‘রেহানা মরিয়ম নূর’ সমালোচনায় তসলিমা, প্রতিবাদী প্রিন্স

সিনেমা, বিনোদন

রুদ্র হক, বার্তা ২৪.কম | 2023-08-26 02:30:42

কান চলচ্চিত্র উৎসবে জায়গা করে নেয়া বা এশিয়ান প্যাসিফিক স্ক্রিন অ্যওয়ার্ড এ সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে পুরস্কার পাওয়া চলচ্চিত্র রেহানা মরিয়ম নূর চলছে দেশের বড়পর্দায়। প্রথম সপ্তাহ পেরিয়ে দ্বিতীয় সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন হলে প্রদর্শিত হচ্ছে চলচ্চিত্রটি। সাধারণ দর্শক কিংবা চলচ্চিত্রবোদ্ধা মহলে প্রশংসিত হচ্ছে রেহানা মরিয়ম নূর। এমনকি ‘পুরুষতন্ত্রের পিঠে কশাঘাত’ শিরোনামে চলচ্চিত্র সমালোচনাও পেয়েছে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ নির্মিত চলচ্চিত্রটি। একজন প্রতিবাদী নারীর চরিত্রে চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন আজমেরী হক বাঁধন।

তবে, দর্শক সমালোচকের চোখে চলচ্চিত্রটি পুরুষতন্ত্রের পিঠে যতোই কশাঘাত করেছে মনে হলেও তাতে মন গলেনি পুরুষতন্ত্রের ঘোর বিরোধী ও সমালোচক তসলিমা নাসরিনের। রবিবার চলচ্চিত্রটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের অভিমত প্রকাশ করতে গিয়ে কঠোর সমালোচনাই করে ফেললেন এই নারীবাদি লেখক। তার দাবি, চলচ্চিত্রের ‘রেহানা’ চরিত্রটিকে যদি নারীবাদী হিসেবে দেখানো হয়ে থাকে তবে তা ভুল।

তিনি বলেন, “ধার্মিক রেহানাকে যদি নারীবাদী হিসেবে দেখানোর চেষ্টা হয়ে থাকে, তাহলে ভুল। নারীবাদীদের সংবেদনশীল হতে হয়। যত না সংবেদনশীল তিনি, তার চেয়ে বেশি প্রতিশোধপরায়ণ। তাঁর জন্য কোনও শ্রদ্ধা বা সহানুভূতি জন্মায়না।”

‘রেহানা’ চরিত্রটি নিয়ে নিজের পর্যবেক্ষণও তুলে ধরেছেন তিনি, “রেহানা মারিয়াম নূর। ছবিটির প্রধান চরিত্রে আমার মনে হয়নি আছেন কোনও সৎ বা উদার কোনও মানুষ। প্রথম থেকেই তিনি রগচটা,রুক্ষ,স্বার্থপর,একগুঁয়ে,আত্মকেন্দ্রিক।”

কোনদিক থেকেই চলচ্চিত্রটি যে তসলিমাকে মুগ্ধ করতে পারেনি তা তার কঠোর সমালোচনাতেই প্রকাশ পেয়েছে। তিনি বলেন, “ছবিটি ডেনিশ ডগমা ফিল্মের মতো হাত-ক্যামেরায় শুট করা। টানা মিড-শট। বারবারই জনমানবহীন হাসপাতালের একই করিডোর, একই ঘোলা ঘর, একই সংলাপ, একই চেহারা, একই এক্সপ্রেশান। কোনও আউটডোর নেই। কোনও আকাশ বাতাস নেই। শ্বাস নেওয়ার জায়গা নেই। ছবিটি পূর্ণদৈর্ঘের না হয়ে কুড়ি পঁচিশ মিনিটের স্বল্পদৈর্ঘের হলে ভালো হতো। অথবা ছবি না হয়ে কোনও ডার্ক নাটক হলে ভালো হতো। সিনেমার বড় পর্দায় না দেখিয়ে মঞ্চে দেখালে ঠিক হতো।”

শনিবারই চলচ্চিত্রটি দেখেছেন বলে জানান তসলিমা। তারপরই এই প্রতিক্রিয়া। এদিকে, তসলিমা নাসরিনের এমন প্রতিক্রিয়ার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন গীতিকার প্রিন্স মাহমুদ। পাল্টা সমালোচনায় তিনি লিখেছেন, “আলোচিত 'রেহানা মরিয়ম নূর' ছবিটা নিয়ে এবার সমালোচনা করছে লেখিকা তসলিমা নাসরিন। লিখছে রেহানাকে তার সংবেদনশীল, সৎ বা উদার কোনো মানুষ মনে হয় নাই। হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছি না।”

দেশজুড়ে আলোচিত একটি ইস্যুকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে স্যোসাল মিডিয়ায় মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো, এমনকি প্রিন্স মাহমুদের মন্তব্য পছন্দ না হওয়ায় তাকে বন্ধু তালিকা থেকে ছাটাই করে দিয়েছেন তসলিমা। এমনটা জানিয়ে পাল্টা জবাবে প্রিন্স মাহমুদ লিখেছেন, “যে নিজের সমালোচনা সহ্য করতে পারেনা সে মুক্তমনা, উদার হয় কেমন করে?”

এমনকি তসলিমা নাসরিনের চলচ্চিত্র জ্ঞান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন প্রিন্স মাহমুদ।

এদিকে, এমন আলোচনা-সমালোচনাকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন চলচ্চিত্রটির প্রযোজক এহসানুল বাবু। রবিবার বার্তা ২৪.কমকে তিনি বলেন, “সমস্ত আলোচনা সমালোচনাকে আমরা ইতিবাচক ভাবে নিচ্ছি । কারণ আমরা চাই আমাদের সিনেমাটি সমাজের সামনে কিছু প্রশ্ন তুলে ধরুক, দর্শকদের চিন্তা ভাবনার সুযোগ করে দিক। তসলিমা নাসরিন সহ সকল দর্শকের সমালোচনাকে আমরা এভাবেই দেখছি।”

চলচ্চিত্রটির গল্প আবর্তিত হয়েছে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক রেহানা মরিয়ম নূরকে কেন্দ্র করে। সেখানে রেহানা একজন মা, মেয়ে, বোন ও শিক্ষক। ঝঞ্জাবিক্ষুব্ধ তার জীবন৷ এক সন্ধ্যায় কলেজ থেকে বের হয়ে তিনি এমন এক ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন, যা তাকে প্রতিবাদী করে তোলে। এক ছাত্রীর পক্ষ হয়ে সহকর্মী এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে বাধ্য হন রেহানা। একই সময়ে তার ৬ বছরের মেয়ের বিরুদ্ধে স্কুল থেকে রূঢ় আচরণের অভিযোগ করা হয়।এমন অবস্থায় রেহানা তথাকথিত নিয়মের বাইরে থেকে সেই ছাত্রী ও তার সন্তানের জন্য ন্যায় বিচার খুঁজতে থাকেন।

আজমেরী হক বাঁধন ছাড়াও ছবিতে আরো অভিনয় করেছেন আফিয়া জাহিন জাইমা, কাজী সামি হাসান, আফিয়া তাবাসসুম বর্ণ, ইয়াছির আল হক, সাবেরী আলম। পোটোকল ও মেট্রো ভিডিও'র ব্যানারে ছবিটি প্রযোজনা করেছেন সিঙ্গাপুরের জেরেমি চুয়া। নির্বাহী প্রযোজক এহসানুল হক। সিনেমাটোগ্রাফি করেছেন তুহিন তুমিজুল। সহ প্রযোজনা করেছে ‘সেন্সমেকারস প্রোডাকশন'।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর