৮৫ বছরের একজন মানুষের জন্য কী আকাক্সক্ষা সবার! হবেই বা না কেন? সর্বকালের সেরা চলচ্চিত্র পরিচালকদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা অন্যতম। তিনি ‘গডফাদার’ ট্রিলজির কিংবদন্তি পরিচালক। তাকে নিয়ে আগ্রহ না থাকাটাই যেন অস্বাভাবিক!
কান চলচ্চিত্র উৎসবের প্রাণকেন্দ্র পালে দে ফেস্টিভ্যাল ভবনের গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরের সামনের সড়ক বিভাজক ঢেকে গিয়েছিল জনস্রোতে। তরুণ-তরুণী, বুড়ো-বুড়ি সবার দৃষ্টি তার দিকে। লালগালিচায় হেঁটে লুমিয়েরের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে এক হাতে টুপি নেড়ে সবার অভিবাদনে সাড়া দেন তিনি। তার অন্য হাতে ছড়ি। তাকে একনজর দেখতে দোতলার প্রেস রুমের ব্যালকনির এক কোণে লেগে গেলো জটলা। প্রেস রুমের বাইরে লবিতে গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরের একপাশের দরজায় মোবাইল ফোন তাক করে রেখেছেন অনেকে। তিনি সুবিশাল লুমিয়েরে ঢোকার পর টানা ৪ মিনিট মুহূর্মুহু করতালিতে সম্মান জানানো হয়।
১৯৭৪ সালে ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলার ‘অ্যাপোক্যালিপস নাউ’ ছবিটি কানে স্বর্ণপাম জয় করেছিল। ৫০ বছর আগের সেই জয় নিয়ে সে সময় বিতর্কও ছিল, কারণ উৎসবটিতে প্রদর্শনের সময় ছবিটির কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি! ১৯৭৯ সালে কাপলো পরিচালিত ‘দ্য কনভারসেশন’ ছবিটিও স্বর্ণপাম জিতেছে। ১৯৯৬ সালে মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে বিচারকদের প্রধান ছিলেন তিনি।
কানে ৪৫ বছর পর ‘মেগালোপলিস’ নিয়ে উৎসবের মূল প্রতিযোগিতায় ফিরলেন ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা। গতকাল (১৬ মে) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় এর ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয়েছে। কল্পবিজ্ঞানধর্মী বড় ক্যানভাসের ছবি ‘মেগালোপোলিস’ নিজের ওয়াইন বিক্রি থেকে প্রাপ্ত ১২ কোটি ডলার খরচ করে কয়েক দশক সময় নিয়ে বানিয়েছেন তিনি। এর মাধ্যমে ১৩ বছর পর তার নতুন ছবি এলো।
২ ঘণ্টা ২০ মিনিটের ছবিটির প্রদর্শনী শেষ হতেই টানা ৭ মিনিট দাঁড়িয়ে করতালিতে অভিবাদন জানিয়েছেন দর্শক ও অতিথিরা। তখন অভিনেতা অ্যাডাম ড্রাইভার ও জিয়ানকার্লো এসপোসিতোকে জড়িয়ে ধরেন ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা। আবেগপ্রবণ কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আপনাদের সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমার কেমন লাগছে তা বলে বোঝানো যাবে না।’
এরপর দর্শক সারিতে থাকা নিজের পরিবারের সদস্যদের পরিচয় করিয়ে দেন ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা। তবে তিনি বলেন, ‘তারাই একমাত্র নয়, ছবিটির অসাধারণ অভিনেতা-অভিনেত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই আমার পরিবার। যেমন স্থপতি চেজার কাতিলিনা (মেগালোপোলিস ছবির প্রধান চরিত্র) বলেছেন, আমরা সবাই এক পরিবার। তোমরা সবাই আমার কাজিন। আমরা এক। আমরা মানব পরিবার। আমাদের পুরো পরিবার, দিনের শেষে এই সুন্দর বাড়ি ও পৃথিবীর প্রতি আমাদের সবারই আনুগত্য থাকা দরকার। এটাই আমার চাওয়া। শিশুরাই আমাদের কাছ থেকে এমন সুন্দর পৃথিবীর উত্তরাধিকারী হতে চলেছে। সুন্দর পৃথিবীতে যেকোনো ভাষায় আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শব্দ হলো ‘এসপারেনচা’। অর্থাৎ আশা। এটাই আমি উৎসর্গ করছি।’
এবারের মূল প্রতিযোগিতায় রয়েছে ২২টি চলচ্চিত্র। এরমধ্যে পল শ্রেডারের ‘ও কানাডা’র অভিনেতা রিচার্ড গেয়ার ‘মেগালোপলিস’-এর প্রিমিয়ার দেখেছেন। অস্কারজয়ী ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলার সামনের সারিতে বসেন তিনি। নির্মাতার গালে চুম্বনের পর তাকে অভিনন্দন জানান এই তারকা।
‘মেগালোপলিস’-এর গল্পে দেখা যায়, একটি দুর্ঘটনায় নিউ ইয়র্ক সিটি ধ্বংস হওয়ার পর টেকসই ইউটোপিয়া হিসেবে শহর পুনর্র্নিমাণের জন্য কাজ শুরু করে চেজার। কিন্তু তাকে চ্যালেঞ্জ করে দুর্নীতিগ্রস্ত মেয়র ফ্র্যাঙ্কলিন সিসেরো। তার মেয়ে জুলিয়াকে ভালোবেসে ফেলে চেজার। মেয়েটি তাকে লক্ষ্য পূরণে সহায়তা করে যায়।