তিনি অভিনেয় যেমন দক্ষ ছিলেন তেমনি সময়ের চেয়েও অনেক এগিয়ে ছিল তার স্টাইল ও ফ্যাশন সচেতনতা। এজন্যই হয়তো বর্তমান প্রজন্মের তারকারদের কাছে জনপ্রিয় একটি নাম সালমান শাহ। আজও সবাই তাকে খোঁজে বেড়ান। মাত্র ২৫ বছর জীবনে চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন চার বছর। স্বল্প সময়ের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে নতুন এক ধারার সূচনা হয়েছিল তার হাত ধরেই। বাংলা চলচ্চিত্রে রেখে গেছেন অসাধারণ সব সিনেমা। সালমান শাহ’র উপস্থিতি মানেই ছিল নিশ্চিত সাফল্য, সিনেমা হলগুলোতে ছিল দর্শকের উপচে পড়া ভিড়।
বিনোদনজগতে সালমানের যাত্রা শুরু হয় বিজ্ঞাপনচিত্রের মডেল হিসেবে। কোকাকোলা, ইস্পাহানি গোল্ডস্টার টি, মিল্ক ভিটা, ইত্যাদি বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করেন তিনি। ছোটবেলায় ছিলেন কণ্ঠশিল্পী। স্কুলের বন্ধুরা তাকে গায়ক হিসাবেই চিনতেন। ১৯৯৩ সালে চলচ্চিত্রে প্রবেশ করার আগে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন সালমান। তার স্ত্রী ছিলেন তার মায়ের বান্ধবীর মেয়ে সামিরা।
নব্বইয়ের দশকে যখন বাংলা চলচ্চিত্র দুঃসময় পার করছিল, ঠিক তখনই চলচ্চিত্রে সালমান শাহ’র অভিষেক ঘটে ১৯৯৩ সালে সোহানুর রহমান সোহানের ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আসেন তিনি। প্রথম সিনেমাতেই ব্যাপক দর্শক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন সালমান শাহ। এই সিনেমায় তার সাথে অভিনয় করেছিলেন চিত্রনায়িকা মৌসুমী।
‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার মাধ্যমে মৌসুমীর চলচ্চিত্রে আগমন ঘটে। খুব কম সময়েই সালমান-মৌসুমী জুটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠে। পরবর্তীতে এ জুটি ‘স্নেহ’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘দেনমোহর’ সিনেমায় অভিনয় করেও অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। পরবর্তীতে প্রায় ডজন খানেক সিনেমায় শাবনূরের সাথে অভিনয় করেন সালমাস শাহ। এ জুটিও দর্শকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। এছাড়াও সালমান শাহের সাথে আরও অভিনয় করেছিলেন শাবনাজ, শাহনাজ, শ্যামা, সোনিয়া, বৃষ্টি, সাবরিনা, লিমা, শিল্পী, ও কাঞ্চি।
সালমান শাহ অভিনয়ের মাধ্যমে খুব কম সময়েই দর্শকদের মন জয় করে নিতে পেরেছিলেন। তিনি দর্শকদের কাছে এতাটাই জনপ্রিয় ছিলেন যে, পরবর্তীতে অন্য কেউ তাকে অতিক্রম করতে পারেনি।
সালমানের চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার মাত্র চার বছরের। এই স্বল্প সময়ে একাই রাজত্ব করে গেছেন তিনি। মাত্র চার বছরে দর্শকদের উপহার দিয়েছেন ২৭টি সিনেমা। তার অভিনীত সিনেমাগুলো হচ্ছে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ (১৯৯৩), ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘তুমি আমার’, ‘প্রেম যুদ্ধ’, ‘সুজন সখী’, ‘স্নেহ’, ‘বিক্ষোভ’ (১৯৯৪), ‘আঞ্জুমান’, ‘মহামিলন’, ‘কন্যাদান’, ‘দেনমোহর’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘আশা ভালোবাসা’ (১৯৯৫), ‘তোমাকে চাই’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘বিচার হবে’, ‘এই ঘর এই সংসার’, ‘প্রিয়জন’, ‘সত্যের মৃত্যু নেই’, ‘জীবন সংসার’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’ (১৯৯৬), ‘শুধু তুমি’, ‘আনন্দ অশ্রু,’ ‘প্রেমপিয়াসী’, ‘স্বপ্নের নায়ক’ ও ‘বুকের ভেতর আগুন’ (১৯৯৭)।
সালমান শাহ ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলায় জন্ম গ্রহণ করেন। তার পারিবারিক নাম ছিল শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মা নীলা চৌধুরী। সালমান ছিলেন দুই ভাইয়ের মধ্যে বড়।
বাংলা সিনেমায় আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তার সময়ে অসংখ্য ভক্তকে কাঁদিয়ে ১৯৯৬ সালের আজকের এই দিনে (৬ সেপ্টেম্বর) মৃত্যুবরণ করেন সালমান শাহ। তার মৃত্যুতে বাংলা সিনেমার একটি ক্ষণস্থায়ী উজ্জ্বল অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে।
চিরসবুজ এই নায়কের রহস্যজনক মৃত্যুর এতো বছর পরেও আজও জানা সম্ভব হয়নি মৃত্যুর আসল রহস্য। যদিও তার মা (নীলা চৌধুরী) এখনো সালমানের মৃত্যুকে আত্মহত্যা মানতে নারাজ। তার মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা থাকলেও মৃত্যুর এত বছর পরও তার জনপ্রিয়তা কমেনি। সালমান শাহকে সর্বকালের নায়ক মনে করেন অনেকেইে। তিনি ছিলেন কালোত্তীর্ণ। কোনো সময় বা কালের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলেন না তিনি। তার স্টাইলিশ চলাফেরা, ফ্যাশন সচেতনতা সর্বকালর জন্য প্রযোজ্য।