চিরতরে থামল তাঁর নৃত্যের ঝংকার

, বিনোদন

বিনোদন ডেস্ক, বার্তা ২৪.কম | 2023-08-24 07:46:28

হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন কিংবদন্তি শিল্পী পণ্ডিত বিরজু মহারাজ। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর বয়স। ভারতীয় গণমাধ্যম জানায়, রবিবারর রাতে নাতির সঙ্গে খেলছিলেন। তখনই হঠাৎ করে অসুস্থ বোধ করেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন তিনি। সম্প্রতি তাঁর কিডনির অসুখ ধরা পড়েছিল। ডায়ালিসিস চলছিল বলে জানা যায়।

তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শোকে ডুবেছে উপমহাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গন। জীবদ্দশায় বেশ কয়েকবার বাংলাদেশে পারফর্ম করতে আসেন এ কিংবদন্তি।

উপমহাদেশের কত্থক কিংবদন্তি ঈশ্বরী প্রসাদের এ বংশধর জন্ম নেন জন্ম ১৯৩৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি। বাবা পতি অচ্ছন মহারাজের কাছে ‘তেহাই’ আর ‘টুকরা’ আবৃত্তি দিয়ে শুরু; আট বছর বয়সেই নাচ, গান আর বাদনে তুখোড় হয়ে ওঠেন। নয় বছর বয়সে ‘শিক্ষক’ বাবাকে হারিয়ে ছন্দপতন। নিরুপায় হয়ে ভিটেবাড়ি বিক্রি করতে হলেও সংগীত আর নৃত্যসাধনা থেকে একচুল বিচ্যুত হননি ‘দুঃখহরণ নাথ’। শৈশবে এ নামেই পরিচিত ছিলেন বিরজু মহারাজ।

কিশোর বয়সেই বিরজু হয়ে ওঠেন নৃত্যগুরু। প্রথমে সংগীতভারতী, পরে ভারতীয় কলাকেন্দ্র, কত্থককেন্দ্র ও নিজের প্রতিষ্ঠিত কলাশ্রমে তালিম দিয়েছেন ৪৬ বছর বয়সে ‘পদ্মবিভূষণ’ পাওয়া এ কিংবদন্তী। নিজস্ব শিল্পরীতিতে বিশ্ব নৃত্যান্দোলনের মূল ধারায় নিজেকে অনন‌্য অবস্থানে নিয়ে যাওয়া বিরজু মহারাজ কত্থকের একাধিক বিন্যাসপর্ব নির্মাণ করেছেন।

আন্দাজ, আমদ, ঠাঁট বা নিকাষ, গৎ, গৎভাও, বোলপরম ও ঠাঁট- তার নৃত্যের এমন সুচারু, প্রাণবন্ত, উদ্দাম, গতিশীল উপস্থাপনা কত্থক নৃত্যে যোগ করেছে ভিন্ন যোজনা। কত্থকের কৌশল, ব্যাকরণিক বিন্যাস, উপস্থাপন রীতিতে তিনি যুক্ত করেছেন অভিনব রুচি ও নান্দনিক শৃঙ্খলা। ভারতীয় পুরাণ, ইতিহাস ও ঐতিহ্যনির্ভর ১৭টি নৃত্যনাট্য নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। ঠুমরি, দাদরা, ভজন, গজল গায়ক হিসেবেও কুড়িয়েছেন খ্যাতি। আবার সেতার, সরোদ, বেহালা, সারেঙ্গি, তবলাসহ একাধিক যন্ত্রবাদনে তিনি পারদর্শী। তিনি একাধারে কবি, লেখক।

১৯৭৭ সালে সত্যজিৎ রায়ের ‘সতরঞ্জ কি খিলাড়ি’ চলচ্চিত্রে দুটো নৃত্যের পরিচালক ছিলেন বিরজু মহারাজ। ‘দে আশকিয়া’, ‘দিল তো পাগল হ্যায়’, ‘গাদ্দার’, ‘দেবদাস’, ‘বাজিরাও মাস্তানি’র মতো ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রের নৃত্যপরিচালকও তিনি। ‘বাজিরাও মাস্তানি’ চলচ্চিত্রের জন্য ২০১৬ সালে ‘শ্রেষ্ঠ কোরিওগ্রাফার’ হিসেবে ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।

পেয়েছেন সংগীত ও নাটক আকাদেমি অ্যাওয়ার্ড, কালিদাস সম্মাননা, নৃত্যচূড়ামণি পুরস্কারসহ আরও অসংখ্য পদক ও পুরস্কার।

বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, খাইরাগারাহ বিশ্ববিদ্যালয় তাকে দিয়েছে সন্মানসূচক ডিগ্রি।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর