সুচিত্রা সেনের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী, পাবনায় স্মরণসভা আজ

সিনেমা, বিনোদন

বিনোদন ডেস্ক | 2023-08-28 02:08:55

পাবনার মেয়ে বাংলা চলচ্চিত্রের মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী আজ (১৭ জানুয়ারি)। জেলা প্রশাসন ও সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ যৌথভাবে তার পৈতৃক ভিটা ও পাবনা টাউন গার্লস হাইস্কুল প্রাঙ্গণে (মহাকালী পাঠশালা) স্মরণসভার আয়োজন করেছে।

স্বপ্নসুন্দরীর প্রয়াণ দিবসে পাবনা জেলা প্রশাসন, সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, সুচিত্রা সেন চলচ্চিত্র সংসদ, সপ্তসুর ও নাট্য সংগঠন পাবনা ড্রামা সার্কেলসহ স্থানীয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে থাকছে সুচিত্রা অভিনীত বিভিন্ন ছবির গান নিয়ে সংগীতানুষ্ঠান।

এদিকে সুচিত্রা সেনের পৈতৃক বাড়ি সংস্কার করে জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে নির্মিত সংগ্রহশালাকে আধুনিকায়নের দাবি জানিয়েছেন পাবনার সংস্কৃতিসেবীরা। সম্প্রতি বাড়িটিতে দর্শনার্থীদের দেখার জন্য ভিডিও প্রজেকশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে রয়েছে একটি ভাষ্কর্য।

১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল বাংলাদেশের বৃহত্তর পাবনার সিরাজগঞ্জ মহকুমার ভাঙাবাড়ি গ্রামে নানাবাড়িতে জন্ম নেন দীপ্তিময় এই প্রতিভা। পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনের একতলা পাকা পৈতৃক বাড়িতে সুচিত্রা সেনের শিশুকাল, শৈশব ও কৈশোর কেটেছে। তার বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত পাবনা মিউনিসিপ্যালিটির স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদে চাকরি করতেন। মা ইন্দিরা দাশগুপ্ত ছিলেন গৃহিণী। দুই বোনের মধ্যে সুচিত্রা সেন ছিলেন বড়। তার ছোট বোন হেনা দাশগুপ্ত।

শহরের মহাকালী পাঠশালায় পড়ালেখা শেষ করে সুচিত্রা সেন স্থানীয় পাবনা বালিকা বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছেন। গান, নাটক, অভিনয় পছন্দের ছিল তার। পাবনা শহরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাওয়া ও নাটক থিয়েটারে অভিনয়ে দক্ষতা দেখান তিনি।

১৯৪৭ সালে দেশভাগের ক’মাস আগে সুচিত্রার বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত পাবনার বাড়িঘর, চাকরি সবকিছু রেখে সপরিবারে ভারত পাড়ি জমান। কলকাতায় যাওয়ার বছর দু’য়েক পরেই সেখানকার বনেদি পরিবারের ছেলে দিবানাথ সেনের সঙ্গে রমা দাশগুপ্তের বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামীর পদবীতে রমা দাশগুপ্ত হয়ে যান রমা সেন। দিবানাথ সেনের পূর্ব পুরুষদের বাড়ি ছিল বাংলাদেশের দক্ষিণের এক জেলায়।

পাবনার উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে রমা বনেদি পরিবারের বধূ হয়ে ঘর-সংসারের পাশাপাশি চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। বিয়ের আড়াই বছরের মাথায় ১৯৫২ সালে ‘শেষ কোথায়’ নামের একটি বাংলা ছবিতে তিনি প্রথম অভিনয় করেন সুচিত্রা। কিন্তু এটি মুক্তি পায়নি। ১৯৫৩ সালে নায়িকা হিসেবে তার প্রথম ছবি ‘সাত নম্বর কয়েদি’ মুক্তি পায়। এর পরিচালক ছিলেন সুকুমার দাশগুপ্ত। তারই সহকারী পরিচালক নীতিশ রায় রমা নাম বদলে রাখেন ‘সুচিত্রা সেন’।

১৯৫৩ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত টানা অভিনয় করেন সুচিত্রা সেন। স্বামীর প্রবল আপত্তি থাকলেও মনের তাগিদে নিজেকে অভিনয়ে জড়িয়ে রাখেন তিনি। ৫৬টি বাংলা ও হিন্দি ৭টি মিলিয়ে ৬৩টি ছবিতে নায়িকা হন এই স্বপ্নসুন্দরী। উত্তম কুমারের সঙ্গে জুটি হয়ে ব্যাপক আলোড়ন তোলেন তিনি।

১৯৬৩ সালে ‘সাত পাকে বাঁধা’ চলচ্চিত্রের জন্য মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা অভিনেত্রী পুরস্কার জেতেন সুচিত্রা সেন। তিনিই প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী যিনি কোনও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছিলেন। ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করে। ২০০৫ সালে তাকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার দেওয়ার প্রস্তার রাখলে তিনি জনসমক্ষে আসতে চাননি বলে তা গ্রহণ করেননি।

প্রায় তিন যুগ লোকচক্ষুর আড়ালে ছিলেন কিংবদন্তি এই অভিনেত্রী। কলকাতার বালিগঞ্জে স্বেচ্ছা নির্বাসন বেছে নেন তিনি। অনেকদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি ৮২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন মহানায়িকা সুচিত্রা সেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর