আমি তো প্রেমে পড়িনি প্রেম আমার উপরে পড়েছে’ (ব্যাচেলর)।

এ সম্পর্কিত আরও খবর