ভালোবাসা ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে আটকে আছে : মম

ছোটপর্দা, বিনোদন

মাসিদ রণ, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2024-02-04 14:56:39

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম। প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েই দর্শকের প্রশংসা কুড়ান। এরপর টিভি নাটক, চলচ্চিত্র ও সমসাময়িক প্ল্যাটফর্ম ওটিটিতেও দাপিয়ে কাজ করছেন সাবেক এই লাক্স সুপারস্টার। নতুন বছরের শুরুতে নানা বিষয়ে বার্তা২৪.কমের সঙ্গে অকপটে কথা বললেন মম। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাসিদ রণ


খুব ফুরফুরে মেজাজে আছেন। এই মুহূর্তে কোথায় আপনি?


আসলেই মনটা খুব ভালো। আমি এখন সেন্ট মার্টিনে। মন ভালো না থাকার উপায় আছে বলুন? তাছাড়া দীর্ঘকাল পর এখানে বেড়াতে এলাম। এবার এসেছি বন্ধু-বান্ধব ও তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে। আর প্রথমবার এসেছিলাম আমার প্রথম সিনেমা ‘দ্বারুচিনি দ্বীপ’-এর শুটিং করতে। এরমধ্যে কক্সবাজারে কতোবার এসেছি তার হিসেব নেই। তবে সেন্ট মার্টিনে আর আসা হয়নি। সেই হিসেবে ১৭ বছর পর সেন্ট মার্টিন এলাম।


এতো বছর পর সেন্ট মার্টিন গেলেন। আগের থেকে কোন পরিবর্তন চোখে পড়ল?


হ্যা। নানা ধরনের পরিবর্তন চোখে পড়েছে। প্রথমবার যখন এসেছিলাম তখন যাতায়াতের ব্যবস্থা অতো ভালো ছিল না। ছোট্ট জাহাজে আসতে হতো। সেটা আবার বেশ দূরে নোঙর ফেলত। এরপর আমরা নৌকায় করে সেন্ট মার্টিন আসতাম। আর এখন সেই জায়গাটা বড় জাহাজ আর ফেরীর ব্যবস্থা হয়েছে। এজন্য দিনে দিনে এখানে পর্যটকের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। তবে সেই সঙ্গে মন খারাপের কারণও ঘটেছে। জায়গাটা আগের মতো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নেই। আশেপাশে প্রচুর প্ল্যাস্টিকের বোতল, চিপসের প্যাকেটসহ ময়লা আবর্জনা। এগুলো শুধু সেন্ট মার্টিনের সৌন্দর্য্যই নষ্ট করেনি, পরিবেশের অনেক ক্ষতি করছে। পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা সমূদ্র সৈকত পেয়েছি আমরা। এখনো এখানের পানি কি চমৎকার নীল! সেই সম্পদের তো যথার্থ যত্নটা করতে হবে। এই সাক্ষাৎকারে কথাগুলো বলার কারণ হলো, দুজন মানুষও যদি বিষয়টি নিয়ে সচেতন হয় সেখানেই আমাদের সার্থকতা।

জাকিয়া বারী মম / পোশাক : ট্রেন্ড মার্ট, গয়না : গয়নার মেলা, মেকাপ : শোভন মেকওভার, ছবি : নূর এ আলম

অভিনয়ের প্রসঙ্গে আসি। সর্বশেষ কি কাজ করলেন?


একটি ঈদের একক নাটকের কাজ করেছি। এহসান বাপ্পীর পরিচালনায় নাটকটি এনটিভিতে প্রচার হবে। আসছে ঈদুল ফিতরের জন্য এর আগেও একটা কাজ করেছি।


ভালোবাসা দিবসে নতুন কোন কাজ আসছে?


ভ্যালেন্টাইন ডে’র জন্যও একটা কাজ করার কথা রয়েছে। এখনো সিডিউল চূড়ান্ত হয়নি। তবে ভালোবাসা দিবসের কথা যেহেতু তুললেন, আমাদের এখনকার ভালোবাসার গল্প নিয়ে একটু কথা বলতে চাই। আপনি খেয়াল করলে দেখবেন, আমাদের কাজগুলোতে ভালোবাসা ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে আটকে আছে! পরিণত বয়সের ভালোবাসার গল্প লেখাও হয় না, বানানোও হয় না। আমাদের এই গতানুগতিক চিন্তা থেকে বের হয়ে আসা উচিত। তাহলে ভালোবাসার গল্পে অনেক বৈচিত্র্য আসবে। শুধু তাই নয়, আমাদের দেশে অনেক পরিণত নারী অভিনয়শিল্পী রয়েছেন, যারা ভালো চরিত্রের অভাবে অভিনয় থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। কারণ ভালো স্ক্রিপ্ট না পাওয়াটা তাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যারা পেশাদার শিল্পী তাদের টিকে থাকতে গেলে ভালো স্ক্রিপ্ট সবচেয়ে জরুরী। কিন্তু আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে সামগ্রিকভাবে ভালো স্ক্রিপ্টের অভাব। সেটি হয়ত এতোদিনে অনেকেই অনুধাবন করেছেন। এটা আসলে পৃষ্ঠপোষকতার ফসল। এক সময় যারা ভালো চিত্রনাট্য লিখতেন তারা এখন আর লিখছেন না। কারণ তারা কোন ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছেন না। ফলে আমরা নতুন আইডিয়া নিয়ে কোন গল্প হতে দেখছি না। এটা ধরনের একঘেয়ামিতা তৈরী করছে। ফলে এদিকেও আমাদের অতি দ্রুত নজর দেওয়া উচিত।


প্রায় দুই দশকের শোবিজে ক্যারিয়ার আপনার। ২০২৪-এ এসে ইন্ডাস্ট্রিকে কেমন মনে হচ্ছে?


২০০৬-এ যখন লাক্স সুপারস্টার প্রতিযোগীতা থেকে বের হয়ে কাজ শুরু করলাম, তখন টেলিভিশন স্টেশনগুলো অনেক পাওয়ারফুল ছিল। চ্যানেলের তদারকি থাকতো কাজ নিয়ে। প্রিভিউ কমিটি ছিল, কাজের মানের ওপর আলাদা জোর দেওয়া হতো। আর এখন তো টিভি নাটকও ইউটিউব চ্যানেলের ওপর নির্ভরশীল! এটা একটা বড় পরিবর্তন।

জাকিয়া বারী মম / মেকাপ : শোভন মেকওভার, ছবি : নূর এ আলম

এই পরিবর্তনটা ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক?


সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দৃশ্যপট বদলাবে, এটাই নিয়ম। কিন্তু এখন নাটকের নাম, গল্প কিংবা কাস্টিং যেহেতু ইউটিউব ভিউ-এর ওপর নির্ভরশীল ফলে সেই উদ্দেশ্যটাই শুধু পূরণ হচ্ছে। বাকী বিষয়গুলো কি হচ্ছে সেটা হয়ত কেউ ভাবছে না। এখন নাটকের দর্শকের টেস্ট লেবেল আগের চেয়ে অনেক ভিন্ন।
তবে সিনেমা নিয়ে আমি বেশ আশাবাদী। নানা ধরনের সিনেমা হচ্ছে। কুড়া পক্ষীর শূণ্যে ওড়া, নোনা জলের কাব্য, হাওয়া, সুড়ঙ্গ’র মতো ভালো ছবি তো আমরা দেখেছি। আবার পরাণ, প্রিয়তমার মতো ব্যাবসাসফল ছবিও হয়েছে।


ইতোপূর্বে ‘আলতাবানু’র মতো জীবনঘনিষ্ট সিনেমা যেমন করেছেন, ‘ছুঁয়ে দিলে মন’-এর মতো গ্ল্যামারাস ছবিও করেছেন। ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এসে ছবি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোন পরিবর্তন এসেছে কি?


না, তেমন কোন পরিবর্তন আসেনি। আমি শুরু থেকেই চেয়েছি নানা ধরনের ছবিতে কাজ করব। ছুঁয়ে দিলে মন’ রোমান্টিক ঘরানার ছবি, দর্শক খুব পছন্দ করেছে। আবার ‘আলতাবানু’র মতো গল্পনির্ভর ছবিও করেও প্রশংসা পেয়েছি। পলিটিক্যাল থ্রিলার ঘরানার ‘দহন’ করেছি, আবার ‘দারুচিনি দ্বীপ’-এর মতো সাহিত্যনির্ভর ছবিও করেছি। আমি এখনো একটি প্রপার গল্প, চরিত্র ও নির্দেশক পেলে ‘ছুঁয়ে দিলে মন’-এর মতো গ্ল্যামারাস ছবি করতে চাই।


গত বছর ওটিটিতে বেশ ব্যস্ত ছিলেন?


হ্যা। যেখানে ভালো গল্প, চরিত্র, নির্মাতা ও বাজেট পাব আমি সেখানেই কাজ করব। গত বছর কয়েকটি ভালো কাজ এসেছিল ওটিটির জন্য। তারমধ্যে ‘অগোচরা’, ‘সাড়ে ষোল’, ‘মারকিউলিস’ কাজগুলো দর্শক পছন্দ করেছে। এ বছরও একটি ওটিটির কাজ করেছি। দেশিয় একটি প্ল্যাটফর্মের জন্যই করেছি। কিন্তু এখন সব কাজই একটি প্রসেসের মধ্য দিয়ে যায়। ফলে এখনই কিছুই ফাঁস করতে পারব না। হয়তো শিগগিরই প্রযোজনা সংস্থা থেকেই আপনাদের জানানো হবে। আরও কয়েকটি ওটিটির কাজে কথাবার্তা চলছে।

জাকিয়া বারী মম / পোশাক : ট্রেন্ড মার্ট, গয়না : গয়নার মেলা, মেকাপ : শোভন মেকওভার, ছবি : নূর এ আলম

ইদানিং অভিনেত্রীদের মুখে ‘নারীকেন্দ্রিক গল্প’ বিষয়টি খুব ট্রেন্ডিং। কাজ বাছাইয়ে এটা আপনার কাছে কতোটা গুরুত্বপূর্ণ?


(হেসে) এটা একটা মার্কেটিং টুল আসলে। তবে নারী একটি বিষয় বটে! আসলে গল্প গল্পই। তবে আমার কাছে মনে হয়, ওটিটিতেও পুরুষ চরিত্রের প্রাধান্যই বেশি। কিন্তু নারী যেহেতু সমাজের বড় একটি অংশজুড়ে, ফলে তাদের গল্প নিয়ে অনেক বেশি কাজ করার সুযোগ রয়েছে। সেটি অবশ্য নির্ভর করছে রাইটার, ডিরেক্টর ও প্রোডিউসারের ওপর। তারা কি ধরনের গল্প নিয়ে কাজ করবেন সেটা একান্তই তাদের চয়েস।

 


যে গুটিকয়েক গল্প নারীকে প্রাধান্য দিয়ে হচ্ছে সেটিও কতোটা নারীর মতো হয়ে উঠছে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিনেত্রী বন্যা মির্জা। আপনি কি বলবেন?


সেটা তো বটেই। আনফরচুনেটলি আমাদের দেশে এ পর্যন্ত যতোগুলো নারীপ্রধান কাজ আমরা দেখেছি তার সিংহভাগই একজন পুরুষের লেখা এবং পুরুষের নির্মাণ করা। একজন পুরুষ হয়ে নারীর সাইকোলজি কতোখানি বোঝা সম্ভব আমি ঠিক জানি না। বন্যা আপু ঠিকই বলেছেন যে, পুরুষের চোখেই আমরা এতোকাল নারীকে দেখে এসেছি। পুরুষতান্ত্রিক সোসাইটিতে এটাই ক্রমাগত হয়ে আসছে।

জাকিয়া বারী মম / মেকাপ : শোভন মেকওভার, ছবি : নূর এ আলম

এই পরিস্থিতিতে কি কখনো মনে হয়েছে নিজে কিছু গল্প লিখতে বা পরিচালনা করতে হবে? কারণ আপনার লেখাপড়া নাট্যকলায়, নিয়মিত পড়ার চর্চাও রয়েছে...


একটি গল্প মাথায় ভাবা আর সেটিকে স্ক্রিপ্ট আকারে দাঁড় করানো সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। ফলে আমি ঠিক সিওর না যে উন্নত মানের কিছু লেখার দক্ষতা আমার রয়েছে কি না। এজন্য এতোদিন লেখা হয়নি। তবে কখনো যদি কনফিডেন্স পাই তাহলে হয়ত লিখব।

এ সম্পর্কিত আরও খবর