টুটুলের অসমাপ্ত ‘কালবেলা’ শেষ করলেন তার স্ত্রী

সিনেমা, বিনোদন

বিনোদন রিপোর্ট, বার্তা ২৪.কম | 2023-12-25 14:53:38

মৃত্যুর তিন বছর পর শেষ হলো সাইদুল আনাম টুটুলের অসমাপ্ত চলচ্চিত্র ‘কালবেলা’। আসছে ডিসেম্বরেই মুক্তি পেতে যাচ্ছে চলচ্চিত্রটি।

সরকারি অনুদানে এ নির্মাতার প্রথম চলচ্চিত্র ‘আধিয়ার’ মুক্তি পায় ২০০৩ সালে। ১৯৪৬-৪৭ সালের বাংলার চাষীদের তেভাগা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নির্মিত এই চলচ্চিত্র সমালোচক ও দর্শক উভয়ের কাছে নন্দিত হয়। তার ১৪ বছর পর ফের সরকারি অনুদানে (২০১৭-১৮) নির্মাণ করছিলেন তার দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘কালবেলা’। ২০০১ সালে প্রকাশিত গবেষণা গ্রন্থ ‘নারীর ৭১ ও যুদ্ধপরবর্তী কথ্যকাহিনী’ বই থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে একজন নারী সানজিদার অত্যাচার, নির্যাতনের গল্প তুলে ধরতে চাইছিলেন সাইদুল টুটুল।

কিন্তু ২০১৮ সালে তার অকস্মাৎ মৃত্যুতে থেমে যায় চলচ্চিত্রটির নির্মাণ কাজ।

সেই অসমাপ্ত চলচ্চিত্রটির নির্মাণ সম্পন্ন করেন তার স্ত্রী ও চলচ্চিত্রটির প্রযোজক অধ্যাপক মোবাশ্বেরা খানম। তবে, সাইদুল আনাম টুটুল প্রায় নব্বই শতাংশ নির্মাণ কাজ নিজেই শেষ করে যেতে পেরেছিলেন।

বুধবার সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে চলচ্চিত্রটির মুক্তির খবর জানিয়ে মোবাশ্বেরা খানম লেখেন, “২০১৮ সাল আমার জন্য যতটা আনন্দের ছিল ততটাই বেদনাও বয়ে এনেছিল। আমার জীবনসাথী সাইদুল আনাম টুটুল শুরু করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাঁর আজীবনের স্বপ্ন ছবি 'কালবেলা' নির্মানের কাজ আর তাতে এবার শুরু থেকে আমি ছিলাম সাথে। উহ সে যে কি অভিজ্ঞতা, ছবি বানানো! কি আনন্দ! কিন্তু সে বছর ডিসেম্বরে মৃত্যু কেড়ে নিল তাকে। শুটিং সম্পন্ন করেও ছবি শেষ করতে পারলেন না। ভাংগা মন আর একা জীবন নিয়ে আমাকেই উঠে দাড়াতে হল। ইউনিটকে সাথে নিয়ে শেষ করলাম 'কালবেলা'।”

চলচ্চিত্রটি সম্পর্কে সাইদুল আনাম টুটুল গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, “আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে নারীদের ওপর কী অমানবিক অত্যাচার ও নির্যাতন হয়েছিল তা কালবেলা দেখলেই দর্শক বুঝতে পারবেন।”

তার স্মরণে মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেতে যাচ্ছে বিজয়ের মাস ডিসেম্বরেই। তবে, কত তারিখ চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাবে তা এখনো জানানো হয়নি। তবে, গত ৭ নভেম্বর মুক্তি পায় চলচ্চিত্রটির ট্রেলার।

এর কেন্দ্রিয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন তাহমিনা অথৈ এবং শিশির আহমেদ। অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন মাসুম বাশার, মিলি বাশার, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, লুৎফর রহমান জর্জ, শেখ মাহবুবুর রহমান, সায়কা আহমেদ, জুলফিকার চঞ্চল, কোহিনুর আলম, তানভীর মাসুদ ও আরও অনেকে।

‘কালবেলা’ নির্মাণের সময় স্বামী সাইদুল আনাম টুটুলের সঙ্গে স্ত্রী মোবাশ্বেরা খানম

প্রসঙ্গত, সাইদুল আনাম টুটুল বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে বিবেচিত ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’ চলচ্চিত্রের সম্পাদনা করেন। ১৯৭৯ সালে ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’ চলচ্চিত্রের সম্পাদক হিসেবে তিনি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র সম্পাদকের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। চলচ্চিত্র সম্পাদক হিসেবে তিনি ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’ ছাড়াও সম্পাদনা করেন সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী নির্মিত ‘ঘুড্ডি’, শেখ নিয়ামত আলী নির্মিত ‘দহন’, মোরশেদুল ইসলামের ‘আগামী’, ‘দুখাই’, ‘দীপু নাম্বার টু’।

চলচ্চিত্র সম্পাদনার দায়িত্ব পালন ছাড়াও তিনি ছিলেন একজন চলচ্চিত্র শিক্ষক। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট, বিভিন্ন চলচ্চিত্র সংসদের আয়োজনে ফিল্ম অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্স ও চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রশিক্ষণ কর্মশালায় তিনি চলচ্চিত্র ভাষা ও চলচ্চিত্র সম্পাদনা বিষয়ে পাঠদান করতেন। সাইদুল আনাম টুটুল বাংলাদেশে টেলিভিশন ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নাটকের নির্মাতা। তার উল্লেখযোগ্য টেলিভিশন নাটকগুলো হলো নাল পিরান, বখাটে, সেকু সেকান্দর, ৫২ গলির এক গলি, আপন পর, গোবর চোর, হেলিকপ্টার, নিশিকাব্য, অপরাজিতা ইত্যাদি।

সাইদুল আনাম টুটুল বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণের ধারায় প্রভূত পরিবর্তন আনেন। তিনি প্রায় চার শতাধিক বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণ করেছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর