বাঁধনের বিচার চাই!

সিনেমা, বিনোদন

রুদ্র হক, বার্তা ২৪.কম | 2023-09-01 07:41:21

বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী বাঁধন। রূপে-গুণে অনন্যা এ অভিনেত্রী শুরু থেকেই জয় করে নিয়েছেন মানুষের মন। আজ (২৮ অক্টোবর) তার জন্মদিন। ১৯৮৩ সালের এই দিনে পৃথিবীতে মানব জন্ম ঘটে তার।

বাবা সরকারি চাকুরে ছিলেন। মেয়েকে পড়িয়েছিলেন চিকিৎসাশাস্ত্রে। কিন্তু ২০০৬ সালে লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টারের মাধ্যমে জীবনে নতুন বাঁকের সূচনা হয় তার। সে বছর একই মঞ্চ থেকে উঠে আসে মম, বিন্দু ও বাঁধনের মতো গুণী তিন তারকা। অন্যদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের বাঁধনও ছোটপর্দায় বাসা বাঁধেন। একের পর এক নাটকে অভিনয় করে দর্শক হৃদয় জয় করেন আপন সৌন্দর্য ও অভিনয়গুণে।

খণ্ড নাটক ও ধারাবাহিকে নিয়মিত মুখ হয়ে ওঠেন তিনি। বাঁধনের গ্ল্যামার ও অভিনয় দেখে সকলেরই প্রশ্ন ছিল বড়পর্দায় কবে দেখা দেবেন বাঁধন? সতীর্থ মম ও বিন্দু সে প্রশ্নের উত্তরের কিছুটা নম্বর পেলেও প্রায় চার বছর অপেক্ষা করিয়ে বাঁধন অভিনয় করলেন মুশফিকুর রহমান গুলজার পরিচালিত ‘নিঝুম অরণ্যে’ চলচ্চিত্রে। চ্যানেল আইর প্রযোজনায় সজলের বিপরীতে বাঁধনের বড়পর্দায় অভিষেক খুব একটা সাদরে গ্রহণ করেনি দর্শক।



প্রায় দশবছর বিরতির পর সেই বাঁধনই বড়পর্দায় আসছেন ১২ নভেম্বর ২০২১-এ। যে চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে বাঁধন ইতিমধ্যেই জয় করেছেন বিশ্ব আসরে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসব কান। এশিয়া প্যাসিফিক স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ড এ সেরা অভিনেত্রীও মনোনীত হয়েছেন তিনি। ‘রেহানা মরিয়ম নূর’- যে চলচ্চিত্রটি ভক্তদের কাছে নতুন করে ফিরিয়ে দিয়েছে প্রিয় বাঁধনকে। আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ পরিচালিত চলচ্চিত্রটিতে অভিনয়ের জন্য ক্রমাগত নিজেকে বদলেছেন তিনি। দীর্ঘদিন নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। ভেঙেছেন, গড়েছেন। তারপর হাজির হয়েছেন ক্যামেরার সামনে। নিজেকে ফিরে পেতে এত সময় কেন লাগলো বাঁধনের?

দাম্পত্য জীবনের উত্থান-পতনই কি দায়ী এ জন্য? ২০১০ সালে বড়পর্দায় অভিষেকের পাশাপাশি মাশরুর সিদ্দিকী সনেটের সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন বাঁধন। সে বছরেরই ৮ সেপ্টেম্বর তাদের মেয়ে সায়রার জন্ম হয়। কিন্তু সম্পর্কটি নিয়ে স্বস্তিতে ছিলেন না বাঁধন। চার বছর না যেতেই ২০১৪ সালে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। শুধু বিচ্ছেদেই শেষ হয়ে যায়নি বাঁধনের দাম্পত্যের গল্প। সন্তানের অধিকারের লড়াইয়ে নামতে হয় তাকে। দীর্ঘ সংগ্রামের পর সন্তানের অভিবাবকত্ব পান বাঁধন। যা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। তবে, বিজয়ী হন বাঁধনই। আদালত ইতিহাস বদলে বাঁধনের পক্ষে রায় দেন।



ন্যায়বিচার আদায়ের বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে বাঁধন হয়ে উঠেছেন এক অনন্য নারী। যিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা পেতে নেননি কখনোই। শুধু অভিনয়েই নয়, সামাজিক কর্মকাণ্ডে, যে কোন অন্যায়ের প্রতিবাদে বাঁধনকে মুখর হতে দেখা গেছে আপন দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেই। এই সম্প্রতি পরীমণিকাণ্ডে যখন মিডিয়ার চেনা বন্ধু, স্বজন এবং সুশীল অভিনয়শিল্পী ও নির্মাতারা মুখে কুলুপ এঁটে বসেছিলেন, তখনও বাঁধন একটানা প্রতিবাদ জানিয়ে গেছেন-একজন নারী ও সহকর্মীর প্রতি অন্যায়ের বিরুদ্ধে।

নিজের জীবন থেকেই শিখেছেন বাঁধন। কন্যা সায়রাকে নিয়ে একাই পথ চলছেন দীর্ঘদিন। অভিনয়েও পড়েছে বিরতি। দীর্ঘ বিরতির পর ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ নিয়ে বাঁধন যখন ফিরছেন তখন ৩৭ বসন্ত পেরিয়ে গেছে।



কান জয় করে বাঁধন পা ফেলেছেন বলিউডে। বিশাল ভরদ্বাজ এর ‘খুফিয়া’ চলচ্চিত্রে বাঁধন অভিনয় করছেন। তবে, কেন্দ্রিয় চরিত্রে নয়, চলচ্চিত্রটির কেন্দ্রিয় চরিত্রে অভিনয় করছেন বলিউড হিরোইন টাবু। চলচ্চিত্রটিতে বাংলাদেশের একটি তরুনীর চরিত্রে অভিনয় করছেন বাঁধন। যদিও চরিত্রটি নিয়ে এর আগে অভিনয়ে অনাপত্তি জানিয়ে বলিউডে অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বিদ্যা সিনহা মীম ও মেহজাবিন। কারণ বাংলাদেশকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে চিত্রনাট্যে।

সে চলচ্চিত্রটিকেই বলিউড পদার্পনে বেছে নিলেন বাঁধন। কিন্তু কেন? এর উত্তর দেননি কোথাও এই অভিনেত্রী। চিত্রনাট্য কি বদলেছেন নির্মাতা? নাকি বাঁধনের পরবর্তী প্রজন্মের দুই তারকা অভিনেত্রী মীম ও মেহজাবিন চরিত্রটির ভারিক্কি বা চিত্রনাট্যকেই ভুল বুঝেছেন? সেসব প্রশ্নের উত্তর তাদের কাছ থেকেই খুঁজে নিতে বললেন, বাঁধন। যদি সত্যিই বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়ে থাকে চলচ্চিত্রে, নিজের বিবেকের আদালতে কি বিচার পাবেন বাঁধন?



কিন্তু কান উৎসবের গৌরব কিংবা অ্যাপসায় সেরা অভিনেত্রীর মনোনয়ন নিয়ে বিশ্ব আসরে যখন আলোচিত হয়ে উঠছেন, তখন কেন এই তাড়াহুড়ো সিদ্ধান্ত তা সময়ই বলে দেবে। চরিত্র নির্বাচনে বাঁধন কি ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন? সৃজিতের নির্মাণে ওয়েব ফিল্ম ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’-তেও খুব একটা দর্শকের বাহবা পাননি তিনি। কান বিজয়ী বাঁধনের জন্য গুণী নির্মাতা সৃজিতের এ কেমন ব্যার্থতা?

তবু, প্রিয় বাঁধন ফিরেছেন স্বগৌরবে। নিজেকে ফিরে পেয়েছেন নতুন করে, জীবন সংগ্রামে জয়ী হয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু ক্যারিয়ারের এই পনেরো বছর বড়পর্দায় তার অনুপস্থিতির জন্য বঞ্চিত ভক্তরা এখন বলতেই পারেন- ‘বাঁধনের বিচার চাই’। সে বিচার বাঁধনের আপন আদালতেই হোক। জয়ার মতো বিজয়ী হয়ে বাঁধন দুই বাংলায় নিজের অবস্থান শক্ত করে নিক। দারুণ সব চরিত্র নিয়ে হাজির হোক দর্শকের মাঝে- এমনই প্রত্যাশাই সকলের।



শুভ জন্মদিন বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে আলোকিত করা বাঁধন! বার্তা ২৪.কমের পক্ষ থেকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা নিরন্তর...

এ সম্পর্কিত আরও খবর